ইহুদিসহ ইউরোপের নানা জাতিগোষ্ঠীর উপর নাৎসিদের চালানো নৃশংসতার অভিপ্রায় নিয়ে দীর্ঘ দেড়যুগ ধরে কাজ করছিলেন পোলিশ আইনজীবী রাফায়েল লেমকিন (Raphael Lemkin)। ১৯৩০ থেকে শুরু করা লেমকিনের প্রগাঢ় গবেষণা ও সুদৃঢ় প্রচেষ্টায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ৯ ডিসেম্বর ১৯৪৮ সালে প্যারিসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গৃহীত হয় ‘জেনোসাইড কনভেনশন’। এই কনভেনশনের দ্বিতীয় ধারায় জেনোসাইডের একটা স্পষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করে বলা হয়— একটা জাতি বা গোত্র, নৃতাত্ত্বিক বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে সংঘটিত কার্যক্রমগুলো ‘জেনোসাইড’। লক্ষণীয়, এই ধারায় ‘ইনটেন্ট টু ডেস্ট্রয়’ গুরুত্ব পেয়েছে। অর্থাৎ ধ্বংস করার ইচ্ছাটাও জেনোসাইড।
একটা জাতি, গোত্র, নৃতাত্ত্বিক বা ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে ফেলার প্রকাশ্য ঘোষণা বা ধ্বংস করার জন্য কাউকে উৎসাহিত করাও জেনোসাইড এবং জেনোসাইড একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ। জেনোসাইড সংগঠিত হতে পারে যুদ্ধ কিংবা শান্তিকালীন সময়ে। যাদের বিরুদ্ধে জেনোসাইড সংগঠিত হয় তারা সক্ষম হলে নিজেরা বিচারের আয়োজন করতে পারে, না হলে জেনোসাইড থামানো এবং বিচার করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আইনি দায়িত্ব।
আর্টিকেল দুই-এ জেনোসাইডের সংজ্ঞায় যে ‘ইনটেন্ট টু ডেস্ট্রয়’ এর কথা বলা হয়েছে, আমাদের প্রেক্ষিতে এর শুরু ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ নয় বরং পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির সময় থেকেই।
১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ কর্তৃক উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে গুলি করে হত্যা, রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ, আরবি হরফে বাংলা লেখানোর চেষ্টা- এগুলো যেমন ছিল বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচয়কে ধ্বংস করার অভিপ্রায়, তেমনি অর্থনৈতিক বৈষম্যের মাধ্যমে ও বাঙালি জাতিগোষ্ঠীকে ধ্বংস করা চেষ্টা করা হয়েছে।
বাঙালি ‘প্রকৃত মুসলমান নয়’, ‘দুর্বল, কালো, বেঁটে’- এ রকম চিহ্নিত করে বাঙালি জাতির প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে। মূলত পাকিস্তানের শুরু থেকেই জেনোসাইডের প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছে এবং ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাত থেকে এর চূড়ান্ত বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
ব্যাপক গণহত্যা এবং এক কোটি মানুষকে উদ্বাস্তু হতে বাধ্য করার উদ্দেশ্য অবশ্যই ছিল বাঙালি জাতিগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করা। এসময় পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পীসহ সমাজের বুদ্ধিজীবী শ্রেণি। এই হত্যাগুলোর উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জাতিগোষ্ঠীকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে শূন্য করে দেওয়া।
ধর্ষণেরও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছিল, ধর্ষণগুলো স্রেফ যৌন তাড়নায় ছিল না। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাদের সৈনিকদের উসকে দিয়েছে। এমনকি ধর্মীয় ফতোয়াও জারি করা হয়েছিল। এসব ধর্ষণের উদ্দেশ্য ছিল- বাঙালি জাতিসত্তার স্বকীয়তা শেষ করে দেওয়া, বাঙালি নারীর গর্ভে পাকিস্তানি সন্তান জন্ম দেওয়া- যারা অনুগত থাকবে তাদের পিতৃগোষ্ঠীর প্রতি। জাতি ধ্বংসের এই অভিপ্রায়ই জেনোসাইড।
১৯৭১-এর ২৫ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও বিরোধীদলীয় নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর যোগসাজশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে সার্চলাইট অপারেশনের নামে এদেশে গণহত্যা শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত এই দীর্ঘ নয় মাসে ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা ও ৪ লাখের অধিক মা-বোন ধর্ষণের শিকার হয়।
বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে ফিরে আসার পর যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট গণহত্যা-ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের অভিযোগ আছে এমন প্রায় ৩৬ হাজার রাজাকার-আলবদর, আলশামসের বিচারের পাশাপাশি পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও সরাসরি হত্যা-ধর্ষণ, লুটপাটে যুক্ত চূড়ান্তভাবে ১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে বিচারের জন্য মনোনীত করেন।
সর্বশেষ ত্রিপক্ষীয় সিমলাচুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান তাদের অপরাধের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে ১৯৫ জন সেনাকর্মকর্তাকে নিজ দেশে নিয়ে বিচার করবে এই মুচলেকা দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু তারা আর বিচার করেনি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতায় আসা সরকারগুলোর বেশিরভাগই গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি নিষ্পত্তি না করেই পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার চেষ্টা চালায়।
গত ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত গ্যারি জে ব্র্যাসের লেখা গ্রন্থ ‘দ্য ব্ল্যাড টেলিগ্রাম–নিক্সন, কিসিঞ্জার অ্যান্ড এ ফরগটেন জেনোসাইড’ পাকিস্তানি গণহত্যার তথ্য বিশ্বের সামনে নতুন করে তুলে আনে। অথচ আজও বিচার হয়নি। পায়নি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
চলতি বছর ২৫ জানুয়ারি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এক উন্মুক্ত আলোচনায় ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টিএস ত্রিমূর্তি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা ও ২০০৮ সালে মুম্বাই গণহত্যার আন্তর্জাতিক বিচার দাবি করেন। ভারতীয় প্রতিনিধি দুনিয়াব্যপী রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাস বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন- আঞ্চলিক, বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে সন্ত্রাস প্রতিরোধে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
তবে উক্ত আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধির বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দেখতে দেখতে স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হলো। এসব অনুষ্ঠানে সব মহলের পক্ষ থেকে ২৫ মার্চ গণহত্যার বিচারের দাবি উচ্চারিত হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালন করা হলেও আন্তর্জাতিক পরিসরে এই দিবসটি এখনও উপেক্ষিত।
মহান মুক্তিযুদ্ধর ইতিহাস নিয়ে পাকিস্তানসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর অপপ্রচার যতই করুক না কেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ১৯৭১ সালের গণহত্যার তথ্যপ্রমাণের অভাব নেই। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ মানুষ যে শহীদ হয়েছে তার অকাট্য প্রমাণ বহন করছে সে সময়ে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকা এবং রেডিও টেলিভিশনের খবরগুলোর আর্কাইভ। অস্ট্রেলিয়ার ওই সময়ের পত্রিকা হেরালড ট্রিবিউনের রিপোর্ট অনুসারে ২৫ মার্চ রাতে শুধু ঢাকা শহরেই ১ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। ভারতের ইন্ডিয়ান টাইমসের রিপোর্টে আছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার মানুষ শহীদ হয়েছে।
মার্কিন সিনেটর অ্যাডওয়ার্ড কেনেডি ভারতে শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করেন ’৭১ সালে। তিনি পাকিস্তানি সৈনিকদের বিরুদ্ধে সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ করেন। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের পাঁচটি নৃশংস গণহত্যার চেয়েও ভয়ংকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
টাইমস ম্যাগাজিনের ডেন কগিন, যিনি মুক্তিযুদ্ধর প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক, একজন পাকিস্তানি ক্যাপটেনের বরাত দিয়ে লিখেছেন- ২৫ মার্চে ঢাকা শহরেই লক্ষাধিক লোককে হত্যা করা হয়। এছাড়া দীর্ঘ ৯ মাসের প্রতিদিনই জেলা শহর ও মফস্বল অঞ্চলে শত শত বাঙালিকে হত্যা করে বধ্যভূমিতে ফেলে রাখা হয়। সেই সঙ্গে বিশ্বখ্যাত এই পত্রিকাটির একটি সম্পাদকীয় মন্তব্য ছিল- ‘It is the most incredible calculated thing since the clays of the Nayis in Poland.’
আন্তর্জাতিক মহলের মতে, ৭১-এ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তিন মিলিয়ন বা ত্রিশ লাখ বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছে। এই সংখ্যার সমর্থন রয়েছে Encyciopedia Americana and National Geographic Megagine–এ। এসব রিপোর্টে লেখা আছে, বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তান বাহিনীর নিষ্ঠুরতা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পোল্যান্ডে নাজি বাহিনীর বর্বরতার চেয়েও ভয়াবহ। এই গণহত্যা সম্পর্কে পাকিস্তানি জেনারেল রাও ফরমান আলী তার ডায়েরিতে লিখেছেন– “Paint the green of East Pakistan red.” অর্থাৎ বাংলার সবুজ মাঠকে লাল করে দাও। একজন মার্কিন গবেষক Rudolph Joseph Rummel তার রচিত Statistics of Democide (১৯৮৮) গ্রন্থের অষ্টম অধ্যায়ে তিনি অন্তর্ভুক্ত করেছেন “Statistics of Pakistan Democide –Estimates Caculation and sources” শীর্ষক নিবন্ধটি। এই নিবন্ধে Rummel তার আবিষ্কৃত গণহত্যার পরিসংখ্যান পদ্ধতি অনুসারে দেখিয়েছেন যে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধর সময় বাংলাদেশে ত্রিশ লাখ ৩ হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছেন। ১৯৭১ সালের ইউনাইটেড নেশনস হিউম্যান রাইটস কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী মানবসভ্যতার ইতিহাসে যতগুলো গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তাতে অল্প সময়ের মধ্যে সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে। প্রতিদিন গড়ে ৬ থেকে ১২ হাজার মানুষ তখন খুন হয়। গণহত্যার ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ গড়।
১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘বেঙ্গলিজ ল্যান্ড অ্যা ভাসটি সিমেট্রি’ (বাঙালির ভূখণ্ড এক বিশাল সমাধিক্ষেত্র) মার্কিন সংবাদিক সিডনি এইড শানবার্গ যুদ্ধের পরপর বাংলাদেশে এসে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছিলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, শানবার্গ দেখতে পান, বাংলাদেশের প্রতিটি শহর, প্রতিটি থানায় রয়েছে বধ্যভূমি, যেখানে পাকিস্তানি সেনারা যুদ্ধের ৯ মাসের প্রতিদিন বাঙালিদের হত্যা করেছে। পাকিস্তানি সেনারা এভাবেই লাখ লাখ বাঙালি হত্যা করেছে।
বাঙালি মুসলমানদের পাকিস্তান প্রেম
“ঢাকা স্টেডিয়ামে যতবার ভারত ও পাকিস্তান দলের খেলা হয়েছে প্রতিবারই বাংলাদেশী দর্শকের শতকরা প্রায় ৯৯ জনই পাকিস্তান দলের প্রতিই আবেগপূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যানার প্রদর্শন করলেও তা দর্শকদের মনে সামান্য প্রভাবও বিস্তার করতে পারেনি। দর্শকরা ঐ ব্যানার দেখে মন্তব্য করেছে ‘রাখ মিয়া মুক্তিযুদ্ধের কথা, এখানে মুসলমানদের বিজয় চাই’… ধর্মনিরপেক্ষবাদী ও ভারতপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীদের মন্তব্যের কথা শুনেছি। তারা নাকি বলেন, আমরা বছরের পর বছর চেষ্টা করে যুবসমাজের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঞ্চারের জন্য যে আপ্রাণ চেষ্টা করি তা স্টেডিয়ামে পাক-ভারত খেলায়ই নস্যাত হয়ে যায়।”
–শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী ও ঘাতক দল জামায়াতে ইসলামীর প্রাক্তন আমির গোলাম আযম (আত্মজীবনী জীবনে যা দেখলাম, ৩য় খণ্ড, পৃ: ১২৬-১২৭)
বাংলাদেশ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরুতে যাচ্ছে। এমন সময়ে বাঙালির পাকিস্তানমনস্কতা মুক্তিযুদ্ধপন্থী সকল মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে। বিশেষত বিজয়ের এত বছর পর তরুণ প্রজন্ম পাকিস্তান সমর্থন করবে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ কেউ একে ভারতবিরোধিতা বলছেন। তথাকথিত ভারতবিরোধিতার নামে পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন একাত্তরের ‘ভারতের দালাল’ স্লোগানের মতোই হয়ে যায়। আপনি যদি মনে করেন বাংলাদেশে ভারতীয় আগ্রাসন বা আধিপত্য বিস্তার ঘটেছে, তবে সেটার বিরোধিতা করতেই পারেন। কিন্তু এর নাম করে পাকিস্তান সমর্থন করবেন কোন যুক্তিতে? এর কোনো সদুত্তর তাদের জানা নেই।
পাকিস্তানে “খেল খেল মে” নামক একটি সিনেমায় তাদের ভাষ্যমতে তারা নতুন চিন্তা-ভাবনা নিয়ে সামনে এগোনোর বার্তা দিয়েছে। অথচ ট্রেইলার এবং গানে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে কাব্য করে বলা হয়েছে, “চল, দুজন মিলে ক্ষমা চাই”। প্রশ্ন হল, এই দু`জন মিলে ক্ষমা চাওয়ার কথাটা আসছে কেন?
আজ সম্পর্ক উন্নয়নের দোহাই দিয়ে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারটা যখন আরও একবার আলোচনায় উঠতে শুরু করেছে, তখন এ রকম প্রজেক্টের উদ্দেশ্য একটাই- আত্মপলব্ধির পথে না হেঁটে, বরং তরুণদের মধ্যে বিভ্রম ছড়ানো, যাতে করে নিজেদের মধ্যেই বিরোধ আর অবিশ্বাসের শিকার হয়ে আমাদের দাবীটি দুর্বল হয়ে পড়ে আর তাতে করে কালো বাঙ্গালিদের কাছে ক্ষমা চেয়ে একা পাঞ্জাবি মাথা নত না হয়, বরং নত হলে দু`জনেরই হোক!
বিভ্রান্তি জাগাতে তারা অনেকটা সফল যে হয়েছে তা ভিডিওগুলোর নিচে বাংলাদেশীদের মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট। ঝাঁকে-ঝাঁকে মতামত আসছে যে তারা নাকি “সত্য” কিম্বা “সম্পূর্ণ” ইতিহাস কোনদিন জানতে পারেনি, এতদিন কেবল একপেশে কথাই শুনে এসেছে, তাই এই চলচ্চিত্রটির জন্য এখন খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায়!
আমরা অবাক হয়ে দেখছি, নতুন প্রজন্মের একাংশ তার রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ইতিহাস ভুলে নানা ছুঁতোয় পাকিস্তান সমর্থন করছে। এই পাকিস্তানমনস্কতা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। এদেশীয় রাজাকার, আল বদর, আল শামস ও শান্তি কমিটি সেই বীজ মুক্তিযুদ্ধের সময়েই বপন করেছিল। ধর্মের মেলবন্ধনের নাম করে এর গোড়ায় জলসেচ দেওয়া হয়েছে। যা এখন ডালপালা বিস্তৃত করে দৃশ্যমান রূপ নিয়েছে।
যে প্রজন্ম পাকিস্তান শাসন দেখেনি, মুক্তিযুদ্ধের বিভীষিকা দেখেনি, সেই প্রজন্মকে ইতিহাস থেকে দূরে সরিয়ে রেখে পাকিস্তানপন্থী করে তোলা খুব কঠিন কাজ নয়। একটু ধর্মের মাসালা মিশিয়ে পরিবেশন করলেই তারা গোগ্রাসে গলাধঃকরণ করছে ও স্বজাতির ওপর উগড়ে দিচ্ছে বিষ। যে জন্য এদেশের মাদ্রাসাগুলোতে এখনো জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না, বঙ্গবন্ধুকে বলা হয় না জাতির পিতা।
এসডব্লিউ/এসএস/২২০০
আপনার মতামত জানানঃ