মানুষের প্রাত্যহিক খাদ্যাভ্যাসে থাকা ১৫ প্রজাতির মাছে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণার (মাইক্রোপ্লাস্টিক) সন্ধান পাওয়া গেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের এক গবেষণায়। সম্প্রতি ‘অ্যাবান্ড্যান্স, ক্যারেক্টিরিস্টিকস অ্যান্ড ভেরিয়েশন অব মাইক্রোপ্লাস্টিক ইন ডিফারেন্ট ফ্রেশওয়াটার ফিশ স্পিস ফ্রম বাংলাদেশ’ শিরোনামে পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘সায়েন্স অব দ্যা টোটাল ইনভায়রনমেন্টে’ প্রকাশিত গবেষণায় এ তথ্য জানা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী সুমাইয়া জান্নাত থিসিসের জন্য এ গবেষণাটি পরিচালনা করেন। গবেষণার তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিভাগের অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক ও সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদা পারভিন।
গবেষণায় পাওয়া যে ১৫ প্রজাতির মাছে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা (মাইক্রোপ্লাস্টিক) পাওয়া গেছে সেগুলো হলো- কাইলবাউশ, বেলে, টেংরা, কই, বাটা, রুই, তেলাপিয়া, কমন কার্প, পাবদা, পুটি, রয়না, শিলং, বাইন, টাটকিনি ও বাছা। এর মধ্যে টেংরা, টাটকিনি ও রয়না মাছে প্লাস্টিকের পরিমাণ বেশি। মাছে প্লাস্টিক পলিমার হাই ডেনসিটি পলিথিলিন, পলিপ্রপিলিন পলিথিলিন কপোলিমার ও ইথিলিন ভিনাইল এসিটেটের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে। এসব প্লাস্টিক পলিমার দৈনন্দিন ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল, জুস, শ্যাম্পুর বোতল, প্লাস্টিকের ব্যাগ, কনটেইনার, প্লাস্টিক ও ফোমের জুতা এবং মোড়ক ইত্যাদি থেকে পরিবেশে প্রবেশ করে।
এতে আরও জানা যায়, মাছের পেটে উপস্থিত প্লাস্টিক কণা সরাসরি খাদ্যের সাথে মানুষের দেহে প্রবেশ করে না। তবে এগুলো থেকে নিঃসৃত বিষাক্ত রাসায়নিক মাছের দেহ বা মাসলে জমা হয়। পরে এসব মাছ খাবার হিসেবে গ্রহণ করলে মানুষের দেহে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।
এ বিষয়ে সুমাইয়া জান্নাত এক জাতীয় দৈনিককে বলেন, স্নাতকোত্তরের থিসিসের কাজে ১৮ প্রজাতির দেশি মাছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাব নিয়ে অনুসন্ধান করি। এসব মাছের মধ্যে ১৫টি প্রজাতির পরিপাকতন্ত্রে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। মাছগুলো সাধারণত কৃত্রিম উপায়ে মিষ্টি পানির জলাধারে চাষ করা হয়। পরীক্ষাকৃত মাছগুলোর ৭৩.৩ শতাংশতে প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে। গবেষণাকৃত মাছগুলো সাভার ও আশুলিয়া বাজার থেকে সংগ্রহ করেছিলাম।
গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক ঐ জাতীয় দৈনিককে বলেন, প্লাস্টিকে যেসব রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, সেটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তারপরেও আমাদের দেশে প্লাস্টিকের সঠিক ব্যবহার হয় না। যত্রতত্র মাটি ও পানিতে প্লাস্টিক পড়ে থাকতে দেখা যায়। যেহেতু পানিতে প্লাস্টিক ফেলা হয়, সেহেতু মাছ এগুলো খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে কিনা সেটাই জানতে চেয়েছি। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় ১৮ প্রজাতির দেশি মাছের মধ্যে ১৫টি প্রজাতির মাছে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণার (মাইক্রোপ্লাস্টিক) সন্ধান পেয়েছি। এ মাইক্রোপ্লাস্টিক খালি চোখে দেখা যায় না।
সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদা পারভিন বলেন, ১৮ প্রজাতির মাছের মধ্যে ১৫ প্রজাতির মাছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের সন্ধান মেলে। বাকি তিন প্রজাতি ফলি, শিং ও গুলশা মাছে প্লাস্টিকের কণা পাওয়া যায়নি। যেসব মাছ পানির সবচেয়ে নীচের স্তরে বাস করে তাদের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি বেশি। বাংলাদেশের জলাধারগুলোতে প্লাস্টিক বর্জ্যসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ফেলা হয়। সেখান থেকেই মাছের মতো জলজ প্রাণী দূষিত খাদ্য গ্রহণ করে। এই মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৩২৩
আপনার মতামত জানানঃ