চলতি বছরের পবিত্র রমজান মাসেও ইসরায়েল–অধিকৃত ফিলিস্তিনের মাটিতে বড় ধরনের উত্তেজনা দেখা দিচ্ছে। ইসরায়েলের অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে দেশটির পুলিশ ও ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এদিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আবারও বিমান হামলা চালিয়েছে তারা। আর এই হামলার কারণ হিসেবে গতবারের মতোই ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে আগে রকেট হামলার অভিযোগ তুলেছে দখলদার বাহিনী।
মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এএফপির বরাতে দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, সোমবার(১৮ এপ্রিল) রাতে গাজা উপত্যকা থেকে হামাস রকেট নিক্ষেপ করলে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে সতর্ক সাইরেন শোনা যায়। গত জানুয়ারির পর এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম। নিক্ষিপ্ত রকেটটি তেল আবিবের কাছাকাছি সাগরে গিয়ে পড়ে বলে দাবি করা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে একটি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছিল। সেটি আয়রন ডোম আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাহায্যে আটকে দেওয়া হয়েছে।
এর কয়েক ঘণ্টা পরেই গাজায় কথিত ‘হামাসের অস্ত্র কারখানায়’ হামলা চালানো হয় বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
গাজার নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে এএফপি জানিয়েছে, ‘বিমান-বিরোধী প্রতিরক্ষা’ ব্যবস্থা ব্যবহার করে ইসরায়েলি হামলা ঠেকিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে হামাস। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি বলে জানিয়েছে তারা।
তবে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে কথিত রকেট হামলার দায় স্বীকার করেনি কেউ। অবশ্য ইসরায়েলি বাহিনী এ ধরনের ঘটনায় বরাবরই ফিলিস্তিনি প্রতিরোধী গোষ্ঠী হামাসকে দায়ী করে আসছে।
গত বছর রমজান মাসে ফিলিস্তিনে নির্বিচারে বিমান হামলা চালিয়েছিল দখলদার ইসরায়েল, যাতে প্রাণ হারান কয়েকশ নিরীহ ফিলিস্তিনি। এ বছরও শুরু হয়েছে সেই একই ঘটনা।
আল জাজিরার এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, পবিত্র রমজান মাস এলে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে ইসরায়েল। চলতি বছরের পবিত্র রমজান মাসেও ইসরায়েল অধিকৃত ফিলিস্তিনের মাটিতে বড় ধরনের উত্তেজনা দেখা দিচ্ছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর পরিপ্রক্ষিতে গাজা উপত্যকার বাসিন্দারা গত বছরের রমজানের মতোই আরেকটি যুদ্ধ লেগে যেতে পারে।
জেরুজালেমভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাজেন জাবারি আল-জাজিরাকে বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে তা বড় ধরনের বিস্ফোরণের জন্য উপযুক্ত।
গত বছর রমজান মাসে ফিলিস্তিনে নির্বিচারে বিমান হামলা চালিয়েছিল দখলদার ইসরায়েল, যাতে প্রাণ হারান কয়েকশ নিরীহ ফিলিস্তিনি। এ বছরও শুরু হয়েছে সেই একই ঘটনা।
গত বছর জেরুজালেমে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করাকে কেন্দ্র করে জনক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। ফিলিস্তিনিদের ওই প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছিল ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনজুড়ে।
এ বছরের মতো ঠিক গতবারও আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর প্রবেশ ও অভিযান আগে থেকেই চলে আসা দুই পক্ষের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। ওই অভিযানের চার দিন পর গাজায় টানা ১১ দিন স্থল ও বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলায় কয়েক শ মানুষ হতাহত হন। নিহত ব্যক্তিদের একটা বড় অংশ ছিল শিশু। হামলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল গাজার বাড়িঘরসহ বহু স্থাপনা। বাদ পড়েনি হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ ঘটনা নিয়ে ইসরায়েল বলেছিল, হামাসের রকেট ছোড়ার প্রতিক্রিয়ায় তারা গাজায় অভিযান চালিয়েছে মাত্র।
গত রমজানের সংঘর্ষের পর সংঘটিত বেশ কিছু ঘটনা এবার ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনের আরেকটি লড়াইয়ের আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। মাজেন জাবারি বলেন, এবারের সংঘর্ষ শুধু যে জেরুজালেমের দিক থেকে শুরু হতে পারে তা নয়, বিভিন্ন দিক থেকেই শুরু হতে পারে। যেমন জেনিনে (পশ্চিম তীরের শহর) বিস্তর সংঘর্ষ হতে পারে। কারণ ইসরায়েল ওই শহরে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। সেখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযানে নামার কথা বলতে পারে তারা।
এদিকে গাজার শাসনক্ষমতায় থাকা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেন, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে আবার লড়াইয়ের আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, যদি ইসরায়েলি অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা আল-আকসা মসজিদ নিয়ে তাদের অসহিষ্ণু আচরণ দেখিয়ে যেতে থাকেন, তবে হামাস বসে থাকবে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৪৭
আপনার মতামত জানানঃ