আজকের পৃথিবীতে জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সবই নিয়ন্ত্রণ করছে প্রযুক্তি। আগামীতে এর আওতার বাইরে থাকবে না কোনো কিছু। তবে হতে পারে নিজের আবিষ্কারের সামনে অসহায় হয়ে পড়বে মানুষ। নিজেদের উদ্ভাবন কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে, মরণফাঁদ হয়ে ঘিরে ধরছে আমাদের চারপাশ। নতজানু হয়েও লাভ হবে না। সময়ের ব্যবধানে এমন সব আবিষ্কার আসতে যাচ্ছে, যা আমাদের ধ্বংসের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
বিবর্তনের ধারা মেনে, প্রাণীদের মধ্যে পৃথিবীতে সবশেষে আগমন ঘটেছিল স্তন্যপায়ীর। অন্যান্য গোত্রের প্রাণীদের থেকে স্তন্যপায়ীদের আলাদা করে দিয়েছিল তাদের মস্তিষ্কের গঠন। তারপর যত সময় এগিয়েছে তত বেড়েছে সেই মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও।
এবার এই শ্রেষ্ঠতম প্রাণী মস্তিষ্ককেও রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সম্প্রতি এমনটাই ঘোষণা করল গুগল। জানাল, তাদের নতুন এআই আর্কিটেকচার কাজ করবে হুবহু স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মস্তিষ্কের মতো।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নতুন কোনো বিষয় নয়। প্রযুক্তির দৌলতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ঢুকে পড়েছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও। মানুষের কথাকে ফোনের টাইপ করা শব্দে পরিণত করা কিংবা প্রাণীর শব্দ শুনে চিহ্নিত করা— এসব কিছুই নির্ভর করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপরে। তবে প্রতিটা ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য সংযুক্ত থাকে ভিন্ন ভিন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, প্রাণী চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়ায় একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আওয়াজ শনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয়। অন্যটির কাজ, সংশ্লিষ্ট প্রাণীটির ছবি শনাক্তকরণ। এই প্রতিটা কাজের জন্যই পৃথক পৃথকভাবে প্রশিক্ষণও দিতে হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে।
তবে গুগলের এআই আর্কিটেকচারের সাম্প্রতিক মডেল এই সমস্ত কাজই করতে পারবে একা হাতে। এমনকি নিজের ‘বুদ্ধি’ কাজে লাগিয়ে কোনো নির্দিষ্ট কাজের প্রশিক্ষণকে ব্যবহার করতে পারবে সম্পূর্ণ অজানা কাজের ক্ষেত্রে। ঠিক স্তন্যপায়ীদের মস্তিষ্কের মতোই সে স্বশিক্ষিত এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
শুধু শেখার ক্ষেত্রেই নয়, বর্তমান প্রচলিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাগুলোর তুলনায় দ্রুত কাজও করতে পারবে এই নতুন প্রযুক্তি। গবেষকরা জানাচ্ছেন, মানুষের মস্তিষ্কের মূল উপাদন হল নিউরোন বা স্নায়ুকোষ। তবে মস্তিষ্কে অসংখ্য স্নায়ুকোষ থাকলেও, তারা একত্রে কাজ করে না। তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে আলাদা আলাদা কাজ। ঠিক সেভাবেই এই নতুন এআই-এর নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন গবেষকরা।
‘স্পার্শলি’-খ্যাত এই মডেলের বিভিন্ন অংশই আলাদা আলাদা কাজ করতে সক্ষম। আর তাদের মিলিত প্রচেষ্টাতেই সমস্ত বাধা অতিক্রম করে যাবে গুগলের নতুন এআই আর্কিটেকচার। যন্ত্রের ভুল তো বটেই, মানুষের চিহ্নিত করতে না পারা ভুলও অনায়াসেই শুধরে দিতে পারবে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
প্রযুক্তির দুনিয়ায় গুগলের এই আর্কিটেকচার যে বিপ্লব আনতে চলেছে তাতে সন্দেহ নেই কোনো। কিন্তু স্বশিক্ষিত এই যন্ত্র একদিন মানুষেরই মস্তিষ্ক কিংবা মানবজাতির অস্তিত্বকেই চ্যালেঞ্জ জানাবে না তো? এই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮০০
আপনার মতামত জানানঃ