ফের ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় ভারতের হিমাচল প্রদেশে। হিমাচল প্রদেশের কিন্নরে ভূমিধসের পর দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংসাবশেষের নিচে আটকা পড়া কয়েকটি যানবাহনে অন্তত ৪০ জন চাপা পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, পাহাড়ধসে মাটিচাপা পড়া ওইসব মানুষের জীবিত থাকার সম্ভাবনা কম।
বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর পৌনে ১টার দিকে কিন্নরের রেকং পিও-সিমলা মহাসড়কে ভূমিধসের এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
জানা গেছে, পাহাড় থেকে প্রস্তরখণ্ড ভেঙে গড়িয়ে নিচের রাস্তা দিয়ে যাওয়া একটি বাসের উপর পড়ে। বাসটিতে ৪০ জনের বেশি যাত্রী ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে পুলিশ। দুই জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত হয়েছেন বাসের চালক ও তার সহকারী।
সংবাদসংস্থা সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে, বুধবার কিন্নরের রেকং পিও-সিমলা হাইওয়েতে দুপুর ১২টা ৪৫ নাগাদ হঠাৎই ধস নামে। রেকং পেও-সিমলা হাইওয়ের ভাবনগর থানা এলাকায় ধস নামার ঘটনাটি ঘটে। পাহাড় থেকে ভেঙে পড়ে বড় বড় পাথরের চাঁই। সেই সময় ওই পথ ধরে যাচ্ছিল হিমাচল প্রদেশ ট্যুরিজমের একটি বাস, একটি ট্রাক ও কয়েকটি ছোট গাড়ি। পাথরের ধাক্কায় বাস থেকে চালক ছিটকে পড়ে যান। বাসে কমপক্ষে ৪০ জন যাত্রী ছিলেন। আর তার তলায় চাপা পড়ে যায় একটি লরি, একটি বাস এবং বেশ কয়েকটি গাড়ি। বাস থেকে পড়ে যাওয়া ওই চালককে উদ্ধার করা হয়েছে, তার প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে। তবে পাহাড় থেকে ক্রমাগত পাথর গড়িয়ে পড়ায় উদ্ধারকার্য ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করছেন বিভিন্ন গাড়িতে আটকে থাকা যাত্রীরা। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে উদ্ধারকার্য। তবে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উদ্ধার তৎপরতা।
কিন্নরের ডেপুটি কমিশনার আবিদ হুসেন সাদিক জানিয়েছেন, বাসটি কিন্নরের রেকং পেও থেকে সিমলার দিকে যাচ্ছিল। ওই সময় ধস নামে। উদ্ধারকাজে নেমেছে ইন্দো-তিব্বতিয়ান সীমান্ত পুলিশ, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) ও স্থানীয় মানুষজন।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন যাত্রীবাহী ওই বাসটি ছাড়াও ধসে পড়া পাহাড়ের প্রস্তরখণ্ডের নিচে আটকা পড়েছে আরও এক ট্রাক ও অন্য আরও কিছু যানবাহনে থাকা আরোহীরা। বাসটির চালক ও তার সহকারীসহ সেখানে আটকে পড়াদের মধ্যে ছয় জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
সীমান্ত পুলিশের মুখপাত্র বিবেক পান্ডে জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে তিন ব্যাটেলিয়নের ২০০ সদস্যকে পাঠানো হয়েছে। পাহাড় থেকে পাথর এখনো পড়ছে। এ কারণেই এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন পুলিশ সদস্যরা। এলাকাটি অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।
হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্ধার অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছি। এনডিআরএফও আছে। আমরা জানতে পেরেছি একটি বাস ও একটি গাড়ি আটকে আছে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছি।’
পাহাড়ধসের পর মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুরের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সব ধরনের সহযোগিতা আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে।
ভারি ও তুমুল বৃষ্টির কারণে হিমাচল থেকে প্রায়শই এমন দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। গত কয়েক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি ভূমি ও পাহাড়ধস হয়েছে সেখানে। গত জুলাইয়ে কিন্নরের বাস্তেরিতে ভূমিধসে ৯ পর্যটকের মৃত্যু হয়েছিল।
তখন ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল, বড় বড় প্রস্তরখণ্ড ঝড়ের গতিতে নেমে আসছে। বিশালাকার একটি বোল্ডারের আঘাতে মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে দুই টুকরো হয়েছিল পাশের একটি সেতু। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সব তছনছ করে দিয়েছিল সেই পাহাড়ধস।
করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় সবে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছিল হিমাচল প্রদেশে। কিন্তু তারপরেই প্রকৃতির রুদ্ররূপ দেখাতে শুরু করে। ধর্মশালায় ভয়ঙ্কর হড়পা বান দেখা দিয়েছিল। মেঘ ফাটা বৃষ্টিতে ভয়াবহ সেই হড়পা বানের ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। তারপরেই একের পর এক ধসের ঘটনা। তাতে পর্যটকদের মৃত্যু ফের আতঙ্ক তৈরি করেছে। পর্যটকরা এখন হিমাচল প্রদেশ এড়িয়ে যেতে চাইছেন। এতে নতুন করে হিমাচল প্রদেশের অর্থনীতিতে ধাক্কা আসতে শুরু করেছে।
গত জুন মাস থেকে ১৩ টি ভয়াবহ ধসের ঘটনা ঘটেছে হিমাচল প্রদেশে। এর আগে এত ধস হিমাচল প্রদেশে দেখা যায়নি। গত বছর ১৬টি ধসের ঘটনা ঘটেছিল হিমাচল প্রদেশে। ১৭টি হড়পা বানের ঘটনা ঘটেছিল। জলবায়ুব পরিবর্তনের কারণেই এই ধরনের ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।
সম্প্রতি আইপিসিসির রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে ভয়ঙ্কর সব ঘটনা ঘটার ইঙ্গিত দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। পৃথিবীর তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু করেছে। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে একাধিক জায়গায়। ভারতের উপকূলবর্তী শহরগুলিতে বিধ্বংসী ঝড় বাড়ছে।
আইপিসিসির রিপোর্ট বলছে সমুদ্রের জলের উত্তাপ বৃদ্ধির কারণেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। আর ৮০বছর পর ভারতের উপকূলবর্তী একাধিক শহর সমুদ্রের নীচে চলে যাবে। সেই তালিকায় রয়েছে ভারতের ১২টি শহর। রয়েছে মুম্বই, কলকাতা, বিশাখাপত্তনম, চেন্নাই, কোচি-র মতো শহরগুলি। পৃথিবীর উত্তাপ বাড়তে শুরু করায় প্রমাদ গুণছে আবহাওয়াবিদরা। হিন্দুকুশ রিজিয়নের বিপদ সর্বাধিক বলে জানিয়েছেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৫৩
আপনার মতামত জানানঃ