সংসদ সচিবালয়ে নারী নির্যাতন। এখন প্রশ্ন, বাংলাদেশের নারীরা কোথায় নিরাপদ? ঘরে-বাইরে, পরিবারে, লোকালয়ে, সমাজে, কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা এখন বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন। এই নিরাপত্তাহীনতার অবসান কিভাবে ঘটবে, এ প্রশ্নের জবাব কেউ জানে না।
২০২১ সালে সারা দেশে শুধু নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা আনুমানিক ১৯ হাজার। প্রকৃত সংখ্যা এর দ্বিগুণ হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
জনসংখ্যার অর্ধেক যেখানে নারী, সেখানে এ প্রশ্নের উত্থাপন একটি কঠিন বাস্তবতার জন্ম দেয়- নারী কি আসলেই মানুষ হিসেবে বিবেচিত; না পুরুষের প্রদত্ত ফতোয়া’র অধীনে।
বাংলাদেশের সমাজে পুরুষরাও বিভিন্ন কারণে নির্যাতিত হয়। অনেক নিয়ন্ত্রণই তাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু নারীর ওপর বাড়তি নিয়ন্ত্রণ হিসেবে চেপে বসে পুরুষের নিয়ন্ত্রণ বা কর্তৃত্বপরায়ণতা।
রাজনৈতিক স্লোগানে বাংলাদেশের নারীর জীবন অনেকাংশে নিশ্চিত হলেও বাস্তব চিত্রটি পুরোপুরি আলাদা। এখানে ভিন্নমতের প্রতীকে ভোট দেয়ার কারণে নারী গণধর্ষিত হয়, সামান্য কারণে শিকার হয় হিংসার।
সাম্প্রতিক নারী সহকর্মীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। একাধিকবার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এমন অভিযোগে ওই নারী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও পরে সংসদ সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
সংসদ সচিবালয়ের কমিটি শাখা-৬ এর কমিটি অফিসার মো. রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অসৌজন্যমূলক আচরণ, আপত্তিকর কথাবার্তা ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ করেন ওই নারী। অভিযোগ পেয়ে রফিকুলকে ‘কারণ দর্শানোর’ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, রফিকুল ইসলাম কমিটি অফিসার হিসেবে কর্মরত। আর ওই নারী একই শাখায় অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত।
গত ২৮ মার্চ ওই নারী সংসদ সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল শনিবার অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ডিসিপ্লিন অ্যান্ড প্রিভিলেজ শাখা।
অবশ্য ওই কর্মকর্তা পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য ছুটিতে রয়েছেন। আজ রোববার দুপুরে তার সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, ওই কর্মকর্তা বেশ কিছু দিন ধরে নারী সহকর্মীকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ ও আপত্তিকর কথাবার্তা বলে আসছেন। অফিসকক্ষ ফাঁকা থাকলে অফিস সহায়ককে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিয়ে ওই নারী কর্মকর্তাকে আপত্তিকর কথাবার্তা বলতেন।
ওই নারীকে কক্ষে ডেকে নিয়ে গিয়ে কম্পিউটারে আপত্তিকর ছবি বের করে বলেন, এগুলো দেখলে মনে প্রশান্তি আসবে। ওই কর্মকর্তা ওই নারীকে মার্কেটে এবং বন্ধুর বাসায় যাওয়ারও প্রস্তাব দেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ওই নারী ওয়াশরুমে যাওয়ার পথে মাঝে মাঝে ওই কর্মকর্তা পথরোধ করার চেষ্টা করেন। ইজ্জত রক্ষার কথা ভেবে ওই নারী চুপ ছিলেন।
কিছুদিন আগে ওই কর্মকর্তা অফিসকক্ষ ফাঁকা পেয়ে ওই নারী সহকর্মীর গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন, চিৎকার করলে তার মুখ চেপে ধরেন এবং ঘটনা কাউকে বললে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
অভিযোগকারী ওই নারী বলেন, ওই কর্মকর্তা জোর করে অনেকবার তাকে জড়িয়ে ধরেছেন, শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করেছেন। চাকরি আর লজ্জায় এই নির্যাতন দিনের পর দিন সহ্য করে গেছি।
তিনি জানান, এ ব্যাপারে গত ২০ মার্চ শেরেবাংলা নগর থানায় জিডি করেন তিনি। পরে তাকে নানাভাবে চাপ দেওয়া হয়। পরদিন অভিযোগ তদন্ত না করার জন্য থানায় আবেদন করেন।
ওই নারীর স্বামীও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা। তিনি বলেন, জিডির সংবাদ পেয়ে রফিক আরও ক্ষিপ্ত হন এবং জিডি প্রত্যাহার না করলে তার পরিবারের সদস্যদেরও প্রাণনাশের হুমকি দেন। তাছাড়া রফিক বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্যও বিভিন্ন লোক মারফত হুমকি দেন। প্রয়োজনে আমার স্ত্রীর পা ধরে ক্ষমা চাইবেন বলেও বলেন।
ওই ভুক্তভোগীর স্বামী আরও বলেন, নিরাপত্তাহীনতার কারণে আমরা সংসদ সচিব মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করি এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিত অভিযোগ করেছি। আসলে আমরা দুজনই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। লোকলজ্জার ভয়ে আর কত দিন এই ধরনের নির্যাতন সহ্য করা যায়?
এদিকে, অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম গত গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি আসলে তাকে শাসন করতে চেয়েছিলেন। এই বিষয়টিই বড় করে দেখা হচ্ছে। তবে তার বিরুদ্ধে জিডি করা হয়েছে এটা ঠিক। এছাড়া সচিব স্যারের কাছে বিচার দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছেই এ ব্যাপারে জানতে পারবেন। এর বাইরে তিনি কিছু জানতে চাননি।
অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম ওমরাহ হজ করতে সৌদি আরব যাওয়ার জন্য রবিবার থেকে ছুটি নিয়েছেন। তিনি ওমরা পালনে যাচ্ছেন কিনা জানার জন্য যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এসডব্লিউ/এসএস/২০০০
আপনার মতামত জানানঃ