দেশের ৮০% মানুষকে টিকা দিতে মোট ২৩০ কোটি ডলার প্রয়োজন। বাংলাদেশ বাজেট সহায়তা হিসেবে টিকা কেনার টাকা চায়। আর তাতে বিশ্বব্যাংক রাজি নয়। টিকা কেনার জন্য গত মার্চ মাসে ৫০ কোটি ডলার অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। সেই অর্থ এখনো নেয়নি বাংলাদেশ।
৯ মাস ধরে টিকা কেনার ৫০ কোটি ডলার পড়ে আছে, যা দেশীয় মুদ্রায় সোয়া ৪ হাজার কোটি টাকার মতো। বিশ্বব্যাংকের অনুমোদিত এই অর্থ সরকার টিকা কেনার পরিবর্তে এখন অন্য কাজে ব্যবহার করতে চায়। পুরো অর্থই বাজেট সহায়তা হিসেবে খরচ করার অনুমতি চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
সরকারি নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে ২৩০ কোটি ডলার প্রয়োজন। তবে এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে কবে নাগাদ টিকা দেওয়া সম্ভব হবে, সেই পরিকল্পনা নেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের।
আবার কোন কোন সূত্র থেকে টিকা আসবে, সে ব্যাপারেও বিশদ পরিকল্পনা নেই তাদের। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানান, বিশ্বব্যাংকের টাকা খরচের জন্য তারা একাধিকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিলেও তাতে সাড়া মেলেনি।
চলতি বছরের ১৮ মার্চ বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় বাংলাদেশকে টিকা কেনার জন্য ৫০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড পেন্ডামিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য ওই অর্থ অনুমোদন করা হয়।
বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় অনুমোদনের পর থেকে তা বরাদ্দ করে রাখা হয়। এর মানে হলো, বাংলাদেশের যখনই প্রয়োজন হবে, তখনই অর্থ ছাড় করতে পারবে। কিন্তু গত ৯ মাসে ওই বরাদ্দ থেকে একটি টাকাও ছাড় করা হয়নি, বরং দুই মাস আগে এই টাকা বাজেট সহায়তা হিসেবে পাওয়া অর্থের মতো খরচ করার অনুমতি চায় বাংলাদেশ। কিন্তু বিশ্বব্যাংক তাতে সাড়া দেয়নি।
উন্নয়নশীল দেশগুলোকে টিকা কেনায় সহায়তা করতে বিশ্বব্যাংক গত মার্চ মাসে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বিশেষ কোভিড তহবিল গঠন করে। এই তহবিল থেকে সহজ শর্তে জরুরি ভিত্তিতে ঋণ পাওয়া যায়। তহবিলটি থেকে সর্বোচ্চ অর্থ বরাদ্দ পাওয়া দেশগুলোর একটি হলো বাংলাদেশ।
ওই ঋণ-তহবিল অনুমোদনের আগে চার মাস ধরে কোন প্রকল্পে কীভাবে অর্থ খরচ হবে, তা নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের দর-কষাকষি চলে। সে অনুযায়ী ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড পেন্ডামিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ শীর্ষক প্রকল্পে ঋণ দেওয়া চূড়ান্ত হয়।
সে জন্য ওই অর্থ অন্য কোনো খাতে ব্যবহারের সুযোগ নেই বলে সংস্থাটি জানিয়ে দেয়। সাধারণত কোনো খাতের সংস্কার বা জরুরি প্রয়োজনে বাজেট সহায়তা দেওয়া হয়।
ওই প্রকল্পের মাধ্যমে ৫ কোটি ৪০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া যাবে। তাতে দেশের প্রায় ৩১ শতাংশ জনগোষ্ঠী টিকার আওতায় চলে আসার কথা। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের টাকা আনেনি বাংলাদেশ। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তত দিনে অর্থ ছাড় না করলে তা ফেরত যাবে।
বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে হলে ২৩০ কোটি ডলার লাগবে। এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক ও এডিবি অনুমোদন করেছে প্রায় ১৫০ কোটি ডলার। তবে কবে নাগাদ বিশাল জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনা যাবে, সে রকম কোনো লক্ষ্যমাত্রা নেই বাংলাদেশের।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া টেকসই হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে একটি দেশ কত দ্রুত ও কার্যকর উপায়ে নিজের জনগোষ্ঠীকে টিকা প্রদান করছে, তার ওপর।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) ও কোভ্যাক্স অনুমোদিত টিকা কেনার জন্যই বরাদ্দ থাকবে বিশ্বব্যাংকের অনুমোদিত অর্থ।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শিগগিরই বিশ্বব্যাংকের অর্থ খরচ করা হবে। ইতিমধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) টাকা খরচ করা প্রায় শেষ হয়েছে।
জানা গেছে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শিফার বাংলাদেশ সফরকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে এক বৈঠকে টিকা কেনার অর্থ ছাড় করার তাগিদ দেন। তখন হার্টউইগ শিফারকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই মুহূর্তে টিকা কেনার টাকার জোগান আছে। আগামী মার্চ-এপ্রিল নাগাদ বিশ্বব্যাংকের টাকা নেওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশে এখন কোভ্যাক্স বা বৈশ্বিক টিকা প্রাপ্তির জোট থেকে টিকা আসছে। পাশাপাশি চীন ও ভারত থেকে টিকা কেনা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত চীনা টিকাই বেশি এসেছে। তবে চীনের টিকা প্রস্তুতকারক সব কারখানা ডব্লিউএইচওর অনুমোদিত নয়। ডব্লিউএইচওর অনুমোদিত এমন কারখানায় তৈরি করা টিকা কেনায় অনুমোদন দেয় না বিশ্বব্যাংক।
বাংলাদেশ টিকা কেনার জন্য এডিবির কাছ থেকে ছয় মাসে ৮৯ কোটি ডলারের মতো নিয়েছে। এর পুরোটাই চীনের টিকা কেনায় খরচ হয়েছে। গত জুনে এডিবি ৯৪ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯৩০
আপনার মতামত জানানঃ