মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকা থেকে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে জনসচেতনামূলক লিফলেট বিতরণের সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যদিও পুলিশ বলছে একটি মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামী তিনি এবং সেই মামলাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকে।
অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন কয়েক বছর আগে বিএনপির রাজনীতিতে এসে বেশ আলোচিত হন। তিনি সর্বশেষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির টিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। যদিও ওই নির্বাচনে পরাজিত হন তিনি।
বিরোধী দল বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকেই মাঠের আন্দোলনে খুব একটা সক্রিয় দেখা না গেলেও বিভিন্ন ইস্যুতেই তাকে মাঠে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব দেখা যায়।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যপক উপস্থিতির কারণে বিএনপির অপেক্ষাকৃত তরুণ ও নবীন অংশের মধ্যে তার বেশ একটা জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে।
কী বলছে পুলিশ
গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে তাকে আজ আদালতে উপস্থাপন করা হতে পারে। মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াসির আরাফাত বলেন, মিস্টার হোসেনের বিরুদ্ধে পুরনো মামলায় আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিলো।
তিনি বলেন, দুই হাজার কুড়ি সালের একটি মামলায় আদালতের ওয়ারেন্ট ছিলো। ইশরাক হোসেন সেটি জানেন। সে কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) এনামুল হক মিঠু জানান, গাড়ি পোড়ানোর একটি মামলায় ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন এক নম্বর আসামি। এই মামলায় ওয়ারেন্ট থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি এখন মতিঝিল থানায় আছেন।
জানা যায়, বিএনপির সহযোগী সংগঠন শ্রমিক দলের লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে মতিঝিল গিয়েছিলেন তিনি। ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি রোধে সরকারের ব্যর্থতা এবং সরকার দলীয় সিন্ডিকেটের দুর্নীতির’ বিরুদ্ধে এ কর্মসূচি দিয়েছিলো শ্রমিক দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ইউনিট।
কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে লিফলেট বিতরণের সময় শাপলা চত্বর এলাকা থেকে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে আদালতের পরোয়ানা অনুযায়ী মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
পুলিশ বলছে যে মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে সেটি ২০২০ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা হয়েছিলো।
এদিকে, বিএনপি নেতারা জানান, লিফলেট বিতরণের এক পর্যায়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা এসে বলেন আপনার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে। আপনি এখানে এসেছেন কীভাবে, জামিন আছে আপনার? জামিন আছে জানানোর পরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা কাগজ দেখতে চান।
ইশরাক জানান, জামিনের কাগজ তার সঙ্গে নেই। সে সময় পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জামিনের কাগজ সঙ্গে না থাকলে ওপেন বের হতে পারেন না কি? বলেই পিকআপ ভ্যানে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।
রাজনীতিতে ইশরাক হোসেন
মাত্র কয়েক বছর আগে রাজনীতিতে যোগ দিয়েই বিরোধী দল বিএনপির তরুণ নেতাদের মধ্যে ইশরাক হোসেন বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছেন।
বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি ব্যাপক সক্রিয় থাকায় দলটির তরুণ নেতাকর্মীদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা আছে।
ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন ২০২০ সালে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণে বিরোধী দল বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ছিলেন।
তবে তিনি নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর সরকারি দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন।
দুই হাজার উনিশ সালে পিতার মৃত্যুর পর রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠা ইশরাক হোসেন বর্তমানে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির সদস্য।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সক্রিয় মি. হোসেনকে প্রায়ই ফেসবুক-ইউটিবে উত্তপ্ত বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এগুলোর বাস্তব প্রতিফলন কি তিনি ঘটাতে পারবেন?
গত জানুয়ারি মাসে সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতির কারণে আমি এভাবে বক্তব্য দিতে বাধ্য হচ্ছি।
বর্তমানে যে অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রয়েছে, সেটির বিরুদ্ধে আমরা যে সংগ্রাম করছি, সেই কারণে কিন্তু আমাদের এই ভাষা বেছে নিতে হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬২২
আপনার মতামত জানানঃ