স্ত্রী ঘর ছেড়ে চলে গেলে স্বামী তাকে ভরণপোষণের খরচ দিতে বাধ্য থাকেন। তবে এবার স্ত্রীকে সাবেক স্বামীর ভরণপোষণের খরচ দিতে বলে যুগান্তকারী নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের মুম্বাই হাইকোর্ট। শুধু তাই নয়, স্বামীর পাওনা বকেয়া টাকার জন্য স্ত্রীর বেতন থেকে মাসে মাসে টাকা কেটে রাখতেও আদালত নির্দেশ দিয়েছে।
সম্প্রতি বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া এক স্কুল শিক্ষিকার মামলায় এমনই রায় বহাল রাখল উচ্চ আদালত অর্থাৎ মুম্বাই হাইকোর্ট। আগেই অবশ্য বিবাহবিচ্ছিন্না স্ত্রী যাতে তার সাবেক স্বামীকে খোরপোশ দেন- তেমনি নির্দেশ দিয়েছিল উচ্চ আদালত। স্বামীকে এবার থেকে প্রতি মাসে ৩০০০ রুপি খোরপোশ হিসেবে দিতে হবে সাবেক স্ত্রীকে।
জানা গেছে, ১৯৯২ সালে বিয়ে হয় ওই দম্পতির। তাদের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। ২০১৫ সালে আদালতে দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদের পর মেয়েটি মায়ের কাছেই থাকে। এরপরই ভরণপোষণের দাবি করে আদালতে মামলা করেন ওই স্বামী। তার দাবি ছিল, স্ত্রীর জন্য নিজের সমস্ত উচ্চাশা ছেড়েছেন তিনি। স্ত্রীর পাশে থেকে ঘর সামলেছেন। তবে এখন তিনি অসুস্থ হওয়ায় কোনো উপার্জন নেই। তার নামে কোনও স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তিও নেই। অন্যদিকে স্ত্রী নানাভাবে তাকে হেনস্থা করে, অসদুপায়ে বিচ্ছেদ নিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, ওই শিক্ষিকা মাসে ৩০ হাজার রুপি বেতন পান। নিজের নামে স্থাবর সম্পত্তিও রয়েছে। ফলে আইন অনুযায়ী, ভরণপোষণের আবেদন করেন ওই ব্যক্তি।
তার এই মামলার জেরে, ২০১৭ সালে মহারাষ্ট্রের নান্দেড়ের নিম্ন আদালত ওই নারীকে প্রতিমাসে তিন হাজার রুপি করে স্বামীকে ভরণপোষণ দেয়ার নির্দেশ দেয়। নির্দেশ না মানায় ২০১৯ সালে আদালত আর একটি নির্দেশনা জারি করে। তাতে ওই নারীর স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বলা হয়, শিক্ষিকার বেতন থেকে ৫ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে কেটে নিয়ে তা আদালতে জমা করতে। ২০১৭ সালের নির্দেশের পর বকেয়া হিসাবে ওই টাকা তার স্বামীর প্রাপ্য।
পরে নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মুম্বাইয়ের হাই কোর্টে মামলা করেন এই শিক্ষিকা। তাতে হাইকোর্টের ঔরঙ্গাবাদ বেঞ্চ সাবেক স্বামীকে ভরণপোষণের অর্থ দেয়ার নির্দেশই বহাল রাখে। তাই প্রতি মাসে সাবেক স্বামীকে ৩ হাজার রুপি করে পাঠাতে হবে এই নারীর।
শুধু তাই নয়, স্বামীর পাওনা বকেয়া টাকার জন্য স্ত্রীর বেতন থেকে মাসে মাসে টাকা কেটে রাখতেও আদালত নির্দেশ দিয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার বোম্বে হাইকোর্ট মূলত রাজ্যটির নান্দেদ নিম্ন আদালতের আগের আদেশ বহাল রাখেন। বোম্বে হাইকোর্ট বলছে, স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রীকে অন্তবর্তীকালীন ভরণপোষণের খরচ হিসেবে প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা করে তার সাবেক স্বামীকে দিতে হবে।
আর ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে বকেয়া থাকা ভরণপোষণের খরচ আদায় করতে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদেশ অনুযায়ী, মাসে মাসে ওই স্কুল শিক্ষিকার বেতন থেকে ৫ হাজার করে টাকা কেটে নিয়ে আদালতে জমা দিতে হবে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, সাবেক স্বামীকে ভরণপোষণের খবর দেওয়ার আদেশের সময় বিচারপতি ভারতী ডাংরে ১৯৫৫ সালের বিন্দু বিবাহ আইনের ২৫ নম্বর ধারার কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। এ ব্যাপারে নিম্ন আদালতের দেওয়া আগের আদেশ খারিজের জন্য ওই স্কুল শিক্ষিকার আবেদনও খারিজ করে দিয়েছেন বোম্বে হাইকোর্ট।
১৯৫৫ সালের বিন্দু বিবাহ আইনের ২৫ নম্বর ধারা বলা হয়েছে, আদালত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মোটা অর্থ কিংবা মাসিক কিংবা পর্যায়ক্রমে আবেদনকারীকে দিতে আদেশ দিতে পারে। দুইপক্ষের আবেদন শুনে বিচারপতি ডাংরে বলেছেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের ডিক্রি প্রযোজ্য না করে আইনের ২৫ নম্বর ধারার সুযোগকে সীমাবদ্ধ করা যাবে না।
এদিকে ওই নারী দাবি করেছেন যে, ১৯৯২ সালে তাদের বিয়ের হয়েছিল। তবে তিনি স্বামীর থেকে আলাদা থাকতেন এবং ২০১৫ সালে তিনি বিবাহ বিচ্ছেদের ডিক্রি পেয়েছিলেন। আর ভরণপোষণের আদেশ দেওয়া হয়েছে তার অনেক পরে। ফলে সেটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
তবে বোম্বে হাইকোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হিন্দু বিবাহ আইনের ২৫ নম্বর ধারা স্ত্রী কিংবা স্বামী উভয়ের জন্যই একটি বিধান। হাইকোর্ট আরও জানিয়েছে, আইনের ২৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, স্বামী ভরণপোষণের জন্য যে আবেদন করেছেন তা যথাযোগ্য।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৪৭
আপনার মতামত জানানঃ