ডেঙ্গুর বিস্তার মহামারির মত ছড়াতে শুরু করেছে। গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ ততটা না বাড়লেও এ বছর বিশেষত গত দু-তিন মাসে ব্যাপক হারে বেড়েছে ডেঙ্গু রোগী। এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ সারাদেশে ৩১৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে ও বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ৩১৩ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রায় ৮৪ শতাংশের বয়স ৪০ বছরের কম। সবচেয়ে কম আক্রান্ত ৪ দশমিক ৩ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি।
এর মধ্যে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ২৪৪ জন ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৫ জন রোগী ভর্তি হন। এ নিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন ১ হাজার ২৬০ জন।
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ছয়টি হাসপাতালকে ডেঙ্গুর জন্য ডেডিকেটেড (বিশেষায়িত) বলে দেওয়া হলেও হাসপাতালগুলোর সবক’টি এখনও চিকিৎসা শুরু করতে পারেনি। জনবল সংকটের সঙ্গে রয়ে গেছে যন্ত্রপাতির অভাব ও অবকাঠামোগত সমস্যা। এমনকি ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা শুরু করতে সরকারি অর্ডারই পায়নি ডেডিকেটেড ঘোষিত হাসপাতালগুলো।
একই সময়ে আক্রান্তদের মধ্যে শূণ্য থেকে ১০ বছরের ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের ১৯ দশমিক ১ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের ২২ দশমিক ৭ শতাংশ,৩১ থেকে ৪০ বছরের ১৬ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ৫১ থেকে ৬০ বছরের ৫ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সের রয়েছেন ৪ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, চলতি বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪ জন। গত ১ জানুয়ারি থেকে আজ রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৩ হাজার ৮৭৫ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১২ হাজার ৫৬১ জন।
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি মোট ১৩ হাজার ৮৭৫ জনের মধ্যে জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯ জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিনজন, মে’তে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন, জুলাইয়ে ২ হাজার ২৮৬ জন , আগস্টে ৭ হাজার ৬৯৮ জন এবং সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখ পর্যন্ত ৩ হাজার ৫১৯ জন রোগী ভর্তি হন।
স্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ছয়টি হাসপাতালকে ডেঙ্গুর জন্য ডেডিকেটেড (বিশেষায়িত) বলে দেওয়া হলেও হাসপাতালগুলোর সবক’টি এখনও চিকিৎসা শুরু করতে পারেনি। জনবল সংকটের সঙ্গে রয়ে গেছে যন্ত্রপাতির অভাব ও অবকাঠামোগত সমস্যা। এমনকি ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা শুরু করতে সরকারি অর্ডারই পায়নি ডেডিকেটেড ঘোষিত হাসপাতালগুলো।
তারা বলেন, বর্তমান সময়ে যারা স্বাস্থ্যের দায়িত্বে কাজ করছেন তারা কোনোভাবেই এর যোগ্য নন। তারা যা বলেন, তার সঙ্গে বাস্তবতার যোগ নেই। গণমাধ্যমের সামনে এলেই একটা কিছু বলতে হবে, তারা এমনটা ভেবে বসে আছেন বলেই আজ এ অবস্থা।
তারা বলেন, সরকার স্বাস্থ্যের জন্য টাকা ঢালছেন ঠিকই কিন্তু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের জন্য কোনো কাজেই আসছে না। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানান তারা।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/২২২০
আপনার মতামত জানানঃ