হাজার বছর ধরে মানুষ নিজেদের শরীর নিয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা চালিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে এবার মানবদেহে একেবারে নতুন একটি অঙ্গের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
আসলে এগুলো কোষ কিন্তু পুরো অঙ্গের মতো কাজ করে। মানুষের ফুসফুসের ভেতরে উপস্থিত পাতলা এবং খুব সূক্ষ্ম শাখায় এ কোষগুলো পাওয়া যায়।
বিজ্ঞানীরা একজন সুস্থ মানুষের ফুসফুস থেকে টিস্যু নিয়ে প্রতিটি কোষের ভেতরে উপস্থিত জিনগুলো বিশ্লেষণ করেন। তারপর রেসপিরেটরি এয়ারওয়ে সেক্রেটরি (আরএএস) কোষগুলো শনাক্ত করেন।
এর প্রধান কাজ শ্বাসতন্ত্রকে সুস্থ রাখা। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এর সাহায্যে তারা মানুষকে ধূমপানজনিত রোগ থেকে বাঁচাতে পারবেন। তাই প্রশ্ন উঠছে ধূমপানের ফলেই কি এই বিবর্তন ঘটল নাকি এই কোষ ছিল আগের থেকেই। বিস্তারিত তথ্যের জন্য প্রয়োজন আরও গবেষণা।
নতুন কোষের আকর্ষণীয় নামকরণ করা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে রেসপিরেটরি এয়ারওয়ে সেক্রেটরি (আরএএস)।
কীভাবে কাজ করে
এগুলো ফুসফুসের ভেতরের স্নায়ুর শাখা ব্রঙ্কিওলে উপস্থিত থাকে। এটি রক্তের অভ্যন্তরে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বিনিময় করে।
আরএএস কোষগুলো স্টেম সেলের মতো। এগুলোকে ফাঁকা ক্যানভাস কোষ বলা হয়, কারণ এগুলো শরীরের ভেতরে যেকোনো নতুন অঙ্গ বা কোষ শনাক্ত করে।
এটি ক্ষতিগ্রস্ত অ্যালভিওলি মেরামত করে এবং নতুন অ্যালভিওলি কোষ তৈরি করে। যাতে রক্তে গ্যাসের প্রবাহ ঠিক থাকে। গবেষকরা দেখেছেন, আরএএস কোষগুলো ফুসফুসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে।
কারণ এ কোষের সব কাজ ফুসফুসের সঙ্গে সম্পর্কিত সিস্টেমের মাধ্যমে চলে। বিজ্ঞানীরা একজন সুস্থ ব্যক্তির ফুসফুস থেকে টিস্যু নিয়ে প্রতিটি কোষের ভেতরে উপস্থিত জিনগুলো বিশ্লেষণ করেন। তারপর আরএএস কোষগুলো শনাক্ত করা হয়।
পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির পেরেলম্যান স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক এডওয়ার্ড মরিসি বলেন, এটা আগে থেকেই জানা ছিল যে মানুষের ফুসফুসের শাখা-প্রশাখা অর্থাৎ বাতাস চলাচল ইঁদুরের ফুসফুস থেকে আলাদা।
নতুন প্রযুক্তির বিকাশের কারণে আমাদের সুবিধা ছিল যে আমরা এই নতুন কোষটি খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছি। আমরা এটার নমুনা পরীক্ষা করতে পেরেছি।
এডওয়ার্ড মরিসি এবং তার দল ফুসফুসে আরএএস কোষ খুঁজে পেয়েছেন, যা মানুষের কোষের মতো। আরএএস কোষের মাত্র দুটি প্রধান কাজ রয়েছে— প্রথমত, এগুলো কণা নিঃসৃত করে, যা ব্রঙ্কিওলগুলোতে প্রবাহিত তরলগুলোর জন্য একটি আস্তরণ হিসেবে কাজ করে। যাতে প্রথমে বাতাস ত্যাগে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এছাড়াও ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
দ্বিতীয় যে কাজটি করে তা হলো— তারা প্রোজেনিটর কোষের মতো কাজ করে, অর্থাৎ অ্যালভিওলার টাইপ-২ কোষের মতো। এটি একটি বিশেষ ধরনের কোষ, যা ক্ষতিগ্রস্ত অ্যালভিওলি মেরামত করার জন্য রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে।
অতীতে ঘটেছে এমন
২০২০ সালে ডাচ বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, তারা প্রস্টেট ক্যান্সার নিয়ে গবেষণার সময় মানুষের গলায় একটি সম্ভাব্য নতুন অঙ্গ খুঁজে পেয়েছেন। বিজ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী ‘লাইভ সায়েন্স’র একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, লালা গ্রন্থির একটি গুচ্ছ নাকের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে। বহু শতাব্দী ধরে বিভিন্ন মেডিকেল গবেষণার পরও মানবদেহে এমন একটি অঙ্গ যে রয়েছে, যা এতদিন চিকিৎসকদের নজরে আসেনি।
২০১৮ সালদ।বিজ্ঞানীরা নতুন এক অঙ্গ চিহ্নিত করার কথা জানান যা মানবদেহের অন্তর্নিহিত ব্যথাকে পশমিত করতে পারবে। একই সঙ্গে দেহে কিভাবে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ছে তাও ব্যাখ্যা করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির (এনওয়াই) ল্যাঙ্গন হেলথের প্যাথলজি বিভাগের এক দল গবেষকের গবেষণায় এসংক্রান্ত তথ্য জানা যায়।
গবেষকরা বলছেন, নতুন অঙ্গটির খোঁজ বা ধারণা পাওয়া গেছে ত্বকের ওপরের স্তরের নিচে। যদিও এই নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এটা কিভাবে সম্ভব তা নিয়ে চলছে জোর গবেষণা। গবেষকরা বলছেন, এ ধরনের অঙ্গ মানবদেহের সব জায়গায় থাকতে পারে। যদিও এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে জানা সম্ভব হয়নি কোন জায়গায় রয়েছে।
গবেষকদলটি আরো বলছে, চিহ্নিত করা নতুন অঙ্গটি একেবারে নতুন আবিষ্কার। মানবদেহে এমন কিছু থাকতে পারে তা এর আগে জানা যায়নি। এটি ক্ষুদ্র আকারে দেখা গেলে ভবিষ্যতে শরীরে বড় আকার ধারণ করতে পারে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬২৫
আপনার মতামত জানানঃ