নিঁখোজ বৈমানিক রন আরাদকে খুঁজে পাওয়ার আশায় ইসরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ এক সাহসী অপারেশন চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
নাফতালি বেনেট সংসদে বলেন, দেশের সবথেকে স্থায়ী রহস্য সমাধান করতে তিনি এই মিশন সম্পর্কে আর কিছু বিস্তারিত বলতে পারবেন না।
তবে মিশনটি সফল হয়েছিল কিনা তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বেশ কিছু প্রতিবেদন আছে।
জানা যায়, ১৯৮৬ সালে এক হামলায় বোমাবর্ষণের সময় তার বিমান লেবাননে ভূপাতিত হবার পর থেকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরাদ নিঁখোজ আছেন এবং এরপর তাকে মৃত ধরে নেয়া হয়।
বিমানের পাইলটকে ইসরায়েলি বাহিনী উদ্ধার করে। কিন্তু লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরাদ, যিনি নেভিগেটর ছিলেন; তাকে লেবাননের অধিবাসী শিয়া মুসলিম মিলিশিয়া ‘আমাল’ বন্দি করে। তবে আরাদের কাছ থেকে তিনটি চিঠি এবং দুইটি ছবি আসে এরপর। কিন্তু দুই বছর পর তার অবস্থান শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয় ইসরায়েল।
বছর খানেক পর, ‘আমাল’ তার বিনিময়ে ২০০ লেবাননের অধিবাসী ও ৪৫০ ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি; পাশাপাশি ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দাবি করে। তবে এই আলোচনা বেশি দূর এগোয়নি কারণ ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দিদের বৈমানিকের বদলে মুক্তি দিতে রাজি হয়নি।
এরপর ২০১৬ সালের এক প্রতিবেদনে মোসাদ ও ইসরায়েলি মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স জানান, লেফটেন্যান্ট আরাদ সম্ভবত ১৯৮৮ সালে বন্দি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন।
তবে নেসেটের শীতকালীন অধিবেশনের স্বাগত বক্তব্যে গত সোমবার বেনেট বলেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরাদের ভাগ্য এবং অবস্থান জানতে মোসাদের নারী ও পুরুষ গুপ্তচরেরা গত মাসে একটি জটিল, বিষদ ও সাহসী অপারেশনে নিযুক্ত হন।
তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে এ প্রসঙ্গে এতটাই বলা সম্ভব।’
পরবর্তীতে, চ্যানেল টুয়েলভ মোসাদ প্রধান বার্নিয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে জানায় আভ্যন্তরীণ এক সভায় বলা হয়েছে, ‘এটা ছিল সাহসী, বিপদজনক এবং জটিল অপারেশন। কিন্তু এটা ব্যর্থ হয়েছে। আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে ওই প্রতিবেদনে প্রতিত্তোরে এক বিবৃতি ইস্যু করা হয় যে, এই মিশন ব্যর্থ হয়নি। বরং এটি সফল একটি অপারেশন; যা কিনা ব্যতিক্রমী লক্ষ্য অর্জনে পরিচালিত হয়েছিল।
এটি ব্যানেটের তথ্য জনসম্মুখে আনার সিদ্ধান্তেরও পিঠ বাঁচিয়েছে; পাশাপাশি এই অপারেশন সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘এই অপারেশন ‘আমাদের ছেলেদের ফিরিয়ে আনতে আমাদের প্রচেষ্টা ও প্রতিশ্রুতির বিশাল বিনিয়োগ এই অপারেশন’।
দ্য হারেটজ সংবাদপত্র প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সূত্র উল্লেখ করে জানায়, এই বক্তব্য মোসাদের সাথে সমন্বয় করে ঠিক করা হয় এবং বার্নিয়া একটি বার্তা ইস্যু করেন সংগঠনটির সদস্যদের জন্য; যেখানে তিনি বলেছিলেন যে অপারেশনটি ছিল সফল এবং গুরুত্বপূর্ণ।
ইসরায়েল হায়োম ইতোমধ্যে এক সিনিয়র নিরপত্তা কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, এটি ছিল ইসরায়েলের ইতিহাসের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং সফল মিশন; যা থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
এদিকে সূত্র মতে, ইসরায়েলি ওই বৈমানিককে খুঁজে বের করতে গত মাসে সিরিয়ার এক সেনা জেনারেলকে অপহরণ করে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ।
লন্ডনভিত্তিক আরবি সংবাদপত্র রাই আল-ইয়োম জানিয়েছে ওই জেনারেলকে অপহরণ করে ইসরায়েলি বাহিনী তাকে আফ্রিকার একটি দেশে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে নিরাপত্তার কারণে সিরীয় জেনারেলের নাম প্রকাশ করেনি সংবাদপত্রটি।
রন আরাদকে খুঁজে পেতে সিরীয় জেনারেলকে অপহরণের ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগে লেবাননের শিয়া গ্রুপ হিজবুল্লাহর বেশ কয়েক সদস্যকে আটক করে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করে ইসরায়েল। আরাদের সন্ধান দিতে তেল আবিব প্রায় এক কোটি ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করে রেখেছে।
২০১৪ সালে ইরান ও ইসরায়েল উভয় পক্ষের নিখোঁজ ব্যক্তিদের তথ্য বিনিময়ে চুক্তি স্বাক্ষর করলে রন আরাদের তথ্য পাওয়া নিয়ে আশা তৈরি হয়। তবে সেই প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়।
এদিকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরাদের পরিবার বলেন, তারা আশা করছে একদিন তারা জানতে পারবে যে রনের ভাগ্যে কী ঘটেছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১২১২
আপনার মতামত জানানঃ