সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হ্যাশট্যাগ মিটু লিখে দীর্ঘদিন ধরে যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের কথা অকপটে বলে আসছেন চীনের নারীরা। তা সত্ত্বেও দেশটির করপোরেট নেতারা ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থা কর্মস্থলে নারীদের যৌন নির্যাতন ও হয়রানি কমাতে এবং জেন্ডার সমতা বাড়াতে কার্যকর নীতি গ্রহণ বা বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চীনের ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবা, পরিবহন কোম্পানি ডিডি, মদ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কোয়েচো মাউতাইসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারীরা সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন।
চীনে কাজের পর অফিস পার্টির প্রচলন বহুদিনের। এসব পাটিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মদ্যপানের একরকম অলিখিত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু কাজের জায়গায় বহুদিন ধরে চলা এই সংস্কৃতি এখন চীনা জনগণের কাঠগড়ায়।
চীনের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি কোম্পানি আলিবাবার এক অফিস পার্টিতে এক নারী কর্মচারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর থেকে কর্পোরেট জগতে ক্ষমতাধরদের আচরণ নিয়ে বিস্তার কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাখ লাখ চীনা নাগরিক মদ্যপানের জন্য অফিস কর্মীদের ওপর জবরদস্তি করার এই ‘বিষাক্ত সংস্কৃতির’ অবসান দাবি করছেন।
প্রসঙ্গত, প্রযুক্তি জায়ান্ট আলিবাবার একজন সিনিয়র ম্যানেজারের বিরুদ্ধে মদ্যপানে অচেতন এক অধস্তন কর্মচারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর চীনের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর পার্টিতে বেসামাল মদ্যপানের যে সংস্কৃতি, তা তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।
ঐ কোম্পানির একজন নারী কর্মচারী তার ১১-পাতা জোড়া অভিযোগপত্রে বলেছেন, কোম্পানির এক বিজনেস ট্রিপে গিয়ে রাতভর এক মদের পার্টিতে অচেতন হয়ে পড়লে তিনি ধর্ষণের শিকার হন। তার এই দীর্ঘ অভিযোগপত্রটি চীনা সোশ্যাল মিডিয়া উইবোতে ভাইরাল হয়ে যায়।
আলিবাবার ঐ নারী কর্মচারী অভিযোগ করেন, ব্যবসা সম্পর্কিত এক ডিনার পার্টিতে তার ঊর্ধ্বতনরা তাকে জোর করে প্রচুর মদ পান করান। । পরে সকালে তার হোটেল রুমে ঘুম থেকে উঠে দেখেন তিনি নগ্ন। আগের রাতের ঘটনা তিনি মনে করতে পারেননি। পরে হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটে ঐ নারী দেখেন, তার ম্যানেজার ঐ রাতে চার বার তার হোটেল কক্ষে গেছেন।
আলিবাবা তাদের অভিযুক্ত ঐ ম্যানেজারকে বরখাস্ত করেছে। কিন্তু চীনা সরকারি কৌঁসুলিরা ঐ ম্যানেজারের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ করে দিয়েছেন। তাদের কথা, মদ পানে জবরদস্তি করা বড় কোনো অপরাধ নয়। চীনা পুলিশ জানিয়েছে অভিযুক্ত ঐ ব্যাক্তি তার শাস্তি হিসাবে ১৫ দিন আটক থাকবেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে নতুন করে আর কোনো তদন্ত হবে না।
চীনের আইনজীবী ও অধিকারকর্মীদের ভাষ্য, কর্মস্থলে নারীদের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যথোপযুক্ত উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ভুক্তভোগী নারীদের প্রশ্ন, কবে তাদের অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।
নারী কর্মীদের ওপর হয়রানি বন্ধে অর্থপূর্ণ নীতি গ্রহণে ব্যর্থতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাবমূর্তি ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষিত চীনা নারীদের এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলারও শঙ্কা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চীনের আলোচিত এক নারী অধিকারকর্মী বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠান নারী কর্মীদের ওপর হয়রানি বন্ধে নতুন কোনো নীতি গ্রহণ করেছে, এমনটা আমি শুনিনি। বরং যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা অনেকটা নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।’
চীনের অধিকারকর্মীরা বলছেন, যৌন হয়রানি বা নির্যাতনের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর নীরবতা, রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে অভিযোগগুলোকে গুরুত্ব না দেয়া ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে উল্টো স্পষ্টভাবে অভিযোগকারীদের দিকেই আঙুল তোলার কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের যন্ত্রণার কথা বলতে বাধ্য হচ্ছেন ভুক্তভোগী নারীরা।
এ ছাড়া আদালতের শুনানি ও পুলিশি তদন্তে স্বচ্ছতার অভাব থাকায় যোগাযোগমাধ্যমে বিচারের দাবি করা ছাড়া গত্যন্তর দেখছেন না তারা।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৩৪
আপনার মতামত জানানঃ