ছয় ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের কঙ্কালটি কি ভিনগ্রহের প্রাণীর? এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছিলেন বিজ্ঞানীরা। কৌতূহল বাড়ছিল পৃথিবীতে ভিনগ্রহের প্রাণীদের ‘যাতায়াত’ নিয়ে।
সাম্প্রতিক কালে ইউএফও দেখা গিয়েছে এমন কয়েকটি দাবি করা ঘটনাকে ঘিরে এমনিতেই ভিনগ্রহের প্রাণীদের অস্তিত্ব নিয়ে বিশ্বে জোর তর্ক চলছে। তার মধ্যে ছয় ইঞ্চি মাপের ত্রিকোণা মাথার অদ্ভুতদর্শন একটি কঙ্কাল সেই জল্পনাকে আরও উস্কে দিয়েছে।
২০০৩ সালে চিলির আটাকামা মরুভূমির একটি পরিত্যক্ত গির্জার পিছনে পাওয়া যায় এক বিষ্ময়কর মানবকঙ্কাল। কঙ্কালটিকে বিষ্ময়কর বলার পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে।
প্রথমত কঙ্কালটি দৈর্ঘ্যে মাত্র ৬ ইঞ্চি। এছাড়াও কঙ্কালটির মাত্র ১০ জোড়া পাঁজর রয়েছে যেখানে একজন স্বাভাবিক মানুষের পাঁজর সংখ্যা ১২ জোড়া। কঙ্কালটির মাথা কিছুটা শঙ্কু-আকৃতির। আটাকামা মরুভূমির নামানুসারে কঙ্কালটির নাম দেওয়া হয় আটা।
স্ট্যানফোর্ডের প্রফেসর ডা: নোলান এর গবেষণার কেন্দ্রবিন্দুতে আনা হলে নোলান তার এক বিবৃতিতে বিবিসি কে বলেন, কঙ্কালটির হাড়ের আনুপাতিক পরিপূরক ছিল, নমুনাটি ছোট হওয়া সত্ত্বেও দেহটি পরিপক্ব, এই বৈষম্যটি বেশীরভাগ গবেষণার সৃষ্টি করেছিল, তাই আমরা বিশ্বাস করি যে, এক বা একাধিক মিউটেড জিন এই বৈষম্যের জন্য দায়ী ছিল।
এছাড়াও ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির হেলথ সায়েন্সের পরিচালক অটুল বুটেন বলেন, এটা জিনোমের মতো একটি বিশৃঙ্খল নমুনা, যাকে বিশ্লেষণ করে আমরা বর্তমান চিকিৎসা নমুনাগুলো পরিচালনা করতে পারি, যা একাধিক মিউটেশন দ্বারা পরিচালিত হতে পারে।
চিলির লা নোরিয়ায় ধনসম্পদ খুঁজতে গিয়ে এই অদ্ভুতদর্শন কঙ্কালটি খুঁজে পেয়েছিলেন অস্কার মুনো নামে এক ব্যক্তি। তার পর থেকেই ছয় ইঞ্চির এই কঙ্কাল নিয়ে রহস্য বেড়েছে।
কঙ্কালের আকৃতি এতটাই ছোট যে সেটিকে ছোট চামড়ার খাপে ভরে ফেলা যায়। ১৮ বছর পর সব রহস্যের পর্দা ফাঁস করলেন বিজ্ঞানীরা।
তাদের দাবি, কঙ্কালটি একটি শিশুর। আনুমানিক ৪০ বছর আগে সেটির মৃত্যু হয়। জিনগত সমস্যার জন্য শরীরের বিকৃত গঠন এবং হাড়ের বিকাশ ঘটেনি। বামনত্বের কারণেই এমন হয়েছে বলে মত বিজ্ঞানীদের।
সূত্র মতে, সান ফ্রান্সিসকোয় ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছেন যে, ওই কঙ্কালটি একটি মেয়ে শিশুর। ওই শিশুর মৃত্যু হয় ৪০ বছর আগে।
প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছিল, ওই শিশুটির বয়স ৬ থেকে ৮ বছর ছিল। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, সেটি একটি ভ্রূণ বা নবজাতক শিশু হতে পারে, যে জন্মের পরপরই মারা গেছে।
জন্মের পর পরই শিশুটির মৃত্যু হয়েছিল বলেও ধারণা তাদের। তবে ভিন্গ্রহের প্রাণী বলে যেজোরালো জল্পনা ঘুরে বেড়াচ্ছিল এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তাতে আপাতত জল ঢাললেন বিজ্ঞানীরা। তারা জানিয়েছেন, ওটা কোনও ভিন্গ্রহের প্রাণী নয়, সেটি মানবসন্তানের কঙ্কাল।
আটাকামা মরুভূমি হতে প্রাপ্ত এই কঙ্কালটি বিংশ শতাব্দীর এক অন্যতম রহস্য। প্রথমদিকে কেউ কেউ কঙ্কালটিকে অন্য গ্রহের প্রাণী কিংবা এলিয়েন মনে করে থাকলেও নানান গবেষণার পর এটি একটি ৬-৮ বছরের মানবশিশুর কঙ্কাল হিসেবে চিহ্নিত হয়। তবে এখনো কঙ্কালটিকে নিয়ে বিজ্ঞানীদের মনে নানান প্রশ্ন রয়েছে, যা এক রহস্যময়তার সৃষ্টির করে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫৫০
আপনার মতামত জানানঃ