একদিকে আফগানিস্তানে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের যখন ফিরিয়ে আনতে শুরু করেছে ব্র্যাক এনজিও অন্যদিকে তখন কিছু বাংলাদেশি তালিবানের ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের হয়ে যুদ্ধ করতে যাচ্ছে আফগানিস্তানে।
ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দেশ থেকে তালিবানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য ইতিমধ্যে কিছু মানুষ আফগানিস্তানে হিজরত করেছে। আমরা ধারণা করছি, কিছু মানুষ ইন্ডিয়ায় ধরা পড়েছে। আর কিছু মানুষ হেঁটে বা অন্য উপায়ে আফগানিস্তানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।’
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে নিরাপত্তা বিষয়ক ব্রিফিংয়ে শনিবার এ কথা জানান তিনি।
ডিএমপি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যে প্রবণতাগুলো দেখছি তা হলো, আফগানিস্তানের যাওয়ার জন্য আহ্বান করা হচ্ছে, তালিবানদের পক্ষ থেকে। যারা তালিবানের ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধ করতে আফগানিস্তানে যাচ্ছে তারা দেশেও ছোট ছোট ঘটনা ঘটাচ্ছে’।
এদিকে আফগানিস্তানের ৩৪ প্রদেশের মধ্যে ১৫টির ক্ষমতা দখলে নেয়া তালিবানের সহিংসতা বাড়তে থাকায় সেখানে কর্মরত বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনছে ব্র্যাক এনজিও। বাংলাদেশি এই বেসরকারি সংস্থাটি গত উনিশ বছর ধরে আফগানিস্তানে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। মূলত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত সহায়তা, মানবিক সহায়তা ও খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যুতে সেখানে কাজ করে সংস্থাটি।
আফগানিস্তানে সংস্থাটির ৩০০০ কর্মীর মধ্যে ১৪ জন বিদেশি নাগরিক রয়েছে। এদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি বলে জানা যায় ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
ব্র্যাক সেখানে তাদের এনজিও’র হয়ে কর্মরত সব বিদেশি কর্মীদেরই গতকাল শুক্রবার (১৩ আগস্ট) থেকে ফিরিয়ে আনতে শুরু করেছে। বেশ কয়েকজন এরই মধ্যে রওয়ানা দিয়েছেন। আর যারা আফগানিস্থানের বাইরে ছুটি কাটাচ্ছিলেন, তাদের আপাতত কর্মস্থলে ফিরে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আফগানিস্তানে তালিবান ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এমন সিদ্ধান্ত নিলো ব্র্যাক।
ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক শামেরান আবেদের বরাত দিয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আফগানিস্তানে কর্মরত কর্মীদের ঝুঁকি নিরসন করে তাদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্র্যাক”।
তবে ব্র্যাকের তরফ থেকে জানানো হচ্ছে, আফগানিস্তানে তাদের কার্যক্রম চলবে। সেখানকার স্থানীয় কর্মীরাই চলমান প্রকল্পগুলো অব্যহত রাখবেন।
ব্র্যাক ছাড়াও আশা নামে আরেকটি এনজিওর কার্যক্রম পরিচালনা করতো আফগানিস্তানে। কিন্তু সংস্থাটি আগেই দেশটি থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলেছে বলে জানা গেছে। এমন সময়ে ব্র্যাকের এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হলো যখন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তাদের কূটনীতিবিদ ও নাগরিকদের বের করে আনার জন্য কাবুলে সৈন্য পাঠিয়েছে।
তালিবান দেশটির যত বেশি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেছে, সেই সঙ্গে বিদেশি নাগরিকরা দেশটি ছাড়তে শুরু করেছেন। আফগানিস্তানের স্থানীয় খবরাখবরের বরাতে জানা যায়, কানাডাও দেশটি থেকে তাদের নাগরিকদের নিরাপদে বের করে আনার জন্য সৈন্য পাঠাবে বলে মনস্থ করেছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, কাবুলে বাংলাদেশের কোন দূতাবাস নেই। পাশের দেশ উজবেকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ইস্যুগুলো দেখভাল করা হয়। তাদের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি সংস্থার বাইরে আর কোন বাংলাদেশি আছে কিনা, সেরকম কোন তথ্য তাদের জানা নেই।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৭২৭
আপনার মতামত জানানঃ