অমাবস্যার রাতে ঘোর অন্ধকার নেমে এলেও চীনের আকাশে থাকবে চাঁদের কোমল আলো। তথ্যটা অবাক হওয়ার মতো হলেও বাস্তবে তাই হবে। চীনের বিজ্ঞানীরা বানাচ্ছেন কৃত্রিম চাঁদ!
চীন পৃথিবীর উপগ্রহে মহাকাশচারীদের অবতরণ করার এবং সেখানে একটি ঘাঁটি স্থাপন করার পরিকল্পনা করছে। চীনের জিয়াংসু প্রদেশে অবস্থিত সেই সুবিধাটি চাঁদের অন্বেষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
চীনা বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম একটি চাঁদ তৈরি করছেন; যা কম মাধ্যাকর্ষণে পরীক্ষা চালানো সম্ভব করবে। গবেষকরা বলছেন, তারা যা সৃষ্টি করেছেন সেটা বিশ্বে প্রথম। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে এটি মাধ্যাকর্ষণকে ‘অদৃশ্য’ করতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, তারা রাশিয়ান-ডাচ-ব্রিটিশ পদার্থবিদ আন্দ্রে গেইম-এর দ্বারা পরিচালিত একটি পরীক্ষা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। ওই পদার্থবিদ একটি ব্যাঙকে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য চুম্বক ব্যবহার করেছিলেন।
জানা গেছে, চীনের বিজ্ঞানিরা চাঁদে পাঠানোর আগে পৃথিবীতে সুবিধাটি পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করছেন; যেখানে মাধ্যাকর্ষণ আমাদের গ্রহের প্রায় ষষ্ঠাংশ।
চায়না ইউনিভার্সিটি অব মাইনিং অ্যান্ড টেকনোলজির জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার লি রুইলিন বলেছেন, কিছু পরীক্ষা, যেমন একটি প্রভাব পরীক্ষার জন্য মাত্র কয়েক সেকেন্ডের প্রয়োজন। কিন্তু অন্যান্য পরীক্ষা, যেমন- ক্রীপ টেস্টিং করতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।
রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো মহাকাশের অন্যান্য পরাশক্তির সাথে বেইজিং পৃথিবীর স্যাটেলাইটে মহাকাশচারীদের অবতরণ করার এবং সেখানে উপস্থিতি জোরদারের পরিকল্পনা করছে।
এদিকে সূর্যের কেন্দ্রের উষ্ণতা যেখানে দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেখানে চীনের তৈরী ‘কৃত্রিম সূর্য’ উৎপন্ন করতে পেরেছে ৭ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস! অর্থাৎ সূর্যের কেন্দ্রের তাপমাত্রার ৫ গুণ! তবে তা ১৮ মিনিটের জন্য। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও এই সাফল্য চমকে দিয়েছে সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এতে নিউক্লিয়ার ফিউশন বা কেন্দ্রকীয় সংযোজন প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়ে পরিবেশবান্ধব বিপুল শক্তি উৎপন্ন করা সম্ভব হবে। অন্তত সে পথে এক ধাপ এগিয়ে নেবে।
নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় একাধিক হালকা নিউক্লিয়াই সংযোজিত হয়ে তুলনামূলক ভারী নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। পাশাপাশি এ প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় বিপুল শক্তি। মূলত সূর্যের নিউক্লিয়ার ফিউশনের প্রক্রিয়া অনুকরণ করছেন ওই বিজ্ঞানীরা।
বিশ্বের অনেক দেশই ফিউশন রিঅ্যাকটর প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। তবে এ প্রযুক্তিতে এবার উল্লেখযোগ্য সফলতা পেয়েছে চীন। দেশটির বানানো নিউক্লিয়ার ফিউশন রিঅ্যাকটর ডিভাইস সূর্যের চেয়েও পাঁচ গুণ বেশি তাপমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সূর্যের রেপ্লিকা হিসেবে তৈরি করা এ কৃত্রিম সূর্যে হাইড্রোজেনকে সবুজ শক্তি বা বিদ্যুতে রূপান্তরের প্রক্রিয়া চালানো হবে। এখান থেকে উৎপন্ন উত্তাপ নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়ার জন্য জরুরি।
তারা জানান, শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ফিশন প্রক্রিয়ার তুলনায় ফিউশন প্রক্রিয়া ভিন্নভাবে কাজ করে। এক্ষেত্রে বস্তুর নিউক্লিয়াসকে পৃথক না করে নিষ্ক্রিয় করে দেয়া হয়। এই ফিউশন প্রক্রিয়া সুলভমূল্যের অফুরন্ত শক্তি উৎপাদনের পথ খুলে দেবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। আর তা ফিশন প্রক্রিয়ার চেয়ে পরিবেশবান্ধব, যাতে ক্ষতিকর নিউক্লিয়ার বর্জ্যও উৎপন্ন হবে না।
এ ধরনের গবেষণাগারকে কৃত্রিম সূর্য বলার কারণ সেখানে মূল সূর্যের নিউক্লীয় ফিউশনের প্রক্রিয়া অনুকরণ করা হয়। অর্থাৎ সূর্যের শক্তি উৎপন্নের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। এমন বিক্রিয়ায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় হাইড্রোজেন ও ডিউটেরিয়াম গ্যাস।
এর মূল লক্ষ্য বলা যায় মানুষের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদার পরিবেশবান্ধব উৎস তৈরি। সমুদ্রের এক লিটার পানি থেকে যে পরিমাণ ডিউটেরিয়াম গ্যাস পাওয়া যাবে, তা থেকে নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমে পাওয়া শক্তি ৩০০ লিটার গ্যাসোলিন পুড়িয়ে পাওয়া শক্তির প্রায় সমান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৩৬
আপনার মতামত জানানঃ