বাংলাদেশে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমছে। গত কয়েক বছরে শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, ছিনতাই, ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, মিথ্যা মামলায় সাধারণ মানুষকে ফাঁসিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
দুই বন্ধু নতুন মোটরসাইকেল নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) বেড়াতে গিয়েছিলেন গাজীপুর মহানগরের মোল্লাপাড়া এলাকায়। রাত ৯টার দিকে সেখান থেকে ফেরার পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোড় এলাকার উড়াল সড়কের পাশে বাসন থানার তিন পুলিশ সদস্য তাদের গতিরোধ করেন। পরে মামলার ভয় দেখিয়ে ১২ হাজার ৮০০ টাকা নেয়ার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় ওই তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তিন পুলিশ সদস্য হলেন- গাজীপুর মহানগরের বাসন থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শাহাদত হোসেন, কনস্টেবল মো. মিন্টু ও মো. নোমান।
গাজীপুর মেট্রোপলিটনের উপ কমিশনার (অপরাধ) জাকির হাসান বলেন, গাজীপুরের বাসন থানার এএসআই শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার রাতে দুই যুবককে আটক করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠায় শনিবার দুপুরে তাকে বাসন থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনাটি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভুক্তভোগীরা জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়নের নস্করচালা গ্রামের মনির হোসেন ও আলফাজ হোসেন একটি নতুন মোটরসাইকেল নিয়ে গাজীপুরের মোল্লাপাড়া এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে যান। বেড়ানো শেষে তারা বাড়ি ফিরছিলেন। ফেরার পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোড় এলাকায় উড়ালসড়কের পাশে পৌঁছালে বাসন থাকার সহকারী উপপরিদর্শক শাহদত হোসেন, কনস্টেবল নোমান ও মিন্টু তাদের গতিরোধ করেন। পরে তারা মোটরসাইলের কাগজপত্র যাচাইয়ের নামে তাদের দেহ তল্লাশিসহ নানাভাবে হয়রানি ও মামলা দিয়ে গ্রেপ্তারের ভয়ভীতি দেখান।
দুই কনস্টেবল তাদের পকেট তল্লাশি করে দুই জনের কাছ থেকে ৬ হাজার ৮০০ টাকা নিয়ে নেন এবং তাদের বাড়িতে খবর দিয়ে আরো টাকা আনতে বলেন। ছেলেদের আটক করার খবর পেয়ে রাতেই মনির ও আলফাজের বাবা সেখানে ছুটে যান। পরে আরো ৬ হাজার টাকা দিলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মালেক খসরু জানান, অভিযুক্ত ওই তিন পুলিশ সদস্যকে সিসি দিয়ে মেট্টোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
সম্প্রতি দেশে কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এসব অপরাধ ও অপকর্মের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্বে অবহেলা ও ঘুষ গ্রহণ ছাড়াও চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, এমনকি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার মতো ঘৃণ্য অপরাধও আছে।
দেশে কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ফেনীতে মামলার ভয় দেখিয়ে কিশোরকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার(১৪ এপ্রিল) গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে।
গ্রেপ্তার হওয়া পুলিশ কনস্টেবলের নাম মো. ইউনুস (৩০)। তিনি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার বাসিন্দা ও মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) গাড়ির চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এদিকে ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ কর্মকর্তার (এসআই) বিরুদ্ধে। তবে পুলিশ কর্মকর্তাকে কুপিয়ে নিজের সম্ভ্রম রক্ষা করেছেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া এক শিশুর মরদেহ দাফনে বাধা দিয়ে ‘চাঁদা’ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। চাতলপাড় তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (আইসি) কাঞ্চন কুমার সিংহের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (০৭ এপ্রিল) উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
এর আগে ভলাকুট ইউনিয়নের কান্দি গ্রামেও এমন আরো একটি অভিযোগ রয়েছে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুলিশের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে এটা বলবো না৷ বলা উচিত এই প্রবণতা আগেও ছিল, এখনো আছে৷ আগে সেভাবে গণমাধ্যমে আসত না, এখন আসছে৷ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও আগে সেভাবে খেয়াল রাখত না, এখন রাখছে৷ ফলে বিষয়টি সামনে চলে এসেছে৷
তারা মনে করেন, পুলিশের মধ্যে কোন পরিবর্তন হয়নি৷ তাদের কিছু বিভাগ বেড়েছে সত্যি, কিন্তু সেই ব্রিটিশ নিয়মেই তারা চলে৷ আর এই সংস্কারটা হচ্ছে না এর কারণ পুলিশকে অনেক বেশি রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হয়৷ পুলিশের মধ্যে এমন কোন ক্যারিশমেটিক নেতা আসেনি যে তারা নিজের উদ্যোগেই সংস্কার করবে৷ আর আমাদের অর্থনীতি যেভাবে বেড়েছে তাতে পুলিশের মধ্যে এই দিকে ধাবিত হওয়ার প্রবণতা রয়েছে৷ অনেকেই অল্প দিনে ধনী হতে চান ফলে তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন৷
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার হার আশংকাজনক। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে বিভিন্ন অপকর্মের। এবিষয়ে পুলিশের কর্তৃপক্ষসহ দেশের সরকাকেও নজর বাড়াতে হবে। কেননা, আইন রক্ষাকারী কর্তৃক একেরপর এক আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডে দেশের আইনের প্রতি মানুষের অনাস্থা জন্মাবে। ফলে দেশে দেখা দিবে বিশৃঙ্খলা।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনের খড়্গ চালানোর আগে পুলিশের ওপর চালানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, আগে পুলিশকে অপরাধমুক্তের চরিত্র অর্জন করতে হবে। নইলে সন্ত্রাসীদের নিকট পুলিশের যে ভাবমূর্তি সৃষ্টি হচ্ছে, এতে পুলিশ আর সন্তাসীদের মধ্যকার তফাৎ ঘুচে যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬১৮
আপনার মতামত জানানঃ