বন্ধুক হাতে সৌদি তরুণীদের কল্পনাও করাও বেশ কষ্টসাধ্য। সেখানে লাইসেন্সধারী বন্দুক প্রশিক্ষক হিসেবে কাউকে দেখতে পারাটা অবশ্যই বিস্মিত হওয়ার মতো ঘটনা। এমনই এক সৌদি নারীর নাম মোনা আল-কুরাইস। তিনি দেশটিতে বেশ জনপ্রিয়ও।
বন্দুকের প্রতি তার ভালোবাসা বেশ আগে থেকে। ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে শিকারে বের হয়েছিলেন মোনা। শিখেছিলেন কীভাবে বন্দুক ধরতে হয়। তখন থেকেই বন্দুকের প্রতি ভালোবাসা তার। একসময় বন্দুক নিয়ে শিকারে বেরোনো নেশায় পরিণত হয় তার।
সেই নেশাকে পাঁচ বছর আগে পেশায় পরিণত করেন এই সৌদি তরুণী। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন তিনি নিজেই একজন লাইসেন্সধারী বন্দুক প্রশিক্ষক।
রিয়াদের টপ গান ফায়ারিং রেঞ্জে বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণ দেন তিনি। অল্প সময়ের মধ্যেই সৌদি নারীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তার ক্লাস।
রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোনা বলেন, “কোচ ও রেঞ্জ সেফটি অফিসার হিসেবে নিজের নেশা ও শখের চর্চা করতে পেরে আমি বেশ খুশি।”
তিনি বলেন, “আশা করি আমি আমার অভিজ্ঞতা সৌদি মেয়েদের মাঝেও বিলিয়ে দিতে পারব। এতদিন যে কাজটি কঠিন বলে শুধু পুরুষদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল, এখন সেখানে প্রবেশে উদ্বুদ্ধ করতে পারব মেয়েদেরও।”
এখানেই শেষ নয় মোনার গল্পের। শুধু প্রশিক্ষক নন, শিকারী অস্ত্রে বিশেষজ্ঞ নির্মাতাদের বার্ষিক প্রদর্শনী সৌদি ফ্যালকনরি অ্যান্ড হান্টিং শোয়ের একজন প্রদর্শক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন মোনা।
মোকাবিলা করতে হয়েছে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার
রক্ষণশীলতার জন্য পরিচিত সৌদি আরবে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হচ্ছে ধীরে ধীরে। বর্তমানে বিচিত্র সব পেশায় যোগ দিয়ে কর্মযজ্ঞের অংশ হচ্ছেন নারীরা। তবে শুরুর দিকে পুরুষতান্ত্রিক পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে মোনাকেও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
একটা সময়ে অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া কোনো সৌদি নারী বাইরে বের হতে পারেন না কিংবা একা বাস করতে পারেন না। কিন্তু এখন আর সেই আইন নেই। দেশটিতে ২০১৮ সালে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া হয় এবং ২০১৯ সালে কোনো পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ দেয়া হয় নারীদের৷
নিজের প্রতিবন্ধকতা প্রসঙ্গে মোনা বলেন, “যে সমস্যাটি আমাকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে, সেটি হচ্ছে নারীদের সমালোচনা। ব্যাপারটি আমাকে অবাকই করেছে, কেননা আমি সমালোচনা আশা করছিলাম পুরুষদের কাছ থেকে।”
সৌদি সমাজে রক্ষণশীল নারীরা সাধারণত আরেকজন নারীর এই পেশায় অংশগ্রহণকে মেনে নিতে পারেন না। তবে মোনার আশা, নারীদের দৃষ্টিভঙ্গি ধীরে ধীরে বদলাবে এবং তিনি তাদেরকে অনুপ্রাণিত করতে সক্ষম হবেন। তিনি বলেন, “আমার লক্ষ্য একদিন অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করা।”
এসডব্লিউ/এসএস/১২০৫
আপনার মতামত জানানঃ