করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় জনসচেতনতা নিশ্চিতে অভিযান পরিচালনা করছে সরকার। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চলছে এসব অভিযান। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমনকি সামাজিক দুরত্বও নিশ্চিত করা হচ্ছে না। এতে করে উল্টো ঝুঁকি বাড়ারই আশঙ্কা। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে যে অভিযান শুরু হয়েছে, সেটি জরুরি। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি ও শৃঙ্খলা বজায় না থাকলে কাজে আসবে না কিছুই। যেখানে সেখানে অভিযান না চালিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও তৃণমূল পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করে এলাকাভিত্তিক অভিযানের উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
পশ্চিমা বিশ্বে যখন করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ের আঘাত, তখন দ্বিতীয় ধাক্কা দেখা দিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় শুরু থেকেই নানা নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। তবে তা কার্যকর সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে সংশ্লিষ্টদের কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল কোর্ট নিয়ে অভিযান চালাচ্ছে র্যাব, ঢাকা জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন। মূলত মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিতেই মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন।
অভিযান চলাকালে সাধারণ মানুষের মাঝে মাস্ক বিতরণের পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে জরিমানাও করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে জরিমানা মূল লক্ষ্য নয় জানিয়ে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু জানান, মাস্ক না পরায় সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ৩০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোই মূল লক্ষ্য তাদের। তবে এসব অভিযানের সময় লক্ষ্য করা যায় সচেতনতা না মেনেই মাস্ক বিতরণ করেছেন র্যাব সদস্যরা। এমনকি নিয়ম না মেনেই অনেক মানুষকে মাস্ক পরিয়ে দিতেও দেখা যায়।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মোশতাক হোসেন স্টেটওয়াচ ডটনেটকে বলেন, ‘সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহৃত শুধুমাত্র চিকিৎসা ক্ষেত্রে। এই মাস্ক বিতরণ করায় অপচয় হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মাঝে ৩ স্তর বিশিষ্ট কাপড়ের মাস্ক বিতরণ করতে হবে।’ তিনি বলেন, যত্রতত্র অভিযান না চালিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে, সেখানকার কর্মীদের মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের দায়িত্ব দিতে হবে। সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, রোগী শনাক্ত ও আইসোলেশান নিশ্চিতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক উদ্যোগ নিতে হবে বলেও জানান, ডা. মোশতাক।
কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে জোর দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে সরেজমিনে দেখা যায়, সরকারের এসব অভিযানের সময় তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। অভিযানের চালোনোর কর্মসূচি তুলে ধরতে গণমাধ্যমকে জানায় সংশ্লিষ্টরা। সাংবাদিকদের ক্যামেরা ও আইন শৃঙ্খলার সদস্যদের দেখে সবসময় মানুষের ভিড় জমে যায়। এই অবস্থায় মানুষের সাথে মানুষের দুরত্ব রাখাতো দুরুহ, ধাক্কাধাক্কিও ঘটে থাকে হরহামেশা। এতে ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। একইসাথে করোণাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতার নামেও চলছে সমাবেশ। অনেক সভা-সমাবেশে কোন ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে মাস্ক বিতরণের অভিযান কতটুকু ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে স্টেটওয়াচের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন রাখা হয় অভিযান পরিচালনাকারীদের কাছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পারসিয়া সুলতানা প্রিয়াংকা এর জবাবে বলেন, ব্যক্তিপর্যায়ে প্রতিটি মানুষকে সচেতন হতে হবে। গণমাধ্যমকর্মীদেরও সচেতন হওয়ার আহ্বান তার। তবে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকেই গণমাধ্যমকর্মীদের এসব কর্মসূচি প্রচারের অনুরোধ করা হয় সবসময়। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে এসব কর্মসূচি আয়োজনের কোনো ভাবনা নেই সংশ্লিষ্টদের। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, রাজধানীর রাস্তাঘাট ও দোকানপাটে পরিচ্ছন্নতা ও সর্বস্তরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার লক্ষ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা চলমান থাকবে।
করোনাভাইরাস থেকে বিশ্ব কবে পুরোপুরি মুক্ত হবে তা নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরাও। কেবল স্বাস্থ্যবিধি ও সতর্কতা নিশ্চিতের মাধ্যমে এই মহামারির সঙ্গে লড়াই চালিয়ে নেয়া যেতে পারে বলে মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে এক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্বটাই বেশি। সরকারকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। তাহলেই কেবল তারা জনগণের কাছে স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক দায়িত্বশীল আচরণ দাবি করতে পারে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
সামিয়া/২০২০
আপনার মতামত জানানঃ