বিশ্বে আগে কখনো এ ধরনের সংকট আসেনি। একসঙ্গে এত প্রজাতির প্রাণী বিপদগ্রস্ত হয়নি। এ বিপদের মূল কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। আগামী এক দশকের মধ্যে পৃথিবী থেকে ১০ লাখ প্রজাতির প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের (ডব্লিউডব্লিউএফ) জার্মান শাখা এ বিপদের কথা শুনিয়েছে। সংস্থাটি একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে চলতি বছর প্রাণী সংরক্ষণের দিক থেকে কারা জয়ী, কারা বিপদের মুখে, তা রয়েছে।
ডাইনোসর যুগের পর সবচেয়ে বড় গণবিলুপ্তি দেখতে চলেছে পৃথিবী। আগামী এক দশকের মধ্যে তা ঘটবে। পরিবেশবাদী সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচারের প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে।
প্রায় সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে কোনো এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পৃথিবী থেকে বিলুপ্তি ঘটে ডাইনোসর প্রজাতির। এরপর এমন বিলুপ্তি আর দেখা যায়নি পৃথিবীতে।
বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি সতর্ক করেছেন, কোটি কোটি বছর আগের ওই বিপর্যয়ের চেয়েও বড় ঘটনা ঘটতে চলেছে পৃথিবীতে। পরিবেশবাদী সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচারের (ডব্লিউডব্লিউএফ) বরাতে এ খবর ছেপেছে ডেইলি মেইল।
ডব্লিউডব্লিউএফ দাবি করছে, ডাইনোসর যুগের পর পৃথিবীতে আগামী এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় গণবিলুপ্তি ঘটতে যাচ্ছে।
২০২১ সালের বর্ষসমাপনী প্রতিবেদনে সংস্থাটি দাবি করেছে, আফ্রিকান হাতি, মেরু ভালুক, ব্যাঙ, মাছ ও হাঙ্গরের মতো অনেক প্রাণী বিলুপ্তির ঝুঁকির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।
প্রায় ১০ লাখ প্রজাতি আগামী এক দশকের মধ্যে বিলুপ্ত হতে পারে। আর এটা হবে ডাইনোসর যুগের পর পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় গণবিলুপ্তি।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) ১৯৬৪ সাল থেকে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা প্রজাতির তালিকা করছে। বর্তমানে তাদের লাল তালিকায় আছে ১ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ প্রজাতি।
আইইউসিএন বলছে, সামনের গণবিলুপ্তিতে এদের মধ্যে ৪০ হাজার প্রজাতি পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে।
ডব্লিউডব্লিউএফের তৈরি করা বিলুপ্তির আশঙ্কায় থাকা এ বছরের পরাজিত প্রাণীদের তালিকার ওপরের দিকে রয়েছে আফ্রিকার বুনো হাতি। তাদের সংখ্যা ৩১ বছরে ৮৬ শতাংশ কমেছে। উষ্ণায়নের জন্য মেরুতে বরফের স্তর পাতলা হচ্ছে। তাই বিপাকে মেরু ভল্লুক। বরফ দ্রুত গলছে। কিন্তু ভল্লুকরা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না।
ডব্লিউডব্লিউএফের মতে, ২০৩৫ সালের মধ্যে উত্তর মহাসাগর বা সুমেরু মহাসাগরে বরফ পুরোপুরি গলে যাবে। জার্মানির ট্রি ফ্রগের সংখ্যাও ৫০ শতাংশ কমে গেছে। তারাও এখন বিপদগ্রস্ত প্রাণী। সমানে বাড়ি তৈরি হওয়ায় এবং জঙ্গলের পরিমাণ কমে যাওয়ায় তাদের এ অবস্থা।
এ ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত মাছ আহরণ, বাসস্থানের সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হাঙ্গর ও স্টিং রে প্রজাতি কমে যাবে ৩০ শতাংশ।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, নগরায়নের ফলে জার্মানিতে ব্যাঙের মতো উভচর প্রাণীও গণবিলুপ্তি থেকে রেহাই পাবে না। ঝিনুক প্রজাতিও আছে এই তালিকায়।
এতোসব শঙ্কার মধ্যে আশার বাণীও শোনাচ্ছে ডব্লিউডব্লিউএফ। তারা বলছে, নেপাল সরকার সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়ায় ভারতীয় গন্ডারের সংখ্যা বাড়ছে। দেশটি ২০১৫ সালে এই উদ্যোগ নেয়ার পর এই প্রজাতির গন্ডারের সংখ্যা ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
ইউরোপে স্পেন ও পর্তুগালে বিলুপ্তির পথে ছিল আইবেরিয়ান লিংকস (বনবিড়ালের প্রজাতি)। বিষয়টি টের পেয়ে ১৮ বছর আগে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিল লিসবন ও মাদ্রিদ। বর্তমানে ১ হাজার ১১১টি আইবেরিয়ান লিংকস আছে দেশ দুটিতে।
এমন উদ্যোগের ফলে আল্পস পর্বতমালায় দাড়িওয়ালা শকুনের সংখ্যাও বেড়েছে। বর্তমানে এই অঞ্চলের আকাশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৩০০ শকুন।
জার্মানির গ্রেট বাস্টার্ডের সংখ্যা ১৯৯৭ সালে কমে দাঁড়িয়েছিল ৫৭। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ৩৪৭। ফলে এ বছর বিজয়ী প্রাণীর তালিকায় রয়েছে গ্রেট বাস্টার্ড। স্পেন ও পর্তুগালে আবার আইবেরিয়ান লিনক্স দেখা গেছে। ২০০২ সালে মাত্র ৯৪টি লিনক্স ছিল, এখন তার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১০০।
ডব্লিউডব্লিউএফের পরিচালক মার্কো ল্যাম্বারটিনি বলছেন, এখন এই প্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখতে জরুরি ভিত্তিতে সুরক্ষা নীতি নেওয়া দরকার। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে নির্ণায়ক লড়াই করতে হবে।
তার মতে, বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষণের বিষয়টি শুধু একটা পরিবেশগত সমস্যা নয়। এভাবে চলতে থাকলে একপর্যায়ে মানুষও ওই লাল তালিকায় চলে যাবে। তাই জীবনধারণের পদ্ধতি বদল করতেই হবে বলে মনে করেন মার্কো।
এসডব্লিউ/এসএস/১২০০
আপনার মতামত জানানঃ