এবার ফেসবুকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার এবং একজন অভিভাবকের ফাঁস হওয়া ফোনালাপ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। ৪ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের অডিওতে অধ্যক্ষের সঙ্গে অভিভাবক ফোরামের নেতা মীর সাহাবুদ্দিন টিপুর কথা হচ্ছিল। এ সময় অধ্যক্ষ অভিভাবকদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন বলে অভিযোগ করেন এই অভিভাবক।
এই ফোনালাপে অধ্যক্ষকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হুমকি দিতে শোনা গেছে। যদিও ফাঁস হওয়া ফোনালাপকে ‘এডিট করা’ বলছেন অধ্যক্ষ কামরুন নাহার। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলছে।
ফোনালাপের সময় অধ্যক্ষ কামরুন নাহার এক পর্যায়ে একজন অভিভাবককে বলেন, ‘আমি বালিশের নিচে পিস্তল রাখি। কোনো বাচ্চা যদি আমার পেছনে লাগে আমি কিন্তু ওর পেছনে লাগবো, আমি শুধু ভিকারুননিসা না, আমি দেশছাড়া করবো।’
ঐ কথোপকথনে কামরুন নাহার বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যে আমি অফিস করি কি না করি কার বাপের কী? আমি রাজনীতি করা মেয়ে, আমি কিন্তু ভদ্র না।’
কামরুন নাহার ফোনালাপে আরো বলেন, ‘আমি বলে দিলাম, আমি শিক্ষক। আমি প্রিন্সিপাল। ঐ পোলা যদি আমার পেছনে লাগে আমি কিন্তু তার গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়বো।’
এ প্রসঙ্গে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুন নাহার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত সাত মাস আগে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আমি এ প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করার পর থেকে অভিভাবক ফোরামের কয়েকজন দলবল নিয়ে এসে অনৈতিক সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে আসছে। তাদের কথা না শুনলে আমি এখানে থাকতে পারবো না বলে হুমকি দেয়া হয়। দুইবার আমার অফিস রুমে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। রুমে প্রবেশ করে টেবিল চাপড়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। এমনকি আমাকে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে। তাতে আমি গুরুত্ব না দিয়ে নিয়মের মধ্যে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছি।’
‘এ বছর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির লটারির সময়ও ১২০ সিট খালি রয়েছে। এছাড়া কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। সবমিলিয়ে প্রায় ১৫০-৬০ সিট খালি আছে। মূলত সেগুলোতে অবৈধ ভর্তি বাণিজ্য করতে অভিভাবক প্রতিনিধিরা আমাকে অনেক আগে থেকে চাপ দিচ্ছে। আমি তাদের কথা না শোনাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা সুবিধাবাদি কিছু অভিভাবকদের নিয়ে আমাকে চেয়ার থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। যোগদানের দিনেও তারা আমাকে অফিস কক্ষে প্রবেশ করতে দেয়নি। পরে মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দায়িত্বে বসি।’
ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘সম্প্রতি একাদশ শ্রেণিতে একজনকে ভর্তির জন্য অভিভাবক মীর সাহাবুদ্দিন টিপু আমাকে চাপ দিয়ে আসছিলেন। তার কাজ করে না দেয়ায় আমার সঙ্গে তার ফোনালাপ এডিট করে যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে মীর সাহাবুদ্দিন টিপু বলেন, ‘অধ্যক্ষ আমার পূর্ব পরিচিত। এজন্য মাঝে মাঝে তার সঙ্গে আমার ফোনে কথা হতো। গত শুক্রবার শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের বিষয়ে তাকে আমি ফোন করি। এ সময় তিনি অভিভাবক প্রতিনিধি ও সাধারণ অভিভাবকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।’
এদিকে, ফাঁস হওয়া ওই অডিও ভিকারুননিসার দীর্ঘদিনের সুনাম ও ঐতিহ্যের ওপর আঘাত হেনেছে বলে মন্তব্য করছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সম্পৃক্তরা। এছাড়া গভর্নিং বডির সদস্যদের মতে, অধ্যক্ষ কামরুন নাহার এ বছরের প্রথম দিন যোগদান করার পর থেকে আর প্রতিষ্ঠানে আসেননি বললেই চলে। কেউ যদি তাকে স্কুলে আসার বিষয়ে অনুরোধ করেন, তিনি (কামরুন নাহার) সবাইকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
যদিও ভিকারুননিসার একাধিক শিক্ষকের অভিযোগ, এই প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু অভিভাবক ভর্তি বাণিজ্যসহ শিফট ও ব্রাঞ্চ পরিবর্তন করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে থাকেন। অভিভাবক প্রতিনিধিরাও নানা অজুহাতে অর্থ হাতিয়ে থাকেন। তবে দায়িত্ব নেয়ার পর এই প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে চলা এসব অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করে দেন অধ্যক্ষ কামরুন নাহার। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটি এবং অভিভাবক ফোরামের সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা অধ্যক্ষকে যখন-তখন অপমান-অপদস্থ ও গালিগালাজ করাসহ নানা হুমকি দিয়ে আসছিলেন।
প্রসঙ্গত, কামরুন নাহার শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। গত বছরের ২৯ ডিসেম্বরে তাকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। কামরুন নাহারের পূর্বেও এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারণে ঐ অধ্যক্ষকেও প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
অধ্যক্ষ ও অভিভাবক ফোরাম নেতার ঐ কথোপকথন নিয়ে বিব্রত ভিকারুননিসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এর মাধ্যমে ভিকারুননিসার দীর্ঘদিনের সুনাম ও ঐতিহ্যের ওপর আঘাত এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪১৫
আপনার মতামত জানানঃ