বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ নিম্নমুখী হলেও পাশের দেশসহ এশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সুপারিশ করা হয়েছে। সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রচার প্রচারণা বাড়াতেও সুপারিশ করা হয়েছে।
যেসব দেশে সংক্রমণের হার বেশি সেসব দেশ থেকে বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন নেয়া থাকলেও কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখার সুপারিশ করা হয়েছে। এজন্য সব বন্দরের প্রবেশ পথে স্ক্রিনিং জোরদার করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ইউরােপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের উর্ধ্বগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জনসাধারণ সতর্ক না থাকলে দেশে সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে কোভিড-১৯-এর জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটি (এনটিএসি)।
কমিটির সদস্যরা রোববার (২৪ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত এনটিএসি-এর ৫৭তম সভায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সকল ক্ষেত্রে শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের সুপারিশ করা হয় ।
যে সকল দেশে সংক্রমণের হার বেশি সে সকল দেশ থেকে বাংলাদেশে আগমণের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন প্রদান করা থাকলেও কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিশ্চিত করা এব সকল বন্দরে জনগণের প্রবেশ পথে স্ক্রিনিং জোরদারকরণের পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।
কোভিড-১৯ মােকাবেলায় হাসপাতাল সমূহকে সতর্ক করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় হাসপাতাল সমূহের সাথে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সভা আয়ােজন করে এই বিষয়ক প্রয়ােজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
কোভিড নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আয়ােজন করে সকলকে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সতর্কাবস্থানে থাকার সুপারিশ করা হয়।
এছাড়া, সভায় জিনােম সিকোয়েন্সিং ও সার্ভেলিয়েন্স জোরদার করার সুপারিশ করেন কমিটির সদস্যরা।
দেশে গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে করোনায় কারও মৃত্যু হয়নি। করোনায় আগের তিন দিনও ছিল মৃত্যুশূন্য।
বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি
সংক্রমণের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ১৯ লাখ ৫২ হাজার ৫৫৬ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৪৬০ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ১২৭ জনের।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও শনাক্ত আরও কমেছে। ২৪ ঘণ্টায় করোনায় প্রাণহানি হয়েছে ৯৭৭ জনের। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ লাখ ৪৩ হাজার ১৯৯ জনে। নতুন করে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৫৮ জন।
মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ কোটি ৯৫ লাখ ৪২ হাজার ৭৩৭ জনে।
এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১ হাজার ৫২৪ জন। একই সময় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৬৯৪ জন।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, করোনায় একদিনে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে রাশিয়ায়, ১৬৮ জনের। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো তিন লাখ ৭৪ হাজার ৯০২ জনে। ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়ায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৪৪৬ জনের। এ নিয়ে শনাক্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮১ লাখ ৩৭ হাজার ১৩৭ জনে।
বিশ্বে একদিনে সবচেয়ে বেশি করোনা শনাক্ত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। আক্রান্তের তালিকায় আট নম্বরে থাকা দেশটিতে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৬৪ হাজার ৭২৫ জন এবং মারা গেছেন ১০৯ জন। দেশটিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ হাজার ১৩৩ জন।
করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১০ লাখ ১৮ হাজার ৩৩৫ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৯ জন। এ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ কোটি ২৬ লাখ ৬২ হাজার ৭৪৮ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৮ কোটি ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৩৫১ জন।
আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৫ লাখ ২২ হাজার ১৯৩ জন। দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪ কোটি ৩০ লাখ ৫৯ হাজার ৮২১ জনের। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়েছেন ২ হাজার ২৭৬ জন।
আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় ও মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৩৮ জন। দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৮০৯ জন। মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৩ জন। মারা গেছেন ৬ লাখ ৬২ হাজার ৭০১ জন।
এছাড়াও সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ফ্রান্সে ৪০ জন, জার্মানিতে ২২ জন, ইতালিতে ৭৯ জন, তুরস্কে ১৫ জন, জাপানে ২৭ জন, ইরানে ১৩ জন, ইন্দোনেশিয়ায় ৩৩ জন এবং থাইল্যান্ডে ১২৬ জন মারা গেছেন।
তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৪২ নম্বরে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১৯ লাখ ৫২ হাজার ৫৫৬ জন। মারা গেছেন ২৯ হাজার ১২৭ জন। ২৪ ঘণ্টায় কারও মৃত্যু না হলেও করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৪ জনের। আর করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৪৬০ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশের হুবেই শহরে প্রথম করোনার অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। কয়েক মাসের মধ্যেই ভাইরাসটি বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে পড়ে। গত বছরের ১১ মার্চ করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮১০
আপনার মতামত জানানঃ