কায়রো শহরের এই ছবিগুলো কায়রোর বিংশ শতাব্দিতে রুপান্তর ও দ্রুত বৃদ্ধিকে তুলে ধরেছে। ফাতিমিদ রাজবংশ দ্বারা ৯৬৯ সালে কায়রোর ভিত্তি গড়ে উঠলেও এরও আগে এর আরও ইতিহাস রয়েছে। এই শহরের কেন্দ্রবিন্দু ওন বন্দরে অতি প্রাচীন এক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় প্রার্থনালয় ছিল।
রোমানরা ওন বন্দরে একটি দুর্গ তৈরি করেছিল, যেটাকে তারা ব্যাবিলন বলে অভিহিত করত। আর ৬৪২ খ্রিস্টাব্দে জেনারেল আমর ইবনে আল আস ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে মিশর দখল করে এর দক্ষিণে তিনি ফুস্তাত শহর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু ফাতিমিদরা যখন আধুনিক যুগের তিউনিসিয়া থেকে নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে যাত্রা করেছিল, তখন তারা ফুস্তাতকে খারিজ করে এবং পরিবর্তে একটি নতুন শহর গড়ার চেষ্টা শুরু করে।
ফাতিমিদ যুগের অনেকগুলি দুর্দান্ত বিল্ডিং আজও রয়ে গেছে। আল আজহার মসজিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় এখনও মিশরের ইসলামিক গবেষণার মূল কেন্দ্র, এবং বাব আন নসর, বাব আল ফতুহ এবং বাব জুভিলা তিনটি দুর্দান্ত গেইট। ফাতিমীয়রা বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি, তবে তাদের শহর তাদেরকে টিকিয়ে রাখে এবং পরবর্তী রাজবংশের অধীনে সুলতানদের দ্বারা শাসিত এক বিরাট সম্পদের রাজধানী হয়। এই শহরটিকেই বিশ্বের মা বলা হত।
১৪শতকের মাঝামাঝিতে কায়রোর পতন ঘটতে শুরু করে। ব্ল্যাক ডেথ নামে পরিচিত বাবোনিক প্লেগ দেশের জনসংখ্যা একদম কমিয়ে ফেলেছিল। এই প্লেগ ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়েছিল।
১৫১৭ সালে অটোম্যানরা কায়রো দখল করে এবং ১৭৯৮ সালে নেপোলিয়ন প্রথমের আক্রমণের আগ পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় ছিল। পরে ১৮০১ সালে অটোম্যান শাসন পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল, তবে ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মিশরের বৈদেশিক ঋণ এবং অটোম্যান সাম্রাজ্যের দুর্বলতা কায়রোতে আরও বেশি ইউরোপীয় প্রভাবকে ঢেকে এনেছিল।
ভাইসরয় ইসমাইল পাশা, যিনি ১৮৬৩ থেকে ১৮৭৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন, তিনি শহরটিতে অনেক ইউরোপীয় ধাঁচের কাঠামো তৈরি করেছিলেন। ১৮৮৯ সালে কায়রোর উত্তর-পূর্বে সুয়েজ খাল খোলার উপলক্ষে ইউরোপীয়দের জন্য এই শহরটি প্রদর্শন করতে ব্যবহার করেছিলেন।
যাইহোক, এই সময়ে সংঘটিত বেশিরভাগ উন্নয়ন বিদেশী ঋণ দ্বারা অর্থায়িত হয়েছিল। যার ফলে জাতীয় ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং কায়রোকে গ্রেট ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণের জন্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। ব্রিটিশরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে কার্যত মিশর শাসন করতে শুরু করে।
যুদ্ধের বছরগুলোতে কায়রোর জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জনসংখ্যা ২ মিলিয়নে পৌঁছে যায়। সেই সময় থেকে, শহরটি জনসংখ্যা এবং উন্নয়ন উভয় ক্ষেত্রেই বিকাশ অব্যাহত রেখেছে।
লেখা ও ছবি: https://rarehistoricalphotos.com/
এসডব্লিউ/কেএইচ/২০৩২
আপনার মতামত জানানঃ