কুমিল্লার দাউদকান্দিতে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। গতকাল সোমবার(১৬ মে) বিকেলে উপজেলার ডাকবাংলোর সামনে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় মানবজমিন পত্রিকার প্রতিনিধি মোক্তার হোসেন এবং জাগো পত্রিকার প্রতিনিধি ইমন আহত হন।
জানা গেছে, সাংবাদিক মোক্তার হোসেন পেশাগত কাজে উপজেলা পরিষদ থেকে দাউদকান্দি মডেল থানার দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় পাঁচ থেকে সাতজন কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসী তার গতিরোধ করে। একপর্যায়ে ‘তুই বেশি বেড়ে গেছিস’ গালমন্দ করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠি দিয়ে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। ওই সাংবাদিকের চিৎকার-চেঁচামেচিতে স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, তারা উপজেলা থেকে বের হয়ে ডাকবাংলোর সামনে গেলে মুখোশধারী তিন-চারজন দুর্বৃত্ত তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য স্থানীয় এ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে মারাত্মক আহত মোক্তার হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গৌরীপুর সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। স্থানীয় সাংবাদিকরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামলায় জড়িত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
আহত জাহিদ আলম ইমন বলেন, উপজেলার একটি হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে মোক্তার ভাই ও আমি হেঁটে বিশ্বরোডের দিকে রওনা দেই। বিয়াম স্কুলের সামনে যাওয়ার পর অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে তিনি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান।’
এ সময় পাঁচ থেকে সাতজন কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসী তার গতিরোধ করে। একপর্যায়ে ‘তুই বেশি বেড়ে গেছিস’ গালমন্দ করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠি দিয়ে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে।
জাহিদ আলম বলেন, ‘পরে পথচারীদের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বলদাখাল অ্যাপোলো প্লাস হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গৌরীপুরে পাঠায়।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আহত সাংবাদিক মোক্তার হোসেনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকায় পাঠানো হবে।
কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ ইকবাল বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে খুব দ্রুত হামলাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সাংবাদিক মোক্তার হোসেনের ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার যথাযথ বিচার দাবি জানাই।’
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের সংবিধানে বাকস্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ডিজিটাল অ্যাক্টসহ যেসব আইন হয়েছে, সেগুলো রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে যে বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অর্জন করেছি, তার সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে বিপরীতমুখী ও সাংঘর্ষিক। এগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতার পথকে সংকুচিত করেছে।’
তারা বলেন, সারা বিশ্ব দেখছে, এই দেশটি সাংবাদিক নিপীড়নকারী দেশ এবং গণমাধ্যমের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে এমন একটি দেশ। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা চাই, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রাষ্ট্রের জন্য, সরকারের জন্য এবং সুশাসনের জন্য দরকার।’
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মফস্বলের প্রত্যেকটা সাংবাদিক পরিচিত। সবাই সবাইকে চেনে। ওখানে কোন সংবাদ হলে তাকে টার্গেট করা সহজ। ঢাকায় সেটা সম্ভব না। মফস্বলের সাংবাদিক প্রতি মুহুর্তে, প্রতিদিনই ঝুঁকির মধ্যে থাকে।মফস্বল সাংবাদিকদের কোনো ধরনেরই নিরাপত্তা নেই৷ আর্থিক বা শারীরিক কেনোটাই না৷ অধিকাংশ সাংবাদিক বেতন পান না আবার প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও দুর্বৃত্তদের চাপের মুখে থাকতে হয়। শীঘ্রই পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হবে—এমন আশাও করেছন না বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪১৫
আপনার মতামত জানানঃ