সাড়ে ছয় কোটি বছর আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে বিশাল দেহের বিভিন্ন প্রজাতির এক একটি ডাইনোসর। ডাইনোসর নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই জনমনে। বিজ্ঞানীরাও এ নিয়ে দিনের পর দিন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে উদ্ধার হয়েছে ডাইনোসরের জীবাশ্ম। উন্মোক্ত হয়েছে অনেক রহস্য। তবে মানুষ যে তাদের সম্বন্ধে প্রায় কিছুই জেনে উঠতে পারেনি, তা প্রমাণিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
পোল্যান্ডে শত শত ডাইনোসরের পায়ের ছাপের সন্ধান মিলেছে। ভূতত্ত্ববিদরা বলছেন, ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকা এসব পায়ের ছাপ থেকে ২০ কোটি বছর আগের জটিল বাস্তুসংস্থান আরও ভালোভাবে বোঝা সম্ভব হবে।
পোল্যান্ডের ন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ওয়ারসো থেকে ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে একটি খনিতে শতাধিক পায়ের ছাপ এবং হাড় খুঁজে পেয়েছে। এর মধ্যে সবথেকে বড় যে পায়ের ছাপ, সেটা ডাইনোসর কার্নিভোরাস প্রজাতির। এমনই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। জানা গিয়েছে প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ এই পায়ের ছাপ। যা থেকে প্রজাতিটির ত্বক সম্বন্ধেও ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
ভূতত্ত্ববিদ গ্রজেগর্জ নিজউইজকি বলেন, ‘ডাইনোসররা যে চিহ্ন রেখে গেছে তাতে তাদের আচরণ ও স্বভাব জানা যাবে… আমরা ডাইনোসরদের দৌড়ানো, সাঁতার কাটা ও বসে থাকার চিহ্ন পেয়েছি।’
সবচেয়ে বড় যে পায়ের ছাপটি পাওয়া গেছে সেটি কারনিভোরাস ডাইনোসরের। ৪০ সেন্টিমিটার (১৫.৭ ইঞ্চি) দীর্ঘ এই ছাপটি। এছাড়া অনেকগুলো ছাপ থেকে ডাইনোসরের ত্বক ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছে।
ভূতত্ত্ববিদ গ্রজেগর্জ নিজউইজকি এক বিবৃতিতে জানান, কয়েক শ’ ডাইনোসরের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এগুলো অন্তত সাত প্রজাতির। আরও প্রজাতির ছাপ পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া তারা প্রাণী ও মাছের হাড়ের টুকরোরও সন্ধান পেয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, একইসময় অনেকগুলো তাৎপর্যপূর্ণ ইভেন্ট না ঘটলে এরকম স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় না। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন ৭ প্রজাতির ডাইনোসরের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এবং কয়েকশ’ ডাইনোসর সেখানে বিচরন করতো বলেও জানা গেছে।
পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিদায় নিয়েছে বহু আগেই। তবে অতিকায় প্রাণীটি নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। বিভিন্ন সময় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে উদ্ধার হয়েছে ডাইনোসরের জীবাশ্ম। উন্মোক্ত হয়েছে অনেক রহস্য।
বিশাল শরীর আর দাপুটে মেজাজ নিয়ে প্রায় ১৭ কোটি বছর পৃথিবীতে রাজত্ব করেছে ডাইনোসর। পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের প্রাগৈতিহাসিক অধিবাসী এবং বৈজ্ঞানিকদের অনুমান প্রভাবশালী প্রাণী এরা। প্রথম ডাইনোসরের বিবর্তন হয়েছিল আনুমানিক ২৩ কোটি বছর পূর্বে। কোটি কোটি বছর আগে তা বিলুপ্তও হয়ে গিয়েছে।
তবে একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ডাইনোসর নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। আগ্রহের শেষ নেই বিজ্ঞানী ও গবেষকদেরও। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের আরেক নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন। ব্রাজিল থেকে এই ফসিলটি আবিষ্কার করে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ডাইনোসরের এই প্রজাতিটি ৭ কোটি বছর আগে দক্ষিণপূর্ব আমেরিকায় ঘুরে বেড়াত।
এই ডাইনোসর প্রজাতির নাম ‘কুরুপি ইটাটা’। গবেষণার নেতৃত্বে যিনি আছেন তিনি জানান, এই ‘কুরুপি ইটাটা’ চতুষ্পদ ডাইনোসর, এর দৈর্ঘ ১৬ ফুট। পরীক্ষায় জানা গিয়েছে, এই ধরনের ডাইনোসরের পেশি ও হাড়ের সংস্থান থেকে বোঝা যাচ্ছে, এরা ভালরকম দৌড়ত।
২৩১ থেকে ২৪৩ মিলিয়ন (২৩.১-২৪.৩ কোটি) বছরের মধ্যে ডাইনোসরের প্রথম আবির্ভাব। ১৭.৭ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে এদের বিচরণ ছিল। পাখিসদৃশ ডাইনোসর ছাড়া ৬ কোটি ৫৫ লাখ বছর আগে এদের বিলুপ্তি ঘটে। সে সময় ঠিক কী ঘটেছিল, বিজ্ঞানীরা সে বিষয়ে পুরো একমত নন। কিন্তু এই বিলুপ্তির পেছনে উল্কাপাত বা গ্রহাণুর আঘাতকে বেশ বড় করে দেখা হয়। এ ছাড়া অগ্ন্যুত্পাত থেকে রাসায়নিক নিঃসরণ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্য কারণগুলোও বিবেচনা করা হয়।
ধারণা করা হয়, ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে অন্তত ১০-১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত গ্রহাণুর আঘাতের পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু গত বছর যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রিডিং ও ব্রিস্টলের বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের ফসিলের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, ওই উল্কাপাত বা গ্রহাণুর আঘাতের অন্তত ৫ কোটি বছর আগেই ডাইনোসরদের বিলুপ্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। গ্রহাণুর আঘাতে সেটি শেষ হয় মাত্র। পরিবর্তিত পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারার কারণেই ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল বলে তারা মনে করেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডাইনোসরের জন্মের সময় পৃথিবী ছিল উষ্ণ। কিন্তু দিনে দিনে পৃথিবী শীতল হয়ে আসতে শুরু করে। সমুদ্রের পানির উচ্চতাও নেমে যেতে শুরু করে। এর ফলেই ডাইনোসর বিলুপ্ত হতে শুরু করে। ডাইনোসরের সঙ্গে স্তন্যপায়ী প্রাণীর জন্ম অনেকটা একই সময়ে হলেও স্তন্যপায়ী প্রাণীরা শীতল পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০২
আপনার মতামত জানানঃ