মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে পশ্চিমবঙ্গে ধরাশায়ী বিজেপি। তাহলে কি পশ্চিমবঙ্গ থেকেই বিজেপির বিদায় পর্ব শুরু হল? শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা ভারতে একই চিত্র। বিজেপির সাজানো পাশার দান উল্টে দিতে শুরু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত শনিবার ভারতের ১৩টি রাজ্যের লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভা মিলিয়ে ২৮টি আসনে উপনির্বাচন হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার চার আসনসহ ওই দিন আরও তিন রাজ্যের তিন লোকসভা আসনে উপনির্বাচন হয়। রাজ্য তিনটি হলো হিমাচল, মধ্যপ্রদেশ এবং কেন্দ্রশাসিত রাজ্য দাদরা ও নগর হাভেলি।
তৃণমূলের কাছে ধবলধোলাই
পশ্চিমবঙ্গের চার আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে বিপুল ভোটে হেরেছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে তৃণমূল প্রকোপে লণ্ডভণ্ড হলো বিজেপি। গত মার্চ-এপ্রিলের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যটির ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২১৩টিতে জিতেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি পায় ৭৭টি আসন।
এরপর প্রার্থীর মৃত্যু, দলত্যাগ, দলবদলে বিধানসভার সাত আসন শূন্য হয়। সেসব আসনের মধ্যে তিন আসনে গত ৩০ সেপ্টেম্বর উপনির্বাচন হয়। অপর চার আসনে উপনির্বাচন হয় ৩০ অক্টোবর। সব আসনেই জয়ী হন তৃণমূলের প্রার্থীরা। দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরে বিপুল ব্যবধানে জেতেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মার্চ-এপ্রিলের বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর চব্বিশ পরগনার খড়দহ আসনে বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিল ৬১ হাজার ৬৬৭ ভোট। আর উপনির্বাচনে গতকাল মঙ্গলবারের ফলাফলে সেই ভোট কমে হয়েছে ২০ হাজার ২৫৪। ভোট ৩৩.৬৭ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১৩.০৭ শতাংশ।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার গোসাবা আসনে বিজেপি যেখানে ৮২ হাজার ১৪ ভোট পেয়েছিল। এবার উপনির্বাচনে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪২৩। ভোট ৪১.৮৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯.৯৫ শতাংশে।
এছাড়া কোচবিহারের দিনহাটা আসনে গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৩৫ ভোট, সেখানে এবার উপনির্বাচনে পেয়েছে ২৫ হাজার ৪৮৬ ভোট। ৪৭.৬০ শতাংশ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ১১.৩৩ শতাংশে।
আর শান্তিপুর আসনে যেখানে বিজেপি মে মাসে পেয়েছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৭২২ ভোট, সেখানে উপনির্বাচনে পেল ৪৭ হাজার ৪১২ ভোট। নেমে গেল ৪৯.৯৪ শতাংশ থেকে ২৩.২২ শতাংশে।
গোটা ভারতেই একই চিত্র
গত ৩০ অক্টোবর ভারতে ১৩ রাজ্যে লোকসভার তিন আসন ও বিধানসভার ২৫ আসনে উপনির্বাচন হয়। লোকসভার তিন আসনের মধ্যে হিমাচলের মান্ডিতে কংগ্রেস, মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়ায় বিজেপি এবং দাদরা ও নগর হাভেলিতে শিবসেনা জয়ী হয়েছে।
অন্যদিকে বিধানসভার ২৫ আসনের মধ্যে বিজেপি ৯ আসনে জয় পেয়েছে। এ ছাড়া কংগ্রেস ৮, তৃণমূল ৪ এবং বাকি ৪টিতে জিতেছে অন্য রাজনৈতিক দল। এ ফলাফলের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বলছে, বিজেপির সময় ফুরিয়ে আসছে। ভবিষ্যতে বিজেপিবিরোধী ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো আরও শক্তিশালী হবে।
উপনির্বাচনের ফল ঘোষণার পর বিজেপি শিবিরে প্রচণ্ড উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে বিজেপিবিরোধী তৃণমূলের পালে হাওয়া লেগেছে, তাতে মনে করা হচ্ছে, সেই হাওয়া গোটা দেশ থেকে বিজেপির উৎখাত ঘটাতে পারে।
মমতার কাছেই মোদির হার
ভারতে নোট বাতিল, প্রথম লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের হাহাকার, করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ে অক্সিজেনের অভাব, দেশজুড়ে মৃত্যুর মিছিল, ফের লকডাউনের হাতছানির মধ্যে নরেন্দ্র মোদির ঘুম কেড়ে নিয়েছেন মমতাময় পশ্চিমবঙ্গ।
২০২৪-এর লোকসভা ভোটকে লক্ষ্য করেই প্রথমে এগোতে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী ঐক্যের কথা বলে সব অবিজেপি দলগুলিকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আবার সেই অবস্থান থেকে সরে আসতে দেখা যাচ্ছে তাকে।
এখন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী দাবি করতে শুরু করেছেন বিজেপিকে ভারত ছাড়া করার ক্ষমতা একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসেরই রয়েছে। কংগ্রেস সেটা করতে পারেনি। কংগ্রেস ব্যর্থ হয়েছে।
এদিকে আবার তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন বিরোধী ঐক্য হলে নেতৃত্বে থাকবেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। কারণ গোটা দেশে এখন আওয়াজ উঠেছে দেশকি নেত্রী ক্যায়সি হো মমতা দিদি জ্যায়সি হো। এই নীতিতেই এখন এগোচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫১৩
আপনার মতামত জানানঃ