বাংলাদেশে ‘পাওয়ার রেপিস্ট’ গত দুই থেকে পাঁচ বছর ধরে শুরু হয়েছে। করোনাকালে এই অপরাধটি বেড়েছে বলে মনে করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ধরনের ধর্ষকরা ভুক্তভোগীকে নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে আটক স্বামীকে জামিনে মুক্ত করতে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় আসা এক নারী দুই দফায় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে নগদ ৫৫ হাজার টাকা।
যা উল্লেখ আছে মামলার এজাহারে
এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে ওই নারী ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে ফতুল্লা থানার ইসদাইরস্থ আইডিয়াল স্কুল সংলগ্ন আলামিনের বাড়ির চতুর্থ তলার ভাড়াটিয়া জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার অমপুরের মোঃ লেবু মিয়ার ছেলে মো: ফিরোজ মিয়াকে (২৮)।
সূত্র মতে, ফিরোজ মিয়া কারাগার সংশ্লিষ্ট দালালি করেন বলে জানা গেছে। কারাগারের আটক স্বামীর কাছ থেকে ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তিনি ওই নারীকে ডেকে আনেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী নারীর স্বামী মাদক মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার আটক রয়েছেন। স্বামীকে জামিনে মুক্ত করিয়ে দেয়ার কথা বলে ফিরোজ মিয়া ওই নারীকে ১৫ জুলাই নারায়ণগঞ্জ আসতে বলেন। ওই দিনই ওই নারী টেকনাফ থেকে নারায়ণগঞ্জে আসেন।
পরে ফিরোজ মিয়া তাকে ইসদাইরস্থ ভাড়া বাসায় থাকার জন্য প্রস্তাব দিলে তিনি রাজি হন। স্বামীকে কারাগার থেকে মুক্ত করার কথা বলে ফিরোজ মিয়া ওই নারীর কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকা নেন। পরে ২০ জুলাই দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ফিরোজ মিয়া ঘুমন্ত অবস্থায় ওই গৃহবধূকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এসময় বাধা দিলে তাকে হত্যার হুমকি দেন।
পরে ২৬ জুলাই সকাল ১০টার দিকে স্বামীর সাথে দেখা করিয়ে দেয়ার কথা বলে ওই গৃহবধূকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে দ্বিতীয় দফায় ধর্ষণ করেন। পরে রিকশায় করে শহরের চাষাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পাঠিয়ে দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আবদুর রউফ জানান, অভিযুক্ত ধর্ষককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। নির্যাতিতাকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গত ৬ মাসে ধর্ষণের শিকার ৭৬৭ জন
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেও থেমে নেই ধর্ষণ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত ৪ এপ্রিল থেকে সারা দেশে মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ (লকডাউন) জারি করে সরকার। গত ১ জুলাই থেকে মানুষের চলাচলে ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ চলছে। শেষ এই তিন মাসে নারী নির্যাতনের যে পরিস্থিতি তাতে সামনের দিনগুলোতে এটি খুব একটা স্বস্তির হবে না বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
তাদের মতে, চলমান পরিস্থিতিতে মানুষের বড় একটা অংশের কর্মহীনতা, আয় কমে যাওয়া কিংবা আয় না থাকা, অনিশ্চিত জীবনযাত্রার হতাশা থেকে মানুষ সহিংস হয়ে উঠছে। একই সঙ্গে দীর্ঘ সময় ঘরে আবদ্ধ থাকায় নারী ও শিশুরা প্রতিনিয়ত নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছে।
মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে গত ৬ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৬৭ নারী। এর মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার ৬১১ জন এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ১৫৬ নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ২৪ জন নারীকে এবং ধর্ষণের শিকারের পর আত্মহত্যা করেছেন পাঁচ নারী।
এ সময়ে নারী ও শিশুর প্রতি যৌন হয়রানি যেমন বেড়েছে, তেমনি যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের হাতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পর আত্মহত্যা করেছেন সাত নারী। আর যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে চার পুরুষ ও দুজন নারী হত্যার শিকার হয়েছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪৪৫
আপনার মতামত জানানঃ