কারোনাকালে অনেকের জন্য মনের ওপর ক্রমাগত চাপ সামলে নেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে৷ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, করোনার প্রথম বছরেই বিষন্নতাজনিত রোগ পাঁচ গুণ এবং উৎকণ্ঠাজনিত রোগ ১০ গুণ বেড়ে গিয়েছিল। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মহামারিতে বিশ্বব্যাপী হতাশা ও উদ্বেগের ঘটনা এক-চতুর্থাংশের বেশি বেড়েছে। নারী ও তরুণদের পাশাপাশি চিকিৎসকদের উপর এর প্রভাব বেশি পড়েছে।
এর আগে চলতি বছর মে মাসে ভারতের নয়া দিল্লির বাটরা হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে এক করোনা আক্রান্ত চিকিৎসকের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর আত্মহত্যা করেন দেশটির রাজধানীর আরেক চিকিৎসক। সেখানকার এক কোভিড হাসপাতালের রেসিডেন্ট ডাক্তার হিসেবে কর্মরত ছিলেন সেই ডাক্তার। নাম বিবেক রাই। অবসাদের কারণেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন এই চরম পথ, এমন দাবি ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (ইএমএ)-এর সাবেক প্রধান ড. রবি ওয়াংখেড়েকারের।
এবার লাশ গুনতে গুনতে ক্লান্ত বিপর্যস্ত এমন আতঙ্কের বার্তা লিখে স্ত্রী-সন্তানদের খুন করলেন ভারতের এক চিকিৎসক। সূত্র মতে, লাশ গুনতে গুনতে তিনি ক্লান্ত। করোনা সংক্রমণ থেকে স্ত্রী, সন্তানদের ‘বাঁচাতে’ তাদের খুন করলেন ওমিক্রন আতঙ্কে ত্রস্ত এই চিকিৎসক।
খুন করার আগে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিয়েছিলেন, ‘লাশ গুনতে গুনতে আমি ক্লান্ত। ওমিক্রনের সংক্রমণ থেকে কেউ রেহাই পাবে না। এমন পরিস্থিতির যাতে শিকার না হতে হয়, তাই ওদের মুক্তি দিচ্ছি।’
উত্তরপ্রদশের কানপুরের এই চিকিৎসকের এমন কাণ্ডে শিউরে উঠেছেন অনেকেই। পুলিশ সূত্রে খবর, স্ত্রী, সন্তানদের খুন করার পরই ভাইকে হোয়াটসঅ্যাপে এই বার্তা পাঠিয়েছিলেন ওই চিকিৎসক। চিকিৎসকের এ ধরনের বার্তা পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যান তার ভাই।
তিনি গিয়ে দেখেন একটি ঘরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন তার বৌদি। অন্য ঘরে ভাইপো-ভাইঝি। এর পরই তিনি পুলিশে খবর দেন। পুলিশ জানিয়েছে, স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে এবং দুই সন্তানকে হাতুড়ি দিয়ে মাথার খুলি ফাটিয়ে খুন করেছেন চিকিৎসক।
পুলিশকে চিকিৎসকের ভাই জানিয়েছেন, তার দাদা মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ওমিক্রন আতঙ্কেই কি খুন নাকি এর পিছনে অন্য কোনও রহস্য আছে। যদিও এই ঘটনার পর থেকে পলাতক চিকিৎসক।
তদন্তকারীরা চিকিৎসকের ঘর থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করেছেন। সেখানে তিনি খুনের কথা লিখেছেন। শুধু তাই নয়, ওমিক্রনের কথাও সেখানে উল্লেখ করেছেন তিনি। তদন্তকারীদের দাবি, ডায়েরিতে এটাও স্পষ্ট করে লেখা যে, ‘এখন থেকে আর লাশ গুনতে হবে না। করোনা সবাইকে মারবে।’
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের শেষের দিকে মেডিক্যাল কাউন্সিলের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনাকালে সব মিলিয়ে প্রায় ৪৩ শতাংশ ভারতীয় কোনো না কোনোভাবে মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। লকডাউনের সময় এর পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি। লকডাউনের পর শতাংশের হার কমলেও জটিল মানসিক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ