আফগানিস্তান সরকারের গণমাধ্যম তথ্যকেন্দ্রের প্রধান দাওয়া খান মিনাপালকে গুলি করে হত্যা করেছে তালিবান। রাজধানী কাবুলের দারুল আমান এলাকার একটি মসজিদে আজ শুক্রবার দেশটির গণমাধ্যম প্রধান দাওয়া খান মেনাপালকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মীরওয়াইস স্তানিকজাই হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন দুর্ভাগ্যজনকভাবে আবার এক কাপুরুষোচিত সন্ত্রাস হামলায় এক দেশপ্রেমিক আফগান প্রাণ দিলেন।
এদিকে তালিবান এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। এ ব্যাপারে তালিবানের মুখপাত্র জাহিবুল্লাহ মুজাহিদ গণমাধ্যমের কাছে পাঠানো বার্তায় জানিয়েছেন, মেনাপালকে মুজাহিদিনরা বিশেষ অভিযানে হত্যা করেছে। কয়েকদিন আগেই তালিবানের ঘাঁটিতে বিমান হামলার জবাবে দেশটির প্রথমসারির প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছিল তালিবান।
সেই হুমকির পর স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মধ্যরাতে আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিসমিল্লাহ খান মোহাম্মদির বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ও বন্দুক হামলা চালায় সংগঠনটি। ওই ঘটনায় চার হামলাকারীসহ আটজন নিহত হয়। আহত হয় ২০ জন।
আফগানিস্তান থেকে ন্যাটোভুক্ত দেশের সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে মে মাসের শুরু থেকে হামলা শুরু করে তালিবান। দেশটির বিভিন্ন ফ্রন্টে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে এ মুহূর্তে তাদের লড়াই চলছে।
আফগানিস্তানের বেশ কয়েকটি জেলা এবং গুরুত্বপূর্ণ বর্ডার ক্রসিং এখন তালিবানের দখলে। গত সপ্তাহে দেশটির পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিয়ে তালিবান ও আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর তীব্র সংঘর্ষ হয়। দেশটির ৪১৯টি জেলার মধ্যে ২২৩টিই তালিবানের দখলে বলে জানা গেছে।
ইরানের পশ্চিম সীমান্তের কাছে হেরাত, লস্কর গাহ, এবং দক্ষিণ কান্দাহারে তুমুল লড়াই চলছে তালিবান এবং আফগান বাহিনীর মধ্যে। গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে তালিবানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে আফগানিস্তানের হাজারো কমান্ডো। সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সেখানকার বাসিন্দারা চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে বলে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
সংঘর্ষ বাড়তে থাকায় হেলমান্দ প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ আটকা পড়তে পারে, এমন শঙ্কা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিখ। তিনি বলেন, চলতি বছর সংঘাত শুরুর পর প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫০ লাখ মানুষ গৃহহীন অবস্থায় বলে উদ্বেগ জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘লস্কর গাহের বেসামরিক লোকদের নিয়ে আমরা গভীর উদ্বিগ্ন। যুদ্ধের কবলে পড়ে সেখানকার কয়েক লাখ বাসিন্দা আটকা পড়তে পারে।’
হেলমান্দ এবং কান্দাহারে তালিবান ও আফগান বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের মাত্রা তীব্রতর হয়েছে। এতে বেসামরিক হতাহত যেমন বাড়ছে ধ্বংস্তূপে পরিণত হচ্ছে বহু ঘর-বাড়ি। আহতদের চাপে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন জাতিসংঘের এই মুখপাত্র।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার ব্রিটিশ সরকার আফগানদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে। গত বুধবার যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে যেসব দোভাষী কাজ করেছেন, তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ওই দেশে পুনর্বাসন করা হবে। মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে কাজ করা আফগানদের ইতোমধ্যে নিজ দেশে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে আমেরিকার সরকার। এবার সেই পথেই হাঁটলো ব্রিটিশ সরকার।
যুক্তরাজ্যের বাহিনীর সঙ্গে কাজ করা আফগানদের জন্য কিছু করছে না ব্রিটিশ সরকার, এমন সমালোচনা শুরু হওয়ার পর এই পদক্ষেপ নিল দেশটি। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, আফগান দোভাষীদের বিষয়ে কিছুই করছে না ব্রিটিশ সরকার- এমন সমালোচনা উঠে এসেছে সাবেক সামরিক কর্মকর্তাদের থেকেই।
এ প্রসঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বলেছেন, ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে কাজ করেছেন এমন ৫০০ আফগান ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই ৫০০ আফগান কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে মোট সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার।
২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলা চালানো জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে তালিবানের সম্পর্কের জেরে আফগানিস্তানে সে সময় সামরিক অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো। মিত্র বাহিনীর সম্মিলিত অভিযানে ওই বছরই আফগানিস্তানের ক্ষমতা থেকে তালিবানকে উৎখাত করা হয়।
তালিবান উৎখাত হলেও আফগানিস্তানে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর অবস্থান করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোভুক্ত দেশের সেনারা। চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই আফগানিস্তান থেকে সব সেনা সরাতে নিজেদের সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এপ্রিলে বাইডেনের ওই ঘোষণার পর ন্যাটোর অন্য সদস্যরাষ্ট্রগুলোও আফগানিস্তান থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের কথা জানায়। এরপর থেকেই সক্রিয় হয়ে ওঠে তালিবান।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৮৪১
আপনার মতামত জানানঃ