গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯০ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতেই রয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৯ জন। সরকারি হিসাবে দেশে কেবল সেপ্টেম্বরে ৭ হাজার ৮৪১ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যা আগের মাসের চেয়ে ১৪৩ জন রোগী বেশি।
আগস্টে ৭ হাজার ৬৯৮ জন, জুলাইয়ে ২ হাজার ২৮৬ জন এবং জুন মাসে ২৭২ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যু হয়েছে ৬৭ জন। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে ২১ জন, আগস্টে মারা গেছেন ৩৪ জন এবং জুলাইতে ১২ জন। আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বাইরে নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪১ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৯৬০ জন। ঢাকার ৪৬টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে মোট ভর্তি রোগী আছেন ৭৫৬ জন। অন্যান্য বিভাগে বর্তমানে ভর্তি আছেন ২০৪ জন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৮ হাজার ১৯৭ জন। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ১৭ হাজার ১৭০ জন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছিলো ডেঙ্গু। সেবার সংক্রমণ বেশি ছিলো কিন্তু জটিলতা কম। সলিমুল্লাহ মেডিক্যালের রেজিস্টার ইউসুফ আলী জানালেন, এবার হয়েছে উল্টোটা। বেশিরভাগ ডেঙ্গু আক্রান্তই সংকটাপন্ন অবস্থায় চলে যাচ্ছে। শিশুদের ক্ষেত্রে জটিলতা আরও বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপের মধ্যে এবার ডেন-থ্রি সেরোটাইপের প্রভাব বেশি। কেউ যদি আগে আগে অন্য কোনো সেরোটাইপে আক্রান্ত হয়ে পরে নতুন সেরোটাইপে আক্রান্ত হলে জটিলতা বেশি হয়।
২০১৯ সালে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব হলে রোগী অনেক বেশি ছিল। কিন্তু রোগীদের অবস্থা এত খারাপ হতো না, জটিল হতো না। কিন্তু এবারে চট করেই রোগী খারাপ হয়ে যাচ্ছে, চিকিৎসা করার মতোও সময়টাও পাওয়া যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানান, অন্যান্য বারের তুলনায় এবার বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয়েছে ডেঙ্গুর। যেসব নির্দেশনা মেনে চিকিৎসা করা হতো সেসবে আনতে হচ্ছে পরিবর্তন। তাদের বিশ্লেষণ বলছে, এবারে ডেঙ্গু তার চরিত্র বদল করেছে, হয়ে উঠেছে ভয়ংকর ও মারাত্মক। এবারে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি এবং সময়ও পাওয়া যাচ্ছে অল্প। শুরুতেই একাধিক অঙ্গ (অর্গান) আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা এক জাতীয় দৈনিককে জানান, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায় ২০১৯ সালে। কিন্তু সেবার অন্তত পাঁচ থেকে ছয়দিনের আগে রোগীর অবস্থা জটিল হতো না। কিন্তু এবারে চট করেই রোগী খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এবারে আর এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম বিরল নয়, বরং বেশিরভাগ রোগীই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে ডেঙ্গুর এই ধরন নিয়ে।শিশুদের ক্ষেত্রে এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম, অর্থাৎ লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ও হৃৎপিণ্ডের জটিলতা তৈরি হতে সময় লাগছে না, দ্রুত রোগী শকে চলে যাচ্ছে, রক্তক্ষরণ হচ্ছে, বুকে-পেটে পানি জমছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, ২০১৯ সালে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব হলে রোগী অনেক বেশি ছিল। কিন্তু রোগীদের অবস্থা এত খারাপ হতো না, জটিল হতো না। কিন্তু এবারে চট করেই রোগী খারাপ হয়ে যাচ্ছে, চিকিৎসা করার মতোও সময়টাও পাওয়া যাচ্ছে না।
চলতি বছরে ডেঙ্গুর সবচেয়ে ক্ষতিকর ধরনগুলোর একটি ডেনভি-৩ – এ বাংলাদেশের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলেছেন, ডেঙ্গুর এই ধরনের কারণে দ্রুত রোগীদের রক্তের কণিকা প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে। সে কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের হাসপাতালে নিতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে এ কারণেই চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি, দিনকে দিন রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
এবছরের ডেঙ্গু রোগীরা দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই খুব খারাপ প্রেজেন্টেশন নিয়ে আসছে। যেমন পেটে-বুকে পানি চলে আসা, রক্তক্ষরণ হচ্ছে, অতিরিক্ত বমি হওয়া, লিভার-গলব্লাডার ইনভল্ভ হয়ে যাওয়ার কারণে রোগী খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু করোনাভাইরাস নয়, এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও করোনার মতোই ডেঙ্গু নিয়ে অধিকতর সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এখন একই সঙ্গে অনেকের মধ্যে করোনা ও ডেঙ্গু দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের রোগী দ্রুত বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যায়। বিশেষ করে শিশুদের জন্য ডেঙ্গু বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। সে কারণে তাদের সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই হেলাফেলা করা যাবে না। উপসর্গ বোঝা মাত্রই করোনার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু পরীক্ষা অবশ্যই করতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২০১৪
আপনার মতামত জানানঃ