যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ডে টিকার দুই ডোজ নিয়েও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে শত শত মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। করোনা টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণের পরও এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫ শতাধিক রোগী। ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক প্রধান নির্বাহী সংস্থা পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড (পিএইচই) শনিবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। খবর আলজাজিরা।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৯ জুলাই থেকে ২ আগস্ট— ১৪ দিনে ইংল্যান্ডে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৪৬৭ জন মানুষ। তাদের মধ্যে ৫১২ জন, শতকরা হিসেবে যা ৩৪ দশমিক ৯ শতাংশ, করোনা টিকার দুই ডোজ আগেই সম্পূর্ণ করেছিলেন বলে জানা গেছে।
আক্রান্তদের সবাই করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক পরিবর্তিত ধরন ডেল্টায় আক্রান্ত বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে পিএইচই। পাশাপাশি, ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করা ব্যক্তিরা টিকা না নেওয়াদের মতো সমানভাবে করোনা ছড়াতে পারেন বলে জনগণকে সতর্কও করেছে সংস্থাটি।
এ প্রসঙ্গে বলা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রাথমিক গবেষণায় জানা গেছে, করোনা টিকার একটি ডোজও নেননি, এমন ব্যক্তিরা ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত হলে তাদের দেহে যে পরিমাণ ভাইরাসের উপস্থিতি থাকে, টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করা কোনো ব্যক্তি এই ধরনে আক্রান্ত হলে তার দেহেও একই পরিমাণ ভাইরাস থাকে।’
‘এছাড়া, টিকা নেননি এমন ব্যক্তিরা ডেল্টায় আক্রান্ত হলে যে মাত্রায় করোনা ছড়িয়ে দিতে পারেন, টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করা ব্যক্তিরাও একই মাত্রায় এই রোগ ছড়াতে সক্ষম।’
তবে বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে এ বিষয়ক গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায় পার করছে এবং সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আরও নতুন তথ্য জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না এবং ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশটির ৭৫ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিনের দুই ডোজ পেয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির প্রধান জেনি হ্যারিস বলেন, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা আমাদের এটা বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, যত দ্রুত সম্ভব আরও বেশি মানুষের ভ্যাকসিনের দুই ডোজ গ্রহণ করা কতটা জরুরি।
এক বিবৃতিতে হ্যারিস বলেন, কোভিড সংক্রমণের কারণে মারাত্মক রোগের ঝুঁকি তৈরি হয়। এগুলো থেকে আমাদের নিজেদের এবং প্রিয়জনকে নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন হচ্ছে সর্বোত্তম পন্থা।
তিনি আরও বলেন, তবে আমাদের এটা মনে রাখা উচিত যে, ভ্যাকসিন সব ঝুঁকি দূর করতে পারবে না। ভ্যাকসিন নেয়ার পরেও কোভিড আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং ভ্যাকসিন নেয়া ব্যক্তি থেকে অন্যদের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
করোনার এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট হচ্ছে ডেল্টা। সর্বপ্রথম এটি ভারতে শনাক্ত হওয়ায় ভারতীয় ধরন হিসেবেও পরিচিত। গত সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার্স ফর ডিজেজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনসন আশঙ্কা প্রকাশ করে জানায়, ভ্যাকসিন নেয়া লোকজনও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু অন্য ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে এমনটা হয় না।
তবে ভ্যাকসিন জটিল রোগ থেকে সুরক্ষা দেয় এবং ডেল্টা সংক্রমণে মৃত্যুর ঝুঁকি কমায় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে যারা ভ্যাকসিনের দুই ডোজ নিয়েছেন তাদের দেহে সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।
পিএইচএ জানিয়েছে, প্রাথমিক কিছু রিপোর্টে দেখা গেছে, ডেল্টায় আক্রান্ত হয়েছেন এমন লোকজন যারা ইতোমধ্যেই ভ্যাকসিন নিয়েছেন তারা ভ্যাকসিন নেয়নি এমন লোকজনের মতোই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে পারে। যদিও এ বিষয়ে এখনও বিস্তারিত গবেষণা হয়নি।
শুধু যুক্তরাজ্যেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে সংক্রমণ দ্রুত গতিতে বাড়ছে। যুক্তরাজ্যে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণে ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ লাখের বেশি। দেশটিতে নতুন সংক্রমণের ৯৯ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট।
২০২১ সালে বিশ্বে করোনায় মোট মৃত্যু ছাড়াবে ৫০ লাখ
২০২১ সালের ডিসেম্বরে করোনায় দাফতরিকভাবে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ লাখ ৩০ হাজারে পৌঁছাবে; আর হাসপাতালে বা সরকারি তথ্য কেন্দ্রে নিবন্ধিত হয়নি— এমন মৃতদের হিসেবের মধ্যে ধরলে এই সংখ্যা বেড়ে হবে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্য তথ্য বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। খবর ব্লুমবার্গ
২০২০ সালের মার্চে করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের সংখ্যা বিষয়ক হালনাগাদ তথ্য প্রকাশকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের তথ্য অনুযায়ী, মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৪২ লাখ ৯০ হাজার ৭১২ জন মারা গেছেন।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মহামারিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি, কারণ বেশিরভাগ উন্ননশীল ও অনুন্নত দেশে করোনায় দৈনিক মৃত্যু বিষয়ক প্রকৃত সংখ্যা বা তথ্য হাসপাতাল কিংবা সরকারি সংস্থা পর্যন্ত আসতে পারে না।
করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক পরিবর্তিত ধরন ডেল্টার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত রোগী ও এ রোগে মৃতের সংখ্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের ১৩৫ টি দেশে ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মূল করোনাভাইরাসের তুলনায় এর পরিবর্তিত ধরন ডেল্টার সংক্রমণ ক্ষমতা প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮২৬
আপনার মতামত জানানঃ