পটুয়াখালীতে জেলা বিএনপির বিক্ষোভ-সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হামলা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শফিউর রহমান, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মাহবুব, সদর থানা ছাত্রদলের হাসান মাহমুদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের হাসান মাহমুদসহ অন্তত ৫০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এদিকে শরীয়তপুরেও পুলিশের বাধার মুখে সমাবেশ করতে পারেনি বিএনপির নেতাকর্মীরা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় বিএনপির আহ্বানে আজ বুধবার পটুয়াখালীতে জেলা বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। তবে দফায় দফায় হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে বিএনপির এ সমাবেশ পণ্ড হয়ে গেছে।
পটুয়াখালীতে সমাবেশে আ’লীগের হামলা, পুলিশের লাঠিপেটা
সূত্র মতে, আজ সকালে সমাবেশ শুরুর আগে বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থল জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সামনে জড়ো হতে শুরু করেন।
সমাবেশ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবীসহ কয়েক নেতা ঢাকা থেকে পটুয়াখালীতে আসেন। বিএনপির নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, সমাবেশ শুরুর আগেই শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাধা দেন।
সমাবেশে যোগ দেওয়ার পথে পৌরসভার মোড়ে সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মাহবুবকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
পরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে হোটেল বনানী মোড়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। সকাল পৌনে ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে।
এ সময় একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে। এ ঘটনার পর বিএনপির সভা পণ্ড হয়ে যায়।
জানতে চাইলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি বলেন, তাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন।
তবে বিএনপির এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, পটুয়াখালীতে জেলা বিএনপির দীর্ঘদিন ধরে কোন্দল আছে। এর জেরে তাদের নিজেদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
পটুয়াখালীতে বিএনপিই বিএনপির প্রতিপক্ষ। নিজেদের দোষ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ওপর মিথ্যা দোষারোপ করছেন। এ বিষয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শরীয়তপুরে পুলিশের বিরুদ্ধে বাধা দে’য়ার অভিযোগ
তেল, গ্যাস, পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শরীয়তপুরে জেলা বিএনপির নির্ধারিত সমাবেশ করতে বাধা দিয়েছে পুলিশ।
বাধার মুখে আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুব আলম তালুকদারের শহরের বাড়িতে জড়ো হন কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলার নেতা-কর্মীরা।
সেখানে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। শামা ওবায়েদ বলেন, সমাবেশ আয়োজন করায় পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে, ভয় দেখাচ্ছে। আওয়ামী লীগ মহড়া দিয়ে হামলা করে সমাবেশস্থলে যেতে বাধা দিয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে এমন আচরণ ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী সরকারের চরম উদাহরণ।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে ইশতেহার দিয়েছিল ১০ টাকা মূল্যে চাল খাওয়াবে, ঘরে ঘরে যুবকদের চাকরি দেবে, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম বন্ধ করবে। কিন্তু গত ১৩ বছরে আওয়ামী লীগ তার উল্টোটা করেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ আজ অসহায়। এমনকি যারা আওয়ামী লীগের সমর্থক, ভোটার, তারাও আজ অসহায়, কষ্টে আছেন।
বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে শরীয়তপুর সরকারি কলেজ মাঠে সমাবেশ করার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তারা সমাবেশ করতে দিতে রাজিও হয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার রাত থেকে নেতা-কর্মীদের হুমকি দিচ্ছিল পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতারা।
সকালে আমাদের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ সমাবেশস্থলে আমাদের যেতে দেয়নি। শহরজুড়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মহড়া দিয়ে বিএনপির সমর্থকদের ধাওয়া করেছে।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া-সদর সার্কেল) মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি কলেজ মাঠে সমাবেশ করার জন্য বিএনপি চিঠি দিয়েছিল, আবার আওয়ামী লীগ থেকে মার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে কোনো রাজনৈতিক দলকেই সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিএনপি নেতাদের অন্য স্থানে সমাবেশ করতে অনুরোধ করা হয়। তাই তারা এক বিএনপি নেতার বাড়িতে সমাবেশ করেছেন।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৪৫
আপনার মতামত জানানঃ