বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক স্থগিত হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ২৯ নভেম্বরের পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সে মতেই আয়োজক বাংলাদেশ প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু শেষ সময়ে এসে ভারতীয় প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশগ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করায় তা স্থগিত হয়ে গেছে। দুই দেশের তরফে করনাভাইরাসকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। তবে বৈদেশিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বিষয়টিকে সহজভাবে দেখছেন না।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উঁচু মাপের বন্ধুত্বের বার্তাবরণের মধ্যেই দুই দেশের পরস্পরের প্রতি অভিযোগও আছে বেশ কিছু। সেই সঙ্গে আছে কিছু অবিশ্বাস ও সন্দেহ। ফলে শক্ত দেখালেও সম্পর্কটা আসলে নড়বড়ে। তাই বিশ্ব রাজনীতির উত্থান-পতনে পারস্পরিক এই সম্পর্ক দ্রুতই টলে ওঠে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বৈঠক বাতিলের বিষয়টি বাংলাদেশ-চীনের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নতির জেরে বাংলাদেশের ওপর ভারতের চাপসৃষ্টির অংশ হতে পারে।
একাংশ বিশ্লেষক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়াটা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের শাসনক্ষমতাকে একটা চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ ট্রাম্পের অমনোযোগের মধ্যে চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশ সরকারের ওপর রুষ্ট হতে পারে, এমন ধারণাকে হয়তো কাজে লাগাতে চাইছে ভারত। বাংলাদেশ সরকারকে চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে আরো চাপপ্রয়োগের পথে হাঁটছে তারা। বাইডেনের বিজয় এক্ষেত্রে তাদের সুবিধা করে দিয়েছে। এখন বৈঠক বাতিল করে তারা সামনেই অনুষ্ঠিতব্য দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশকে চাপে ফেলে দিয়েছে। এটা বেশি সুবিধা আদায়ের উদ্দেশ্যে করা হতে পারে।
জানা গেছে, ২৫ নভেম্বর ২০২০, বুধবার দিল্লির পাঠানো অপারগতাপত্র ঢাকার হস্তগত হয়েছে। ওই পত্রে ‘অনিবার্য কারণে’ বৈঠকটি স্থগিতের অনুরোধ করা হলেও বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি। বৈঠক সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা এখন পর্যন্ত এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খোলেননি। তবে অনানুষ্ঠানিক সূত্রগুলো দাবি করেছে আগামী মাসের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে ভার্চুয়াল বৈঠক হবে। দুই প্রতিবেশি দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ওই বৈঠকের প্রস্তুতিতে ঢাকা ও দিল্লি উভয় পক্ষের ব্যস্ততা রয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে দিল্লির প্রতিনিধিরা হয়তো এই মুহুর্তে ঢাকা সফর করতে চাইছেন না। তাদের তরফে বৈঠকে অংশগ্রহণে অনীহা দেখানোর পর আয়োজক ঢাকা বৈঠকটি স্থগিত করেছে। তবে ভিন্ন বক্তব্যও মিলেছে। সরকারের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বলছে, ৩ মাস ধরে দুই প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ভার্চ্যুয়াল সামিটের প্রস্তুতি চলছে। ওই প্রস্তুতির সঙ্গে স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক স্থগিতের সম্পর্ক খুবই কম।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় বাংলাদেশ ও ভারতে রোগটির প্রকোপ বাড়ছে। সেই বিষয়টি হয়তো ভারতীয় প্রতিনিধি দল শেষ সময়ে এসে বিবেচনায় নিয়েছে। আর এ জন্য তারা ফিজিক্যাল সফরে আসতে চাইছেন না। এমন মত পররাষত্র মন্ত্রণালয়ের একজন আমলার। তবে বিশ্লেষকরা এক্ষেত্রে সন্দেহের কারণ খুঁজে পাচ্ছেন। দুই দেশের সম্পর্ক দুই সরকারের তরফে বরাবরের মতোই উন্নতির শিখরে বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে এর মধ্যেই গত বছর ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রীয় সফর ও বৈঠক বাতিল হয়। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক যে ভালো নেই, সেটা শুরুতে দুই সরকার অস্বীকার করলেও অল্প দিনের মধ্যেই নানা দ্বন্দ্বের কথা বেরিয়ে আসে।
মিই/আরা/১৩৫০/১৬০৮
আপনার মতামত জানানঃ