প্রকাশ্যে আসছে তালিবানের নৃশংস চেহারা। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করার পর তালিবানরা জানিয়েছিল যে ২০ বছর পূর্বের তালিবান আর এখনকার তালিবানের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। এখন তারা আর কট্টরপন্থী নয়, এখন তারা শান্তিকামী এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করবে। পশ্চিমাদের পাশাপাশি কিছু আফগান নাগরিকরাও স্বস্তি খুঁজে পাচ্ছিল তালিবানের এই অবস্থানে। তবে পাল্টে গেছে পাশার দান। দিনদিন বর্বর হয়ে উঠছে এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।
আফগানিদের বাড়িতে ঢুকে অত্যাচার, মহিলাদের মেরে ফেলার পরেও ধর্ষণ, শরিয়াহ আইন জারি করে মহিলাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া এবং যে সমস্ত আফগান নারগরিকরা আমেরিকার সাহায্য করেছিল বা আমেরিকার প্রশংসক তাদের খুঁজে বের করে হত্যা করার এক একটি ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে যে, ৯০-র দশকের তালিবান আর এখনকার তালিবানের মধ্যে শুধু ফারাক বছরের, আর কিছুই না।
আর এবার তালিবানিদের আরও একটি নৃশংসতার কাহিনী সামনে এসেছে। কৌতুক শিল্পী নাজার মহম্মদের পর এবার আফগানিস্তানের জনপ্রিয় লোকশিল্পী ফাওয়াদ আন্দ্রাবিকে হত্যা করার অভিযোগ উঠল বর্তমানের আফগান শাসক তালিবানদের বিরুদ্ধে। দেশের প্রাক্তন মন্ত্রী মাসুদ আন্দ্রাবি একটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন।
সূত্র মতে, আন্দারাব উপত্যকার খ্যাতনামা লোকসঙ্গীত শিল্পী ছিলেন ফাওয়াদ। স্থানীয় সূত্রের খবর, কৃষ্ণাবাদ গ্রামের বাসিন্দা ফাওয়াদকে শনিবার বাড়ি থেকে টেনে বার করে হত্যা করে তালিবান।
দেশের প্রাক্তন অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী মাসুদ দাবি করেছেন, গোটা আফগানিস্তান জুড়ে শিল্পীদের খুঁজে বার করে তাদের উপর হামলা চালাচ্ছে তালিবান। বিশেষ করে আন্দারাব অঞ্চলে তালিবানের হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে শিল্পীদের।
উল্লেখ্য, তালিবান দেশে শরিয়াহ আইন জারি করতে চায়। আর শরিয়াহ আইন অনুযায়ী অনেক কিছুই হারাম ইসলামে। সেই মতে গান-বাজনা করাও হারাম। এখন প্রশ্ন উঠছে যে, তাহলে কী সেই শরিয়াহ আইন পালন করানোর জন্যই লোকশিল্পীকে খুন করল তালিবানরা? ইসলাম কী এই হত্যাকে সমর্থন করে? নাকি এটা শুধু তালিবানের আদর্শগত অবস্থান সুসংহত করার একটি উপায়?
সম্প্রতি সঙ্গীত নিষিদ্ধ করে তালিবান মুখপাত্র জাবিউল্লা মুজাহিদ বলেছিলেন, “ইসলামে সঙ্গীত কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। সঙ্গীত থেকে তাই দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে আফগানদের।”
এর আগে গত জুলাইয়ে কৌতুকশিল্পী নাজার মহম্মদকে খুন করে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তালিবানের বিরুদ্ধে। যদিও তারা সেই খুনের ঘটনা অস্বীকার করেছে।
ভয়াবহ বিপদে কয়েক লাখ আফগান
কয়েক লাখ আফগানবাসীর ব্যক্তিগত তথ্য এখন তালিবানদের দখলে। আফগান সেনাবাহিনীকে দেওয়া আমেরিকার বায়োমেট্রিক হাতিয়ার ব্যবহার করেই এবার আফগানিস্তানের নাগরিকদের উপর নজর রাখতে শুরু করেছে তালিবান।
গত ১২ বছর ধরে আমেরিকার দেওয়া অত্যাধুনিক বায়োমেট্রিক যন্ত্রগুলিতে যে লক্ষ লক্ষ আফগান নাগরিকের হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল বা তর্জনির ছাপ ও ‘আইরিস’ (চোখের মণির চার দিকের অংশ)-এর ছবি রাখা রয়েছে, সেই সূত্র ধরেই তালিবান এবার আফগান নাগরিকদের নাম ঠিকানা জেনে নিচ্ছে।
এমনকি গত দু’দশক ধরে কারা আমেরিকা ও ন্যাটো জোট, আফগান সেনাবাহিনী ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র)-এর হয়ে কাজ করতেন, খবরাখবর দিতেন বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থাকা তালিবানদের সম্পর্কে, সেই সব তথ্য এবার তালিবান খুঁজে বার করতে পারবে অতি সহজে।
অনেকই মনে করছেন, এর ফলে বিপদ তাদের দোরগোড়ার কাছে এসে হাজির হয়েছে। তালিবান জঙ্গিরা তাদের খোঁজ পেলেই হত্যা করবে বলে ধারণা অনেকের।
এই তথ্য খতিয়ে দেখার কাজ করছে তালিবানদের স্পেশ্যাল ইউনিট আল ইশা। ব্রিগেড কম্যান্ডার নওয়াজউদ্দিন হক্কানি জানিয়েছেন, আল ইশা ব্যবহার করছে বায়োমেট্রিক স্ক্যানার। একসময় যা ব্যবহার করত মার্কিন সেনা।
ব্রিগেড কম্যান্ডার হক্কানি জানিয়েছেন, কাবুল-সহ গোটা আফগানিস্তান এখন তালিবানদের দখলে। এবার তালিবানদের কাজ হবে পাল্টা গোয়েন্দাগিরি করা।
এখানে প্রশ্ন উঠছে, তালিবানদের এই কাজ কারা শেখাল? এর পিছনে কি পাকিস্তানের হাত রয়েছে? তারাই কি তালিবানকে এই সব তথ্য সংগ্রহে সাহায্য করছে? ব্রিগেড কম্যান্ডার নওয়াজউদ্দিন হক্কানি এই ব্যাপারে সরাসরি মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।
তবে জানান, সব ক্ষেত্রেই পাকিস্তান বা অন্য কোনও দেশের সাহায্য নিতে হবে এমন কোনও কথা নেই। সংগঠনের মধ্যেই এমন অনেকে আছেন যারা এই সব বিষয়ে বেশ অভিজ্ঞ। প্রশিক্ষণ দেওয়ার পক্ষে তারাই যথেষ্ট।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫৩১
আপনার মতামত জানানঃ