সাধারণ অন্তঃসত্ত্বা নারীর তুলনায় করোনা আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বা নারীরা মাতৃত্বকালীন জটিলতা তৈরির ক্ষেত্রে ৮ গুণ বেশি ঝুঁকিতে থাকেন বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা যায়, করোনা আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বাদের ৪৬ শতাংশের মাতৃত্বজনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্ল্যানিং, মনিটরিং অ্যান্ড রিসার্চ অপারেশনাল প্ল্যানের সহযোগিতায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিনের (নিপসম) এ সংক্রান্ত একটি গবেষণার ফলাফল আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে।
কতটা ঝুঁকিতে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা?
রাজধানীর ৫টি হাসপাতালের ৮৯০ জন অন্তঃসত্ত্বার ওপর গত বছর এপ্রিল থেকে এ বছর এপ্রিল পর্যন্ত এই জরিপ চালানো হয়। তাদের মধ্যে কোভিড নেগেটিভ ছিলেন ৬৭৫ জন, পজেটিভ ছিলেন ২১৫ জন।
এ গবেষণা প্রসঙ্গে অবস্টেট্রিকাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অফ বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সাবেক সভাপতি প্রফেসর ডা. সামিনা চৌধুরী দ্য বলেন, ‘গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা যায় যে করোনাভাইরাসের সঙ্গে মাতৃত্বজনিত সমস্যার বিকাশের একটি যোগসূত্র আছে। সুতরাং, অন্তঃসত্ত্বারা করোনা আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’
সমস্যাগুলোর মধ্যে দেখা গেছে, প্রিটার্ম ডেলিভারি অর্থাৎ ৩৭ সপ্তাহের আগে সন্তান প্রসব হয়েছে ৭৮ দশমিক ৭৯ শতাংশের, মায়ের গর্ভে সন্তানের মৃত্যু হয়েছে ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ, অন্যত্র গর্ভধারণ হয়েছে ৪ দশমিক ০৪ শতাংশের।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, করোনা আক্রান্ত নারীর আগে থেকে স্বাস্থ্যগত জটিলতা থাকলে করোনা আক্রান্ত নন এমন অন্তঃসত্ত্বার তুলনায় তাদের মাতৃত্ব বিকাশে ঝুঁকি বেশি।
জরিপে অংশগ্রহণকারী অন্তঃসত্ত্বাদের মধ্যে যাদের আগে থেকে স্বাস্থ্যগত জটিলতা ছিল তাদের ৬২ দশমিক ৮ শতাংশের প্রতিকূল ফলাফল দেখা গেছে। তবে যাদের করোনা হয়নি এমন অন্তঃসত্ত্বাদের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়েছিল মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশের।
গর্ভস্থ শিশুর কি ক্ষতি হতে পারে?
কোভিড-১৯ নিয়ে আলাদা করে গবেষণা এখনো হয়নি। তবে ইনফ্লুয়েঞ্জা বা অন্য ধরনের করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য গর্ভপাত, শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া, অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেওয়া, জন্মগত ত্রুটি হওয়া বা উচ্চ তাপমাত্রার জ্বরের জন্য গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি, এমনকি মৃত্যু হতে পারে।
যেকোনো ধরনের কাশি, জ্বর হলে শুরুতেই চিকিৎসকের শরণাপণ্ন হলে পরবর্তী ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে।
মায়ের কাছ থেকে কি নবজাতক সংক্রমিত হতে পারে?
সংখ্যায় যথেষ্ট না হলেও গবেষণায় এসেছে যে কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত কোনো মায়ের কাছ থেকে কোনো নবজাতক জন্মগত সংক্রমণ নিয়ে জন্মায়নি এখনো।
গর্ভস্থ পানি (এমনিওটিক ফ্লুইড) বা বুকের দুধেও এর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
আক্রান্ত মা কি বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন?
এখন পর্যন্ত বুকের দুধে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। তাই আক্রান্ত মা নিশ্চিন্তে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। তবে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করে খাওয়াতে হবে।
হাত ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে ও মুখে মাস্ক পরতে হবে খাওয়ানোর সময়।
অন্তঃসত্ত্বাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নাজুক, তাই তাদের সচেতনতা বেশি দরকার। এ সময় জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। মার্কেট, মেলা, বিয়েবাড়ি ও গণপরিবহন এড়িয়ে চলুন। খুব প্রয়োজন না হলে ভ্রমণ করবেন না। অসুস্থ ব্যক্তির কাছে যাবেন না। বারবার হাত পরিষ্কার করুন। পশু–পাখি বা কাঁচা মাছ, মাংস ধরবেন না বা ধরলেও দ্রুত সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯০০
আপনার মতামত জানানঃ