টেলিযোগাযোগে গোপনীয়তা রক্ষা ও ফোনে আড়িপাতা-রেকর্ডিং বন্ধে সরকার কী উদ্যোগ নিয়েছে তা জানতে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। এ ছাড়া, রিটে ফোনে আড়িপাতা বন্ধের পাশাপাশি তা তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির এই আবেদন করেন।
রিট আবেদনকারী ১০ আইনজীবী হলেন, রেজওয়ানা ফেরদৌসী, উত্তম কুমার বণিক, শাহ নাবিলা কাশফী, ফারহাদ আহমেদ সিদ্দিকী, মোহাম্মদ নোয়াব আলী, মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল, মুস্তাফিজুর রহমান, জিএম মুজাহিদুর রহমান (মুন্না), ইমরুল কায়েস এবং একরামুল কবির।
রিটে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সচিব, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে।
ফোনালাপে আড়ি পাতা প্রতিরোধে আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) গৃহীত পদক্ষেপ জানতে চেয়ে গত ২২ জুন ১০ আইনজীবী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবরে আইনি নোটিশ পাঠান। নোটিশের জবাব না পেয়ে ওই ১০ আইনজীবীর পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আজ মঙ্গলবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দাখিল করেন।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, এর আগে গত ২২ জুন এ বিষয়ে আইনি নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কোনো জবাব না পাওয়ায় রিট করা হয়েছে।
রিটকারীদের আইনজীবী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সংলাপ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফোনালাপ, প্রয়াত সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার, ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীসহ ২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সংঘটিত ২০টি আড়ি পাতার ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে রিট আবেদনে।’
রিটে বলা হয়, সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে চিঠিপত্র ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা সংরক্ষণ নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ অধিকার সংবিধান কর্তৃক নিশ্চিত করা হয়েছে। অর্থাৎ সংবিধানের তৃতীয় ভাগে উল্লেখিত মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা সংরক্ষণ অন্যতম। ২০০১ সালের ১৬ এপ্রিল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা হয়। বিটিআরসি আইনের ৩০ (চ) ধারা অনুসারে টেলিযোগাযোগের একান্ততা রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা কমিশনের দায়িত্ব। কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে, এ ধরনের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা অহরহ ঘটছে। অথচ দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী কমিশনের দায়িত্ব হলো, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিশ্চিত করা। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ৭১ ধারা অনুযায়ী আড়ি পাতা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ অপরাধে দোষী ব্যক্তি দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা অনধিক পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অথচ কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কারও বিরুদ্ধে মামলা করেনি।
রিটে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চের দেওয়া রায়ে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়ে পর্যবেক্ষণ এসেছে। রায়ে বলা হয়, এ ক্ষেত্রে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ও সেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব সর্বাধিক। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণ তাদের দায়িত্ব। তারা আইনের বিধান ব্যতিরেকে ব্যক্তিগত যোগাযোগের তথ্য প্রদান করতে পারে না।
রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩০ (১) (চ) ধারা এবং সংবিধানের ৩৯ ও ৪৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। রুল হলে তা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কমিটি গঠন করে ফাঁস হওয়া ব্যক্তিগত ফোনালাপের উল্লিখিত ঘটনাগুলো তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
আড়ি পাতার ঘটনা বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে বহুল প্রচারিত এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। অথচ সর্বজনীন মানবাধিকার সনদপত্র, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী পৃথিবীর সব আধুনিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার স্বীকৃত ও সংরক্ষিত।
আড়ি পাতার ঘটনা বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে বহুল প্রচারিত এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। অথচ সর্বজনীন মানবাধিকার সনদপত্র, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী পৃথিবীর সব আধুনিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার স্বীকৃত ও সংরক্ষিত।
এমনকি বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে চিঠিপত্র ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা সংরক্ষণ নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ অধিকার সংবিধানের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে।
শিশির মনির বলেন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের ধারা ৩০(চ) অনুযায়ী, টেলিযোগাযোগের গোপনীয়তা রক্ষার দায়িত্ব এই কমিশনের। কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে যে, এ ধরনের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা অহরহ ঘটছে।
২০১৯ সালের ২৮ আগস্ট বিচারপতি মো. শওকত হোসাইন, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আবদুল মবিনের বৃহত্তর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে একটি রায় দেয়।
ওই রায়ে বলা হয়, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ও টেলিফোন সেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব সর্বাধিক। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণ তাদের দায়িত্ব। তারা আইনের বিধান ব্যতিরেকে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত যোগাযোগের তথ্য প্রদান করতে পারে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৪৪
আপনার মতামত জানানঃ