মসজিদটির ইমাম আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘অন্য মানুষের মতো তারাও আল্লাহর সৃষ্টি। কারও সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ ধর্মে নেই।’
ময়মনসিংহে মসজিদ বানিয়েছেন স্থানীয় ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়। নগরীর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ চর কালীবাড়ী এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে সরকারি জমিতে তারা টিনশেডের এই মসজিদ গড়ে তুলেছেন।
মসজিদটির নাম দক্ষিণ চর কালীবাড়ী আশ্রয়ণ জামে মসজিদ। চলতি মাসে মসজিদটি উদ্বোধন করা হয়। মসজিদটির জন্য বেশ কয়েকজন স্থানীয় ট্রান্সজেন্ডার নিজেদের সময়, শ্রম ও অর্থ দিয়েছেন।
সম্প্রদায়ের নেতা ২৮ বছর বয়সী জয়িতা তনু বলেন, ‘এখন থেকে কেউ ট্রান্সজেন্ডারদের মসজিদে নামাজ পড়ায় বাধা দিতে পারবে না। কেউ আমাদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে পারবে না।’
সোনিয়া নামের ৪২ বছর বয়সী আরেকজন বলেন, ‘জীবনে আবার মসজিদে নামাজ পড়তে পারব, সেটি স্বপ্নেও ভাবিনি।’
সোনিয়া ছোটবেলায় কুরআন তেলাওয়াত করতে পছন্দ করতেন এবং ধর্মীয় শিক্ষার জন্য মক্তবেও যেতেন, কিন্তু সবাই যখন বুঝতে পারেন যে তিনি ট্রান্সজেন্ডার, তখন থেকে তাকে আর মসজিদে ঢুকতে দেয়া হতো না।
সোনিয়া বলেন, ‘মানুষ আমাদের বলত, তোমরা ট্রান্সজেন্ডাররা কেন মসজিদে আসো? তোমাদের ঘরেই নামাজ পড়া উচিত, মসজিদে এসো না।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জন্য ছিল খুবই লজ্জার। তাই আমরা আর মসজিদে যেতাম না।
‘এখন এটি আমাদের মসজিদ। আর কেউ কিছু বলতে পারবে না।’
স্থানীয় ট্রান্সজেন্ডার কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আবদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘দেশে এমন মসজিদ এই প্রথম। আগেও একটি শহরে মসজিদ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তবে স্থানীয়দের প্রতিবাদে তা আর হয়ে ওঠেনি।’
এ ছাড়াও ট্রান্সজেন্ডারদের উদ্যোগে একটি কবরস্থানও তৈরি করা হয়েছে।
মসজিদটির ইমাম আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘অন্য মানুষের মতো তারাও আল্লাহর সৃষ্টি। কারও সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ ধর্মে নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মানুষ। কেউ পুরুষ, কেউ নারী, কিন্তু সবাই মানুষ। কুরআন আল্লাহ সবার জন্যই নাজিল করেছেন। তাই প্রত্যেকেরই প্রার্থনা করার অধিকার রয়েছে। কেউ কাউকে অস্বীকার করতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ট্রান্সজেন্ডারদের এই বিশ্বাস অন্যদের জন্য শিক্ষনীয় হতে পারে। আমি যতদিন হলো এ মসজিদে আছি, তাদের চরিত্র ও কর্ম দেখে মুগ্ধ হয়েছি।’
মসজিদটিতে ট্রান্সজেন্ডারদের পাশাপাশি স্থানীয় অনেকেই নিয়মিত নামাজ আদায় করেন।
তোফাজ্জল হোসেন নামের ৫৩ বছর বয়সী এক মুসল্লি জানান, ট্রান্সজেন্ডারদের সম্পর্কে তার ভ্রান্ত ধারণা ছিল। তাদের সঙ্গে ওঠা-বসার মাধ্যমে সেটি দূর হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘প্রথমদিকে তারা যখন আমাদের সঙ্গে থাকতে শুরু করলেন, তখন অনেকে অনেক কথাই বলতেন। কিন্তু আমরা পরে বুঝতে পেরেছিলাম যে, মানুষ যা বলছে তা সঠিক নয়। তারাও অন্য মুসলমানের মতো সৎ জীবনযাপন করেন।’
ভবিষ্যতে এ মসজিদটি আরও বড় করতে চান তনু, যাতে করে আরও বেশি মানুষ নামাজ পড়তে পারেন।
আপনার মতামত জানানঃ