সিরাজগঞ্জে ঘি বিক্রেতা এক নারীকে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসা করাতে ব্যর্থ হওয়ায় মারপিটের অভিযোগ উঠেছে পৌর যুবলীগ নেতা আবু মুসার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ওই নারীর নাম পপি ঘোষ (২৮)। গুরুতর আহত ওই নারী বর্তমানে জেলার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সূত্র মতে, রোববার (১০ জুলাই) রাতে শহরের বি.এ কলেজ রোডস্থ ভাড়া বাসায় যুবলীগ নেতা আবু মুসার নেতৃত্বে ওই নারীকে মারপিট করা হয়। অভিযুক্ত আবু মুসা সিরাজগঞ্জ পৌর যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ও আড্ডা ফাস্টফুডের পরিচালক।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী পপি ঘোষ পুত্র-কন্যা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ সিরাজগঞ্জ শহরের বি.এ রোডস্থ এলাকায় বসবাস করেন। ওই ভাড়াটিয়া বাসা থেকেই তিনি প্রায় ছয় বছর ধরে সিরাজগঞ্জ শহরের বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও ফাস্টফুডের দোকানে খুচরা ও পাইকারিতে ঘি বিক্রি করতেন। এরই মধ্যে শহরের এস. এস রোডস্থ আড্ডা ফাস্টফুডে দুই বছর ধরে ঘি সরবরাহ করতেন পপি। ব্যবসা করতে গিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আবু মুসার সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
ব্যবসার ফাঁকে ওই নারীর প্রতি কুনজর পড়ে মুসার। এক পর্যায়ে ওই নারীকে অনৈতিকভাবে টাকার বিনিময়ে অশ্লীল কাজ করার প্রস্তাব দেন আবু মুসা। এজন্য তাকে ভয়ভীতিও দেখান মুসা। তার অবৈধ প্রস্তাবে রাজি হলে পপিকে প্রত্যেক মাসে ৩০ হাজার টাকা দেয়ারও প্রস্তাব দেন মুসা। বিনিময়ে অন্য পুরুষদের সঙ্গে রাত্রিযাপন করতে বলেন। সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ভাড়া বাসায় গিয়ে ওই নারীকে ভয়ভীতি দেখানো হত। এমনকি ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আড্ডা ফাস্টফুডে ঘি বিক্রির পাওনা ১০ হাজার টাকাও পরিশোধ করেনি মুসা।
আরও জানা যায়, বারবার কুপ্রস্তাবে রাজি করাতে ব্যর্থ হওয়ায় গত রোববার (১০ জুলাই) রাতে আবু মুসা তার ভাই খলিল ও ভাইয়ের স্ত্রীকে নিয়ে শহরের বি.এ কলেজ রোডস্থ ওই বাসায় আবারও গিয়ে পপিকে একই প্রস্তাব দেয়। আবারও রাজি না হওয়ায় মুসা ও খলিলের নেতৃত্বে ওই নারীকে মারপিট করা হয়।
এ সময় ওই নারী ও তার পুত্র-কন্যার আত্মচিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে মুসা ও তার লোকজন দ্রুত পালিয়ে যায়। এরপর আহত অবস্থায় পপি ঘোষ তার সন্তানদের নিয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় হাজির হন। সেখানে আবু মুসা, তার ভাই খলিলের নাম উল্লেখ করে ৬/৮ জনের নামে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগটি আমলে নিয়ে পুলিশ পপিকে ভ্যানে করে তার বাড়ীতে পৌঁছে দেয়।
পরেরদিন সোমবার (১১ জুলাই) বুকের ব্যথা বেশি হওয়ায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালের গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পপি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাই নিরাপত্তার জন্য সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) গণমধ্যমে পপি ঘোষ বলেন, ‘আড্ডা ফাস্টফুডের আড়ালে বিভিন্ন স্থান থেকে পতিতা এনে দেহ ব্যবসা চালিয়ে আসছেন আবু মুসা। প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা হওয়ায় তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। তিনি (মুসা) অনেক নারীকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ কাজে বাধ্য করেছেন। মুসা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কাজগুলো করলেও তার আড্ডা ফাস্টফুডে কখনো অভিযান চালায়নি প্রশাসন। সবাইকে ম্যানেজ করেই এই ব্যবসা করছেন মুসা।’
সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শামীমুল ইসলাম বলেন, বুকে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন নিয়ে গত সোমবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হন পপি ঘোষ। তার বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়ায় তাকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ বিষয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সাহা বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযুক্ত সিরাজগঞ্জ পৌর যুবলীগের সদস্য আবু মুসা বলেন, ঘটনাটি ষড়যন্ত্র। আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতেই এ ধরনের মিথ্যা নাটক সাজানো হয়েছে। তবে এই সংবাদ প্রকাশ না করার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি।
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. একরামুল হক বলেন, যুবলীগ কখনোই কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেয় না। যদি যুবলীগের কোনো নেতাকর্মী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহাউদ্দিন ফারুকী জানান, পপি ঘোষ নামে এক নারীর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগটি আমলে নেওয়া হয়েছে। তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৭০০
আপনার মতামত জানানঃ