চাঁদে পানি রয়েছে এই তথ্য নিশ্চিত। ২০০৮-এ ভারতের চন্দ্রযান মিশন প্রথম জানায় চাঁদে পানির উপস্থিতির কথা। এমনকি চাঁদের মাটিতে যে পানি আছে তা ‘সুস্পষ্টভাবে’ নিশ্চিত করেছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা।
নাসা নিশ্চিত করেছে যে পৃথিবী থেকে আমরা চাঁদের যে দিকটা দেখতে পাই, তার উপরিতলে (সারফেস) পানি অণুর অস্তিত্ব আছে। কোন একদিন চাঁদের মাটিতে একটি ঘাঁটি তৈরির যে আশা তাদের আছে, তাকে অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে এই আবিষ্কার।
তবে এই নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছিল, কিন্তু চাঁদে পানি কোথা থেকে এসেছে তা জানা যায়নি৷ অর্থাৎ পানির উৎস কী তা জানা যায়নি।
কিন্তু নতুন এক গবেষণায় এর উত্তর পাওয়া গিয়েছে। জানা যাচ্ছে চাঁদে যে পানি রয়েছে তা এসেছে পৃথিবী থেকেই। শুধু তাই নয়, এই গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে যে পৃথিবী থেকে চাঁদে এখনও পানি যাচ্ছে।
নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের ফেলো কেসি হনিবল বলছেন, তাদের উপাত্ত থেকে দেখা যায়, এক ঘনমিটার চাঁদের মাটিতে প্রায় ১২ আউন্সের একটি বোতলের সমান পানি আছে। তুলনা হিসেবে বলা যায়, পৃথিবীতে সাহারা মরুভূমির মাটিতে যতটুকু পানি আছে তার পরিমাণও চাঁদের মাটিতে থাকা পানির ১০০ গুণ।
তাই বলা যায়, চাঁদের মাটিতে পানির পরিমাণ খুবই কম। কিন্তু তা সত্ত্বেও এটি নতুন কিছু প্রশ্ন তুলছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। সবথেকে বড় যে প্রশ্ন তা হলো, চাঁদে যে পানি রয়েছে, তার মূল উৎস কী, সেটা জানতে আলাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুন্টার কোচেসকার নেতৃত্বে এই গবেষণাটি হচ্ছে৷ চাঁদের উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে পানির চিহ্ন মিলেছে বলে জানা গেছে।
চাঁদে যে পানি রয়েছে, তার মূল উৎস কী, সেটা জানতে আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস জিওফিজিক্যাল ইনস্টিটিউট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে এই গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে যে চাঁদের পানি পৃথিবীর উচ্চ বায়ুমণ্ডল থেকে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন আয়ন নিয়ে চাঁদে পৌঁছায়।
চাঁদে পানির আবিষ্কার, মহাকাশ গবেষকদের কাছে অত্যন্ত উৎসাহজনক তথ্য বলে বিবেচিত৷ আমেরিকা, ইউরোপ ও চিন তাদের যাত্রীদের চাঁদে পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে বহু বছর ধরে। চাঁদের পানির প্রমাণ, নভশ্চরদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য৷
বহু দেশ মঙ্গল মিশনের জন্য চাঁদে ঘাঁটি তৈরি করতে চায়। নাসার আর্টেমিস মিশন চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে তাদের বেস ক্যাম্পও তৈরি করবে বলে জানা গিয়েছে। কোচস্কা উল্লেখ করেছেন যে বহু বছর আগে পৃথিবীতে উদ্ভূত পানির আয়নগুলি এখন চাঁদে উপস্থিত থাকায়, চাঁদে অভিযানকারীদের সুবিধা হতে পারে৷
নতুন গবেষণায়, এটি অনুমান করা হয়েছে যে চাঁদের কাছে ৩৫০০ কিউবিক কিলোমিটার পানি পৃষ্ঠের উপর বরফ আকারে বা পৃষ্ঠের নীচে পানির আকারে উপস্থিত রয়েছে। যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে আসা আয়ন দিয়ে তৈরি। এই গবেষণার কিছু তথ্য নিয়ে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে মনে করা হচ্ছে যে, পানি রয়েছে এমন সব জায়গা ভবিষ্যতে গবেষণার কাজ বা সাময়িক থাকার ব্যবস্থার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে৷ এর উপর আরও অনুসন্ধানের সুযোগও থাকছে৷
এই গবেষণার কিছু তথ্য নিয়ে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে মনে করা হচ্ছে যে, পানি রয়েছে এমন সব জায়গা ভবিষ্যতে গবেষণার কাজ বা সাময়িক থাকার ব্যবস্থার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে৷ এর উপর আরও অনুসন্ধানের সুযোগও থাকছে৷
নাসা এবং ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার গবেষণায় ইতিমধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে যে ম্যাগনেটোস্ফেয়ার এই অংশের মধ্য দিয়ে চাঁদের উত্তরণের সময় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পানিে আয়ন উপস্থিত থাকে। চাঁদের ম্যাগনেটোস্ফিয়ারের এই উপস্থিতিকে ম্যাগনেটোটেল বলা হয়।
এটি কিছু সময়ের জন্য পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র রেখাকে প্রভাবিত করে। চাঁদ যখন এই জায়গায় অবস্থান করে, তখন এই ভাঙা ফিল্ড লাইনগুলি যুক্ত হয় এবং এমন পরিস্থিতিতে হাইড্রোজেন অক্সিজেন আয়নগুলি পৃথিবীতে ফিরে আসতে শুরু করে৷ তখন চাঁদের সাথে সংঘর্ষে তাপমাত্রা কমে পানি জমতে শুরু করে।
কোচস্কা বলেছেন যে এটি চাঁদে এক ধরণের বৃষ্টি। এই বৃষ্টির পানির আয়নগুলি পৃথিবীতে ফিরে আসে এবং আসার পথে চাঁদের পৃষ্ঠে পড়ে। চাঁদের পৃষ্ঠে জমে থাকা পানি বা বরফে পরিণত এলাকা নিয়ে আরও গবেষণা হচ্ছে৷ এই পানি, জীবনে যাপনে সাহায্য করতে পারে কি না, সেটা নিয়েই ভবিষ্যৎ গবেষণা হবে৷
এসডব্লিউ/এসএস/১৫২০
আপনার মতামত জানানঃ