সৌদি আরবের কারাগারে বন্দি নারীদের যৌন নির্যাতনসহ বেত্রাঘাত ও ইলেক্ট্রিক শক দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কারারক্ষী, তদন্তকারী ও জিজ্ঞাসাকারীদের বিরুদ্ধে।
জিজ্ঞাসাবাদের নামে নারী বন্দিদের ওপর অমানসিক নির্যাতন, যেমন— বৈদ্যুতিক শক দেয়া, মারধর, বেত্রাঘাত ও যৌন নির্যাতনের মতো জঘন্য নির্যাতন করা হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) সম্প্রতি এক অনুসন্ধানে এমন লোমহর্ষক তথ্য উঠে এসেছে।
এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, কারাগারে নারী বন্দিদের ইলেক্ট্রিক শক, মারধর, বেত্রাঘাত ও যৌন নির্যাতনের মতো জঘন্য হুমকি দেয়া হয়। নারী ভুক্তভোগী ও একজন গার্ডের সাথে কথা বলে এমন তথ্য প্রকাশ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, নারী অধিকারকর্মী লুজাইন আল হাথলুলের মতো নারী রাজনৈতিক বন্দিদেরও এ ধরনের নির্যাতন সইতে হয়েছে। লুজাইনকে ইলেক্ট্রিক শক ও নজিরবিহীন যৌন নির্যাতন করা হয়েছে। একই সঙ্গে কারাগারে তাকে নানাভাবে শ্লীলতাহানি এবং উপহাস করা হয়েছে।
লুজাইন আল হাথলাউল সৌদি আরবের অতি পরিচিত নারী সমাজসেবী ও অধিকারকর্মী। আন্দোলন চালিয়ে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন লুজাইন। জেলে নির্মম মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি।
৩১ বছরের এই যুবতীকে ২০১৮ সালের মে মাসে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কেবল তিনি একা নন, তার সঙ্গে আরও কয়েকজন মহিলা সমাজকর্মীকেও কারাগারে যেতে হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে লুজাইনের গ্রেপ্তারির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল বহু সংগঠন।
তার অভিযোগ জেলে তার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছিলেন কারাকর্তা এবং অন্যান্য রক্ষীরা। তাকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়, কারাকর্তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করা হয়, জেলের রক্ষীদের সঙ্গে বসিয়ে পর্নোগ্রাফিও দেখানো হয়। এছাড়া সিলিং থেকে ঝুলিয়ে মারধর, বিদ্যুতের শকের মতো নির্যাতন করা হয়।
সাক্ষাৎকার নেয়া গার্ড বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক নারী অধিকারকর্মীকে এমনভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল, ধারণা করা হচ্ছে তিনি বোধহয় মারাই গেছেন। নির্যাতনের পর ওই নারী অধিকারকর্মী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এতে কারাগারের সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কারণ কারাগারের মধ্যে কোন বন্দিকে মেরে ফেলার বিধান নেই।
সৌদি আরবের কারাগারে এমন আচরণের সমালোচনা করেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মিডল ইস্ট অ্যান্ড নর্থ আমেরিকা অঞ্চলের উপপরিচালক মাইকেল পেজ।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নারী অধিকারকর্মী ও হাই-প্রোফাইল বন্দিদের ওপর নির্যাতন সৌদি আরবের আইনের শাসনের অবজ্ঞার শামিল। এসব অভিযোগের সঠিক তদন্তের দাবি জানান তিনি।
২০১৭ সালের পর থেকে সৌদি আরবে দমনপীড়ন বাড়িয়েছেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। এর বেশি শিকার অধিকারকর্মীরা। প্রিন্সের এমন আচরণে বহুসময় সমালোচনা কুড়িয়েছে সৌদি আরব।
এছাড়া সম্প্রতি সৌদি আরবের এক যুবরাজের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছে সাত নারী। অভিযোগকারী সাত নারীর বেশিরভাগই ফিলিপিন্সের। যারা ফ্রান্সে যুবরাজের কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন।
এদিকে অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে ফ্রান্সের আদালত। ফরাসি প্রসিকিউটরা বলছেন, বিষয়টি তারা গভীরভাবে তদন্ত করছেন।
মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদন বলছে, সাত নারীর অভিযোগ তাদের ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে দূরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে রাখা হতো। যুবরাজের মালিকানাধীন ওই অ্যাপার্টমেন্টে তাদের সাথে আধুনিককালের দাসদের মতো আচরণ করা হতো।
ফরাসি গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, ২০০৮, ২০১৩ ও ২০১৫ সালে ওই নারীদের সাথে নিম্নমানের আচরণ করা হয়েছে। নারীদের অভিযোগের পর সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে মানবপাচার সংশ্লিষ্ট বিষয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে।
এর আগে নিজের অ্যাপার্টমেন্টের এক কর্মীকে মারধর করার অভিযোগে সৌদি আরবের প্রিন্সেস হাসসা বিনতে সালমানের ১০ মাসের স্থগিত জেল দেওয়া হয়েছিল এবং জরিমানা করা হয়েছিল ১১ হাজার মার্কিন ডলার।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৫২
আপনার মতামত জানানঃ