ভূতুড়ে বিল’ কথাটার অর্থ কাউকে বলে দিতে হয় না। বিদ্যুৎ, গ্যাস বা পানির মতো অপরিহার্য নাগরিক পরিষেবা গ্রহণ করতে গিয়ে দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই ভূতুড়ে বিলের সঙ্গে পরিচিত। যা খরচ করা হয়েছে তারচেয়ে বাড়তি বা অতিরিক্ত বিলের এই ভোগান্তিকে তাই মানুষ ভূতুড়ে বিল বলে। কিন্তু করোনা মহামারীর কালেও যে দেশের মানুষকে ভূতুড়ে বিলের খপ্পরে পড়তে হবে সেটা বোধহয় কেউই আশা করেননি।
মহামারী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে একদিকে বিপর্যস্ত হয়েছে মানুষের জীবন-জীবিকা, অন্যদিকে ভোগান্তি বেড়েছে লাগামহীন ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের কারণে। মোটাদাগে যাকে বলে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’। বিদ্যুৎ বিভাগ ইউনিটের চেয়ে অতিরিক্ত বিল করে— এ অভিযোগ কমবেশি অনেক গ্রাহকেরই। তেমনি এক অভিযোগ থেকে জানা গেলো, এক গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল এসেছে এক লাখ টাকা। পরে সমন্বয়ের পর দেখা গেছে তার বিল ১৬২ টাকা। গোপালগঞ্জে এমন ভূতুড়ে বিল আসছে আরো অনেকের।
গেল কয়েক মাসে তীব্র লোডশেডিংয়ে যখন গ্রাহকরা অতিষ্ঠ, ঠিক তখনই মরার ওপর খাড়ার ঘা। সাধারণের চেয়ে বিল এসেছে ৪-৫ গুণ বেশি। কারো কারো ক্ষেত্রে তা লাখ ছাড়িয়েছে।
গোপালগঞ্জে এখন ভোগান্তির আরেক নাম বিদ্যুতের এই ভূতুড়ে বিল। ব্যবহারের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি বিল গ্রাহকদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো)।
গোপালগঞ্জে ওজোপাডিকোর গ্রাহক প্রায় ২৩ হাজার। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, ওজোপাডিকোর কোনো মিটার রিডার বাড়িতে না এসেই তৈরি করেছে এসব বিল। আগের বিলের কিছু অংশ বাদ থেকে যাওয়ায় মিটারে বেড়েছে ইউনিটের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বেড়েছে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম।
এ বিষয়ে অভিযোগ করেও সুরাহা পাচ্ছেন না বেশিরভাগ গ্রাহক। ভোগান্তি ও হয়রানি কমাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ এমনটিই প্রত্যাশা ভুক্তভোগী গ্রাহকদের।
এসব বিল সমন্বয় করা হচ্ছে বলে জানালেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী এস.এম মনিম বললেন, ডিসেম্বর থেকে প্রিপেইড মিটার চালু হলে এই ভোগান্তি আর থাকবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তির ভিত্তিতে বিতরণ কোম্পানিগুলো কাজ করে থাকে এবং একটা অর্থবছর ঘিরে তাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকে। শোনা যায়, অর্থবছরের শেষদিকে এসে কোম্পানিগুলো তাদের ঘাটতি মেটাতে গ্রাহকদের ওপর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল চাপিয়ে দেয়। হয়রানির আশঙ্কায় অনেক গ্রাহক এ নিয়ে আপত্তি করার সাহস দেখান না। ফলে ভূতুড়ে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল করে ওই কোম্পানিগুলো জনসাধারণের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়, যা বেআইনি। করোনা সংকটকালে এ প্রতারণা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
তারা বলেন, ভুতুড়ে বিল করার অভিযোগ বেড়েছে। একদিকে বছর বছর বিদুতের দাম বাড়ছে, আরেকদিকে নাগরিকরা ভূতুড়ে বিলের শিকার হচ্ছেন। তাহলে সেবাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে কী লাভ হলো সে প্রশ্ন করা জরুরি। এছাড়া, সরকারের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করা বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে গিয়ে ঘাটতি মেটাতে গ্রাহকদের ওপর বেশি বিল চাপিয়ে দেয় বলে যে অভিযোগ রয়েছে সে বিষয়েও তদন্ত হওয়া জরুরি।
তারা বলেন, বিদ্যুতের বাড়তি বিলের ভোগান্তি চলতে থাকলেও হয়রানির আশঙ্কা ও প্রতিকার না পাওয়ার হতাশা থেকে অনেক গ্রাহক আপত্তি করেন না। এই সুযোগে ভূতুড়ে বিল করেও বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয় গ্রাহকদের কাছ থেকে। জনস্বার্থে কাঠামোগত এই দুর্নীতির সুযোগ বন্ধ করার বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০০১
আপনার মতামত জানানঃ