আফগানিস্তানে ক্রমে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে গৃহযুদ্ধ। দ্রুত কাবুল দখলের উদ্দেশ্যে তীব্র লড়াই শুরু করেছে তালিবান। পালটা হামলা চালাচ্ছে আফগান সেনাবাহিনীও। আর এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের খেসারত দিতে হচ্ছে নিরীহ মানুষকে।
পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা স্পষ্ট করে রাষ্ট্রসংঘের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, গত তিনদিনে আফগানিস্তানে নিহত হয়েছে ২৭ শিশু। আহত হয়েছে ১৩৬ শিশু।
এর আগে বিবিসি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে ২০০৫-২০১৯ সাল অব্দি ১৪ বছরে প্রতিদিন গড়ে ৫ জন শিশু নিহত বা আহত হয়েছে। জাতিসংঘের সূত্র মতে, এই সময়ে ২৬ হাজার ২৫ জন শিশু নিহত বা বিকলাঙ্গ হয়েছে যুদ্ধের কারণে।
তবে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের একটি রিপোর্ট উদ্ধৃত করে এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, আফগানিস্তানে শিশুদের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনা দ্রুত বাড়ছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত কান্দাহার, খোস্ত ও পাকতিয়া প্রদেশে গত তিনদিনে মৃত্যু হয়েছে ২৭ শিশুর।
মূলত, রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষের মাঝে পড়ে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে দেশটির শিশুরা। গত মাসে সবমিলিয়ে লড়াইয়ের জেরে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১ হাজার নিরীহ মানুষ।
সোমবার এক রিপোর্টে ‘ইউনিসেফ’ স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছে যে আফগানিস্তানে প্রতিদিন শিশুদের উপর নিপীড়নের মাত্রা বাড়ছে। ইউনিসেফের সোমবারের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গত তিন দিনে কান্দাহার, খোস্ত ও পাকতিয়া প্রদেশে ২৭ শিশু নিহত হয়েছে। ওই তিন অঞ্চলে ১৩৬ শিশু আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আফগানিস্তানে ইউনিসেফ কার্যালয়ের কর্মকর্তা সামান্থা মোর্ট বিবিসিকে বলেন, ‘আফগানিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই শিশুদের জন্য জঘন্যতম জায়গাগুলোর একটি, তবে গত কয়েক সপ্তাহে এবং বিশেষভাবে গত ৭২ ঘণ্টায় পরিস্থিতি অনেক বেশি বাজে ছিল।’
ভুক্তভোগী এক নারী ইউনিসেফকে জানান, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঘুমাচ্ছিল তার পরিবারের সদস্যরা। ওই সময় বোমার অংশবিশেষ এসে পড়ে তাদের বাড়িতে। এ থেকে সৃষ্ট আগুনে মারাত্মক দগ্ধ হয় তার ১০ বছরের ছেলে।
সংঘর্ষের মধ্যে অনেক শিশুকে তাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে বাইরে রাত্রিযাপন করতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় ইউনিসেফ সংশ্লিষ্ট সবাইকে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আল্লা ও ইসলামের নামে উন্মাদ জঙ্গিরা শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ কাউকেই ছাড় দেয় না। রাস্তার পাশে বোমা পুঁতে রেখে নিরীহ মানুষ খুন করে জঙ্গিরা।
সম্প্রতি আঁটসাঁট পোশাক পরায় এক তরুণীকে হত্যা করে তালিবান। একইভাবে, তালিবানদের ডেরায় বোমাবর্ষণ করার সময় প্রায়ই আম জনতার কথা মাথায় রাখে না সরকারি বাহিনী বলেও অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিনে দ্রুত আফগানিস্তানের বিশাল অংশ দখল করেছে তালিবান। এখন পর্যন্ত ছয়টি প্রাদেশিক রাজধানী দখল করার দাবি করেছে তালিবান। সবশেষ উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ সামাঙ্গানের রাজধানী আইবাক দখলে নিয়েছে তারা।
এর আগে উত্তরাঞ্চলীয় কুন্দুজ প্রদেশের রাজধানী কুন্দুজ, সার-ই-পুল প্রদেশের রাজধানী এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় তাখার প্রদেশের রাজধানী তালোকান দখল করে তালিবান। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তালিবানের হাতে শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ হারায় আফগান সরকারি বাহিনী।
তারও আগে শুক্রবার নিমরোজ প্রদেশের যারানয এবং শনিবার জাওযজান প্রদেশের রাজধানী শেবারগান দখল করে নেয় তালিবান। আফগান সেনার সঙ্গে যুদ্ধে একের পর এক বড় শহরের দখল নিচ্ছে তালিবান। উত্তরের বহু এলাকাই এখন তালিবানদের দখলে।
২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলা চালানো জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে তালিবানের সম্পর্কের জেরে আফগানিস্তানে সে সময় সামরিক অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো।
মিত্র বাহিনীর সম্মিলিত অভিযানে ওই বছরই আফগানিস্তানের ক্ষমতা থেকে তালিবানকে উৎখাত করা হয়। তালিবান উৎখাত হলেও আফগানিস্তানে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর অবস্থান করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোভুক্ত দেশের সেনারা।
চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই আফগানিস্তান থেকে সব সেনা সরাতে নিজেদের সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর থেকেই ফের নতুন করে আফগানিস্তান দখল নিতে শুরু করেছে তালিবানরা।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫৪৭
আপনার মতামত জানানঃ