সম্প্রতি দেশে কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এসব অপরাধ ও অপকর্মের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্বে অবহেলা ও ঘুষ গ্রহণ ছাড়াও চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, এমনকি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার মতো ঘৃণ্য অপরাধও আছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ফেনীতে মামলার ভয় দেখিয়ে কিশোরকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার(১৪ এপ্রিল) গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে।
গ্রেপ্তার হওয়া পুলিশ কনস্টেবলের নাম মো. ইউনুস (৩০)। তিনি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার বাসিন্দা ও মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) গাড়ির চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কিশোরের মা বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় ওই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোর শহরের একটি দোকানে চাকরি করত। গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়িতে যাওয়ার সময় মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে পৌঁছালে পুলিশ সদস্য ইউনুস তার গতি রোধ করেন। তিনি অবৈধ মালামাল থাকার অভিযোগে ওই কিশোরকে আটক করেন। পরে তিনি তাকে থানায় না নিয়ে একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যান। সেখানে তিনি ওই কিশোরকে নানা ধরনের ভয়-ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। এরপরও তিনি তাকে একাধিক দিন ধর্ষণ করেন।
একপর্যায়ে তাকে একটি মুঠোফোন সেট উপহার দেন পুলিশ সদস্য ইউনুস। এরপর সেটি হারিয়ে গেছে মর্মে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পুলিশ ওই মুঠোফোন সেটটি উদ্ধার করলে ওই কিশোরের মা ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারেন এবং এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেনী সদর মডেল থানায় একটি মামলা করেন।
মামলার পর পুলিশ সদস্য ইউনুসকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। রাতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
প্রথমে মামলার ভয় দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর সেই ধর্ষণের ভিডিও ইমোতে পাঠায় এবং ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে তাকে গত কয়েক মাস ধরে ধর্ষণ করে আসছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
ওই কিশোরের পরিবারের লোকজন জানায়, ফেনী মডেল থানার সামনের একটি নির্জন স্থানে নিজের বিকৃত যৌনাচারের নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নেন ওই থানার পুলিশ সদস্য ইউনুস আলী। এখানে ধারণ করা ধর্ষণের ভিডিও ভাইরালের ভয় দেখিয়ে কিশোরকে রাতে যখন-তখন এখানে আসতে বাধ্য করা হতো। প্রায় রাতে চালানো হতো যৌন নির্যাতন।
নির্যাতিত তরুণ বলেন, প্রথমে মামলার ভয় দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর সেই ধর্ষণের ভিডিও ইমোতে পাঠায় এবং ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে তাকে গত কয়েক মাস ধরে ধর্ষণ করে আসছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। উপায়ন্তর না দেখে শেষ পর্যন্ত মামলা করতে হলো।
তিনি জানান, গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ফেনীর শহরের মহিপালে দেহ তল্লাশির নামে ওই কিশোরকে আটক করেন ইউনুস আলী। একপর্যায়ে তাকে নিয়ে যান পাশ্ববর্তী একটি হোটেলে। সেখানে মামলার ভয় দেখিয়ে প্রথম দফা ধর্ষণ করেন ইউনুস আলি। ওই ঘটনা তার মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করেন। পরে সেই ভিডিও ভাইরালের ভয় দেখিয়ে ওই কিশোরকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন ইউনুস আলি। একইভাবে ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে নগদ টাকাও হাতিয়ে নেন ইউনুস আলী। একপর্যায় বিকৃত রুচির ইউনুস আলি তার কিছু সহযোগীদেরও এ কিশোরের পেছনে লেলিয়ে দিয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য করতে চাপ দেন। এরপর উপায় না দেখে মামলা করেন ওই তরুণ।
তিনি আরও জানান, একসময় ওই কিশোর নিজেকে রক্ষা করতে কৌশলে ইউনুস আলির মোবাইল ফোনটি নিয়ে গিয়ে সব ভিডিও মুছে ফেলেন। পরে ইউনুস আলিকে দেওয়া টাকা আদায় করতে মোবাইলটি অন্যত্র বিক্রি করে দেন। এ ঘটনার পর চুরির অভিযোগে মোবাইল উদ্ধারে পুলিশ মাঠে নামলে ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নিজাম উদ্দিন ইউনুসকে গ্রেপ্তার ও আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানোর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ কনস্টেবল ইউনুসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার হার আশংকাজনক। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে বিভিন্ন অপকর্মের। এবিষয়ে পুলিশের কর্তৃপক্ষসহ দেশের সরকাকেও নজর বাড়াতে হবে। কেননা, আইন রক্ষাকারী কর্তৃক একেরপর এক আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডে দেশের আইনের প্রতি মানুষের অনাস্থা জন্মাবে। ফলশ্রুতিতে দেশে দেখা দিবে বিশৃঙ্খলা।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনের খড়্গ চালানোর আগে পুলিশের ওপর চালানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, আগে পুলিশকে অপরাধমুক্তের চরিত্র অর্জন করতে হবে। নইলে সন্ত্রাসীদের নিকট পুলিশের যে ভাবমূর্তি সৃষ্টি হচ্ছে, এতে পুলিশ আর সন্তাসীদের মধ্যকার তফাৎ ঘুচে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরদারির দুর্বলতাতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তবে শুধু নজরদারি বাড়ানো নয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারলে অনেকাংশে কমানো সম্ভব পুলিশ সদস্যদের অপরাধ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪২৩
আপনার মতামত জানানঃ