জুলিয়ান অ্যাসেঞ্জকে যদি গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে প্রত্যর্পণ করা হয়, তাহলে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা তার নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়াতেই কারাবাস ভোগ করতে পারবেন বলে ব্রিটিশ বিচারকদের বলেছেন মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
সূত্র মতে, ৫০ বছর বয়সী অ্যাসেঞ্জ বর্তমানে কড়া নিরাপত্তার মাঝে লন্ডনের বেলমার্শ কারাগারে আছেন। অ্যাসেঞ্জ গত ২ বছর ব্রিটেনের কারাগারে আছেন। ২০১৯ সালে মোরেনোর সরকার অ্যাসেঞ্জের আশ্রিত পদমর্যাদা বাতিল করে। এরপর এপ্রিলে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
গত জানুয়ারিতে অ্যাসেঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানান ব্রিটেনের এক নিম্ন আদালত। প্রসঙ্গত, এক দশক আগে গোপন মার্কিন সামরিক নথি ফাঁসের ‘অপরাধে’ উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতাকে সাজা দিতে চাইছে আমেরিকা।
নিম্ন আদালতের বিচারক ভ্যানেসা ব্যারেইটসার বলেন, বর্তমানে যুক্তরাজ্যের কারাগারে বন্দি অ্যাসেঞ্জকে আমেরিকায় পাঠালে তিনি মার্কিন জেলখানার বিরূপ পরিবেশে আত্মহত্যা করতে পারেন।
নিম্ন আদালতের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের পক্ষে একজন আইনজীবী লন্ডনের উচ্চ আদালতে আপিল করেন। তার দাবি, মার্কিন কারাগারের কঠিন পরিবেশে আত্মঘাতী হওয়ার মতো নাজুক মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারী নন অ্যাসেঞ্জ।
১৭৫ বছরের জেল!
মার্কিন আইনজীবীরা অ্যাসেঞ্জের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির ১৭টি অভিযোগ এনেছেন। এর মধ্যে একটি অভিযোগ হচ্ছে, হাজার হাজার গোপন সামরিক ও কূটনৈতিক নথি ফাঁসের মাধ্যমে কম্পিউটারের অপব্যবহার করা।
এসব অভিযোগের দায়ে অ্যাসেঞ্জের সর্বোচ্চ ১৭৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। যদিও মার্কিন আইনজীবী বলছেন, উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতাকে এই অভিযোগে সর্বোচ্চ ৬৩ মাস জেল খাটতে হবে।
মার্কিন সরকারপক্ষের আইনজীবী বলেছেন, মার্কিন কর্তৃপক্ষ কথা দিয়েছে যে বিচার শুরুর আগে অ্যাসেঞ্জকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাসম্পন্ন ‘সুপারম্যাক্স’ কারাগারে কিংবা নিঃসঙ্গ সেলে বন্দি রাখা হবে না। আর বিচারে যদি অ্যাসেঞ্জের কারাদণ্ড হয়, তাহলে তাকে তার নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়ায় সাজাভোগ করতে দেওয়া হবে।
তবে মার্কিন আইনজীবীরা অ্যাসেঞ্জের মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মহত্যার ঝুঁকিকে হালকা করে দেখানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অ্যাসেঞ্জের আইনজীবী এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড।
এ প্রসঙ্গে ফিটজেরাল্ড এক লিখিত বক্তব্যে বলেন যে, অ্যাসেঞ্জকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে তাকে অস্ট্রেলিয়ায় সাজাভোগ করতে দিতে এখনও রাজি হয়নি অস্ট্রেলিয়ান কর্তৃপক্ষ।
অ্যাসেঞ্জ গত ২ বছর ব্রিটেনের কারাগারে আছেন। তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের। ক্লাসিফাইড ইনফরমেশন ফাঁস করার জন্য ২০১০ সালে তাকে অভিযুক্ত করা হয়, যখন উইকিলিকস নির্যাতনের বিভিন্ন বিশদ তথ্য প্রকাশ করেছিল, যার মধ্য আফগানিস্তান এবং ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর দ্বারা চালানো সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধও ছিল।
যদি তাকে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তর করা হয়, তাহলে ১৭৫ বছরের সাজা হতে পারে তার। কিন্তু একজন ব্রিটিশ বিচারক তাকে হস্তান্তরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধকে আটকে দিয়েছেন।
ইকুয়েডরের নাগরিকত্ব
উল্লেখ্য, সাত বছর ধরে একুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নিয়ে থাকা অ্যাসেঞ্জকে ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার করে ব্রিটিশ পুলিশ। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক এই অ্যাসেঞ্জ পেন্টাগন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাখ লাখ সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস করে দিয়ে বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন।
এর আগে চলতি বছর জুলাই মাসে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসেঞ্জের নাগরিকত্ব বাতিল করে ইকুয়েডর। ইকুয়েডরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জুলিয়ান অ্যাসেঞ্জকে পাঠানো এক চিঠিতে নাগরিকত্ব বাতিলের কথা জানায় দেশটির বিচার ব্যবস্থা।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ইকুয়েডরের নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন জুলিয়ান অ্যাসেঞ্জ। যুক্তরাজ্যের আপত্তিতে তাকে নাগরিকত্ব প্রদান করে ইকুয়েডর। সুইডেনে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ থেকে বাঁচতে ২০১২ সালে পালিয়ে আসেন অ্যাসেঞ্জ। পরবর্তীতে ইকুয়েডর দূতাবাসে সাত বছর ধরে ছিলেন তিনি।
দীর্ঘ সময় পার হওয়ায় ২০১৯ সালের নভেম্বরে সুইডেন অ্যাসেঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধের তদন্ত বাতিল করে। অ্যাসেঞ্জের ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করছিল ইকুয়েডরের সঙ্গে তার বন্ধুত্বের উপর; যা ইতিমধ্যেই আর নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ
২০১০ সালে উইকিলিকস আলোচনায় আসে৷ তারা তখন ২০০৭ সালের একটি গোপন ভিডিও প্রচার করে, যেখানে বাগদাদে অ্যাপাচি হেলিকপ্টার ব্যবহার করে মার্কিন মিলিটারি ডজনখানেক মানুষকে মেরে ফেলে, যার মধ্যে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সংবাদকর্মী ছিলেন৷
এরপর উইকিলিকস মার্কিন কূটনীতির লাখ লাখ গোপন নথি প্রকাশকরতে শুরু করে৷ সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন থেকে শুরু করে সৌদি রাজপরিবারের সদস্যদের বিষয়ে নানান সমালোচনামূলক বার্তা, আফগান যুদ্ধের মার্কিন অপারেশনের নানা তথ্য ছিল৷
পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তচরবৃত্তিসহ ১৮টি অভিযোগ আনা হয়৷ যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বিচার করতে চায় সুইডেন৷ ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনে ইকুয়েডরের এম্বেসিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পান৷ ২০১৯ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়৷
এসডব্লিউ/এসএস/১৭৪৬
আপনার মতামত জানানঃ