করোনা মহামারীতে বেহাল দশার মধ্যে একেকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেনো মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠেছে। অতিবৃষ্টি, বন্যা, তাপদাহের মত দুর্যোগের পাশাপাশি ভূমিকম্পের ঘটনাও ঘটছে।
গত শনিবার (১৪ আগস্ট) ক্যারিবিয়ান সাগর অঞ্চলের দ্বীপ দেশ হাইতির পশ্চিমাঞ্চলে বড় একটি ভূমিকম্প হয় যা পুরো ক্যারিবিয়ান অঞ্চলজুড়ে অনুভূত হয়েছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে কম্পনটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ২। যদিও ইউরোপিয়ান-মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) বলছে, কম্পনটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৬।
হাইতির কর্মকর্তারা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন যে, শনিবার ক্যারিবীয় দেশটিতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২৯৭ জনে দাঁড়িয়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার ৭০০ মানুষ আহত হয়েছে এবং অনেক মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছে। জীবিত কাউকে খুঁজে পেতে ধ্বংস্তুপের মধ্যে এখনও তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকারীরা। খবর বিবিসি।
ভূমিকম্পের ফলে হাইতির বসতবাড়ি, স্কুল, গির্জা ধসে গেছে। হাসপাতালগুলো আহত হওয়া মানুষে ভরে গেছে। সেখানেও প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহের প্রয়োজন ছিল।
নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্থানীয় একটি গির্জা অ্যাংলিকান চার্চের প্রধান আর্চডিকন আবিয়াদে লোজামা বলেন, “রাস্তাগুলি চিৎকারে ভরে গেছে। মানুষ তাদের প্রিয়জন কিংবা কোন সম্পত্তি, চিকিৎসা সহায়তা এবং খাবার পানি খুঁজছে।”
মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা- ইউএসজিএস জানায়, শনিবারের ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল সেন্ট লুই ডু সুড শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে। তবে কম্পন এর থেকে আরো প্রায় ১২৫ কিলোমিটার দূরের জনবহুল রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতেও অনুভূত হয়েছে।
হাইতির বেসামরিক সুরক্ষা সংস্থার প্রধান জেরি চ্যান্ডলার রবিবার বলেন, “দক্ষিণের লি কায়ে শহরে থাকা প্রায় ১৫০০ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো প্রায় ৩০০০ বাড়ি-ঘর। নিপসে ৮৯৯টি বাড়ি সম্পূর্ণভাবে এবং ৭২৩টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্র্যান্ডেআন্সে ৪৬৯টি বাড়ি ধ্বংস এবং ১৬৮৭টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
দরিদ্র দেশটিতে গত মাসে প্রেসিডেন্টের হত্যার পর রাজনৈতিক টানাপোড়েনে থাকার সময়েই নতুন করে আবার এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়লো। হাইতির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বিশেষ করে লি কায়ে শহরটির আশেপাশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরিয়েল অঁরি মাসব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে যতজনকে সম্ভব জীবিতদের উদ্ধার করা। আমরা জানতে পেরেছি যে, স্থানীয় হাসপাতালগুলি, বিশেষ করে লি কায়ের হাসপাতালগুলো আহত রোগী দিয়ে ভরে গেছে।”
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন যে, তিনি ইউএসএআইডি- এর মাধ্যমে “জরুরি মার্কিন সহায়তা” অনুমোদন দিয়েছেন।
জাতিসংঘও বলেছে যে তারা উদ্ধার কাজে সহায়তা করছে। প্রতিবেশী দেশ ডোমিনিকান রিপাবলিক খাদ্য এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। কিউবাও ২৫০ জনের বেশি ডাক্তার নিয়োগ করেছে। উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে রেডক্রসের প্যারামেডিকেল টিম।
ভূমিকম্পের পর আরও বেশ কয়েকটি আফটারশক অনুভূতি হয়েছে। ইউএসজিএস সতর্ক করেছে যে, ভূমিকম্পটিতে হাজার হাজার প্রাণহানি এবং আহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
২০১০ সালে হাইতিতে একটি ভূমিকম্পে দুই লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল এবং দেশের অবকাঠামো এবং অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও এখনটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৪১৪
আপনার মতামত জানানঃ