ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থীর ওপর স্কুল বাথরুম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার একটি স্কুল পর্ষদকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৩ লাখ মার্কিন ডলার দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, নারী থেকে পুরুষে রূপান্তরিত গ্যাভিন গ্রিমের ওপর ছেলেদের বাথরুম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে গ্লস্টার কাউন্টি স্কুল। এরপর স্কুল কর্তৃপক্ষের এই নীতিমালার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে আদালতের দারস্থ হন গ্যাভিন। গ্যাভিনের পাশে দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংগঠন আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ)।
গ্রিম মামলা দায়ের করেন এই অভিযোগ এনে যে, স্কুল বোর্ড তার সমান সুরক্ষা অধিকারের পাশাপাশি শিরোনাম IX লঙ্ঘন করেছে, যেখানে ফেডারেল নীতি লিঙ্গ-ভিত্তিক বৈষম্যকে নিষিদ্ধ করে।
দীর্ঘ ছয় বছরের লড়াই শেষে গত জুনে সুপ্রীম কোর্ট স্কুল পর্ষদের বাথরুম নীতিমালা পুনর্বহালের আপিল খারিজ করে। ফলে, মামলার ব্যয় স্বরূপ প্রতিনিধি হিসেবে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নকে ১৩ লাখ মার্কিন ডলার দিতে হবে স্কুল পর্ষদকে।
এর আগে, নিম্ন আদালতের রায়ে স্কুলের নীতিমালাকে অসাংবিধানিক এবং বৈষম্যমূলক ঘোষণা করা হয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার স্কুল বোর্ড ডিস্ট্রিক আদালতের সামনে সংগঠনটির আইনি ব্যয়ভার প্রদানে সম্মত হয়।
মানবাধিকার সংগঠন এসিএলইউ-এর এলজিবিটিকিউ ও এইচআইভি প্রকল্পের সিনিয়র স্টাফ অ্যাটর্নি জোস ব্লক এক বিবৃতিতে বলেন, “এই সিদ্ধান্তে আসার জন্য ছয় বছর ধরে ব্যয়বহুল মামলা পরিচালনার কোনো প্রয়োজন ছিল না।”
গ্যাভিন গ্রিমের বয়স এখন ২২। এক বিবৃতিতে তিনি জানান, “এই ফলাফল অন্যান্য স্কুল ব্যবস্থাপনার কাছে শক্তিশালী বার্তা প্রেরণ করবে। তারা জানবে যে বৈষম্যমূলক আচরণ করে যুদ্ধে হেরে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। এর পরিণতিও হবে ব্যয়বহুল।”
গ্লস্টার কাউন্টি স্কুলের অ্যাটর্নি ডেভিড করিগান বোর্ডের তরফ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এসিএলইউ’এর মামলার ব্যয়ভার প্রদানের বিষয়টি জানায়। তবে, মামলার ক্ষতিপূরণ প্রদান সম্পর্কে স্কুল বোর্ড কোনো মন্তব্য করতে চায়নি। দীর্ঘ ছয় বছরে মামলা পরিচালনায় স্কুলটিকে কত টাকা খরচ করতে হয়েছে তা-ও জানা যায়নি।
স্কুল বোর্ডের আইনজীবী ডেভিড করিগান বলেছিলেন যে হাই স্কুল চলাকালীন তিনি মহিলা থেকে পুরুষে স্থানান্তরিত হওয়ার পরে স্কুল কর্মকর্তারা গ্রিমের সাথে শ্রদ্ধার সাথে আচরণ করেছিলেন, পুরুষ সর্বনাম ব্যবহার করার জন্য তার অনুরোধকে সামঞ্জস্য করে এবং তার নতুন নাম ধরে ডেকেছিলেন।
অন্যদিকে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের একজন অ্যাটর্নি জোশুয়া ব্লক বলেছেন, বোর্ড যখন অন্যান্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় গ্রিমের সাথে আলাদা আচরণ করত। তাকে কলঙ্কজনক এবং লাঞ্ছিত করা হয়েছিল। যে সুবিধাগুলি প্রত্যেকে ব্যবহার করে সেগুলি থেকে বাদ দেওয়া কলঙ্কজনক।
২০১৫ সালে বাথরুম পলিসির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন গ্যাভিন গ্রিম। হাইস্কুলে পড়াকালে নারী থেকে পুরুষ হওয়ার রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান গ্রিম। হরমোন থেরাপি ছাড়াও চেস্ট রিকন্সট্রাকশন করান তিনি।
জেন্ডার ডিসফোরিয়ার ট্রিটমেন্ট হিসেবে গ্রিমের রূপান্তরের বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন তার মা। সেখান থেকেই শুরু হয় এক নতুন যুদ্ধ।
প্রথমদিকে তাকে ছেলেদের রেস্টরুম ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে, বেশ কয়েকজন অভিভাবক ও ছাত্রের অভিযোগের ভিত্তিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ জৈবিক লিঙ্গ বা বায়োলজিকাল সেক্স অনুযায়ী বাথরুম ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়।
স্কুল বাথরুম এড়িয়ে চলায় গ্রিম মূত্রনালীর সংক্রমণে ভোগার কথা জানান। একইসঙ্গে, আত্মঘাতী চিন্তার কারণে তাকে হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি হতে হয়। এরপর গ্রিম মামলা দায়ের করেন।
কিন্তু, মামলাটি বিভিন্ন ফেডারেল আদালতে ঘুরতে থাকে। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনের সহায়তায় মামলাটি ফেডারেল টেস্ট কেসে পরিণত হয়।
ট্রাম্প প্রশাসন ওবামা শাসনকালের জেন্ডার পরিচয় অনুসারে শিক্ষার্থীদের বাথরুম বেছে নেওয়ার নির্দেশনা প্রত্যাহার করে। ফলে, ২০১৭ সালে মামলাটি সুপ্রিম আদালতে যাওয়ার কথা থাকলেও শুনানি বাতিল হয়।
২০১৯ সালে নরফোকের ইউএস ডিসট্রিক্ট আদালতে পুনরায় গ্রিমের মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ২০২০ সালে আপিল আদালতেও মামলার শুনানি হয়। দুই ক্ষেত্রেই আদালত গ্রিমের পক্ষে রায় দেন।
গত মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি করা তিন বিচারকের প্যানেল কখন রায় ঘোষণা করবে তা নির্দেশ করেননি। শুনানির পরে, গ্রিম বলেন, তিনি আশা করেন এই মামলা এবং অন্যরা ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করার পথ প্রশস্ত করে।
গ্রিম বলেন, “এখন যে ক্ষতটি প্রশমিত করা দরকার তা হল ট্রান্স সম্প্রদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়। বিশেষত সরকারী বিদ্যালয়ের ট্রান্স শিশুরা যারা এখনও প্রতিদিন এই ধরণের বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
“আমার কাছে বিজয় হল বাচ্চারা এখন তাদের জন্য উপযুক্ত বাথরুমটি ব্যবহার করতে পারবে।”
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৯৩০
আপনার মতামত জানানঃ