জলহস্তী বৃহৎ প্রাণী। প্রাণীরা সাধারনত জলে, স্থলে এবং আকাশে পরিভ্রমণ করে বেড়ায়। এদের মধ্যে কিছু প্রাণী আছে যাদের উভচর প্রাণী হিসাবে গণ্য করা হয়। তেমনি প্রাণীদের তালিকায় জলহস্তী রয়েছে। এরা দেখতে অনেক বৃহৎ আকৃতির এবং জলে ও ডাঙ্গায় উভয় জায়গায় এরা বাস করে। এ কারণে এদের উভচর প্রাণী বলা হয়। বর্তমানে চিড়িয়াখানাতে গেলে এদের সহজেই দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া এরা বনে বাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে এটাই স্বাভাবিক।
আজ থেকে ১৫ লাখ বছর আগেও পৃথিবীতে জলহস্তী ঘুরে বেড়াত। প্রাগৈতিহাসিক যুগের এক জলহস্তীর দাঁত সম্প্রতি খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। ওই দাঁত পরীক্ষা করে তারা জানতে পেরেছেন, আমাদের ধারণারও অনেক আগে অর্থাৎ প্রায় ১৫ লাখ বছর আগে যুক্তরাজ্যজুড়ে জলহস্তীরা ঘুরে বেড়াত।
পাশাপাশি জলহস্তীর ওই দাঁত প্রাচীনকালের জলবায়ু সম্পর্কে নতুন তথ্য দেবে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। সায়েন্স এলার্টের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অফ লেস্টারের জীবাণুবিদ নিল অ্যাডামস টুইটবার্তায় বলেন, ‘বিলুপ্ত হিপোপটেমাস অ্যান্টিকুয়াস প্রজাতির জীবাশ্মের সঙ্গে দাঁতটির মিল পাওয়া গেছে।’
যুক্তরাজ্যে একসময় অতিকায় পশমাবৃত ম্যামথ, কেইভ লাওন, পশমাবৃত গণ্ডার, সিংহাকৃতির হায়েনা, বিশাল জলহস্তীর মতো প্রচুর বণ্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য ছিল। এখন শুধু রেড ডিয়ারই দেশটিতে দেখা যায়।
৩ হাজার ২০০ কেজি ওজনের প্রাগৈতিহাসিক জলহস্তী এখনকার জলহস্তীর চেয়ে আকারে দ্বিগুণ। যুক্তরাজ্য থেকে শুরু করে গ্রিস, জার্মানি ও ফ্রান্সে এসব প্রজাতির জীবাশ্ম পাওয়া যায়।
ইংল্যান্ডের সামারসেট কাউন্টিতে পাওয়া দাঁতটি অন্যান্য জলহস্তীর দাঁতের সঙ্গে তুলনা করেন জীবাণুবিদ অ্যাডামস ও তার সহকর্মীরা। এটি ১৫ লাখ থেকে ১০ লাখ ৭০ হাজার বছর আগের এক জলহস্তীর বলে ধারণা তাদের।
অ্যাডামস বলেন, ‘ইংল্যান্ড থেকে এই প্রথম জলহস্তীর জীবাশ্ম পাওয়া গেছে, তা নয়; বরং ৭ লাখ ৫০ হাজার বছরের বেশি পুরোনো জলহস্তীর জীবাশ্মপ্রাপ্তি এটাই প্রথম।’
বিজ্ঞানীদের ভাষ্য, বিলুপ্ত হিপোপটেমাস অ্যান্টিকুয়াস প্রজাতির জলহস্তী আজকের যুগের জলহস্তীর চেয়ে বেশি জলজ জীবনধারায় নির্ভরশীল ছিল। ওই প্রাণীর অন্যান্য জীবাশ্ম পরীক্ষা করে জানা যায়, তাদের অক্ষিকোটরের অবস্থান খুলির বেশ ওপরে। দেহের আকারের তুলনায় এদের পা ছোট। অতিকায় প্রাগৈতিহাসিক জলহস্তী প্রথম দিকে জলজ উদ্ভিদ খেত।
ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের প্যালিওন্টলজিস্ট ড্যানিয়েল স্ক্রিভ বলেন, ‘প্রকাণ্ড জলহস্তীর জীবাশ্মের খোঁজ পাওয়াই শেষ কথা নয়। জলহস্তীর জীবাশ্ম পরীক্ষা করে তাদের সম্পর্কেই শুধু জানা যায়, তা নয়; একই সঙ্গে প্রাগৈতিহাসিক আমলের জলবায়ু সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।’
ডাইনোসর বাদেও প্রাচীন পৃথিবীতে বিরাটকায় অদ্ভুত প্রাণীদের কোনো খামতি কোনোকালেই ছিল না। মানুষের উন্নতির সাথে সাথে, বিশেষ করে হোমো সেপিয়েন্স নামক মনুষ্য প্রজাতিটির কল্যাণে গোটা বিশ্বজুড়ে একে একে এই বিশাল প্রাণীগুলো বিলুপ্ত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে মনে হতে পারে, অল্প কয়েক লাখ মানুষ আর এমন কী ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে! কিন্তু প্রাণীজগতের খাদ্যশৃংখল অত্যন্ত নাজুক এবং পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া এই বিরাট প্রাণীগুলো প্রকৃতিগতভাবেই সংখ্যায় ছিল কম, জন্মহারও ছিল অত্যন্ত ধীরগতির। একটি তৃণভোজী প্রাণীর মৃত্যুর সাথে সাথে তার মাংসের ওপরে নির্ভরশীল মাংসাশী শিকারীর জীবনেও প্রভাব পড়ে। মানুষের কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের মতো কিছু কারণেও অনেক বৈচিত্র্যময় প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে এবং হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৫৭
আপনার মতামত জানানঃ