ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে এত তাড়াহুড়ো আর অসচেতনতার কারণে রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয় নানাভাবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে ভুলটা হয় তা হলো একজনের রিপোর্ট আরেকজনকে দিয়ে দেয়া। এতে করে রোগ শনাক্তে গাফিলতি থাকায় ভুল চিকিৎসা করা হয়, অনেক সময় রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়।
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার সেবারহাট মেডিক্যাল সেন্টারের ভুল প্যাথলজি (ডায়াগনস্টিক) রিপোর্টের কারণে মো. সুজন (৩৩) নামের এক রোগী মৃত্যুঝুঁকিতে আছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভাই আবু নূর আহাদ প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্র থেকে জানা যায়, সেনবাগ উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের উত্তর মোহাম্মদপুর গ্রামের মাস্টার নূর ইসলামের ছেলে মো. সুজন অসুস্থ হলে স্থানীয় সেবারহাট মেডিক্যাল সেন্টারে মতিউর রহমান রুবেল নামে এক চিকিৎসককে দেখান। চিকিৎসক রোগ নির্ণয়ে টাইফয়েড ও ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ দেন। এতে গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) রোগী ওই মেডিক্যাল সেন্টারে রক্তের নমুনা দেন। পরীক্ষায় টাইফয়েড হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
ওই রিপোর্টের আলোকে চিকিৎসক রোগীর টাইফয়েডের চিকিৎসা শুরু করেন। তবে এতে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে রোগীর স্বজনরা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় নোয়াখালী সদরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে (গুডহিল) ভর্তি করান। সেখানেও ওই রোগীর টাইফয়েড ও ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। এরপর রোগীর স্বজনরা পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেডে টাইফয়েড ও ডেঙ্গু পরীক্ষা করান। সেখানে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। দীর্ঘ এক সপ্তাহ রোগীকে ওই হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করানো হয়। সুজন কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও, সেবারহাট মেডিক্যাল সেন্টারের ভুল রিপোর্টের কারণে বর্তমানে তার শরীরে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিয়েছে।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, সেবারহাট মেডিক্যাল সেন্টারের ভুল রিপোর্টের কারণে রোগীকে টাইফয়েডের চিকিৎসা শুরু করায় রোগীর স্বাস্থ্যের অবনতি হয়ে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন। সেবারহাট মেডিক্যাল সেন্টারের মালিক আবুল খায়ের বলেন, ‘কম্পিউটার অপারেটরের ভুলে টাইফয়েড শনাক্ত ও ডেঙ্গু নেগেটিভ রিপোর্ট প্রদান করা হয়েছিল।’
এর আগে ভূল নীলফামারীর ডিমলায় প্যাথলজির ভুল পরীক্ষায় গৃহবধূর গর্ভপাতের ঘটনা ঘটেছিলো। উপজেলা সদরের সরকারি হাসপাতালের গেটে গড়ে ওঠা মনি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নীলফামারী ডিমলা উপজেলা সদর ইউনিয়নের সরহাট গ্রামের শরিফুল ইসলামের স্ত্রী বন্যা আক্তার (২১) চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তার শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত ২২শে জুলাই মনি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্র্যাকটিসরত ডাক্তার শমসের আলীর কাছে চিকিৎসা নিতে গেলে ডা. শমসের আলী প্যাথলজিতে গর্ভধারণ পরীক্ষাসহ কয়েকটি পরীক্ষা করার জন্য মনি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রেরণ করেন।
বন্যা আক্তার চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকা সত্ত্বেও প্যাথলজি পরীক্ষায় মনি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্যাথলজির ভুয়া ডাক্তার একেএম আবদুর রাজ্জাক রাজ বন্যার গর্ভে কোনো সন্তান নেই মর্মে রিপোর্ট প্রদান করেন। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে ডা. শমসের আলী ব্যথা নাশকসহ বিভিন্ন রকমের ইনজেকশন চিকিৎসা পত্রে লিখে দেন। পরে মনি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী লিটন ইসলাম মানিক (৩৫) বন্যার শরীরে ইনজেকশনগুলো প্রয়োগ করে। ২ ঘণ্টা পর বন্যার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়।
এভা্বে রোগীদের ক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বন না করে রোগীদের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রানহানির ঘটনা ঘটলে এর সুণ্ঠু বিচার নিশ্চিৎ করা উচিৎ। না হলে এমন অসচেতনতা ঘটার পরিমান কমবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২৩১৮
আপনার মতামত জানানঃ