২২২ কোটি টাকা পানিতে দিল ঢাকা ওয়াসা। এই পরিমাণ টাকা খরচ করার পর কাজ অসমাপ্ত রেখেই দুটি খাল উন্নয়ন প্রকল্প সমাপ্তি ঘোষণা করেছে তারা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন আলাদাভাবে নতুন প্রকল্প নিচ্ছে একই কাজের জন্য। এতে ওয়াসা বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয় করলেও জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো কাজে আসছে না। কমছে না মানুষের দুর্ভোগও। জানা যায়, একটি প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৩২ ভাগ। খরচ হয়েছে ১৭৬ কোটি টাকা। অন্য প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে ৭ শতাংশ। ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা।
প্রকল্পের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন প্রকৌশলীদের
সূত্র মতে, গত ৩১ ডিসেম্বর ২৬টি খালের দায়িত্ব বুঝে পায় দুই সিটি করপোরেশন। এরপরই ঢাকা ওয়াসার খাল উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ প্রশ্ন তোলেন ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রকৌশলীরা।
এমন প্রশ্নে বিব্রতবোধ করে ঢাকা ওয়াসা। সৃষ্টি হয় বড় জটিলতা। এ ঘটনায় তিন সংস্থার জটিলতার নিরসনে স্থানীয় সরকার বিভাগ দফায় দফায় সভা করে। মন্ত্রণালয়ের সভায় তিন সংস্থার সম্মতিতে প্রকল্প সমাপ্ত করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালে ‘ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও খাল উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে ঢাকা ওয়াসা। ১৬টি খালের সংস্কার, পুনঃখনন, পাড় বাঁধাই ও উন্নয়নের লক্ষ্যে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল বৃহত্তর মিরপুর ও উত্তরা এলাকার ৩০ লাখ মানুষকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দেয়া। সে লক্ষ্যে ওই প্রকল্পের ১৭৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়। এ প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৩২ ভাগ। এ প্রকল্পের মোট আকার ছিল ৫৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
এর আওতাধীন খালগুলোর মধ্যে রয়েছে আব্দুল্লাপুর, কল্যাণপুর ক, খ, গ, ঘ ও চ খাল, রামচন্দ্রপুর, সুতিভোলা, রূপনগর, সাংবাদিক কলোনি খাল, ইব্রাহিমপুর খাল, বাড্ডা খাল, বেগুনবাড়ি খাল, নাখালপাড়া খাল, কুতুবখাল ও ধোলাই খাল।
আর হাজারীবাগ, বাইশটেকি, কুর্মিটোলা, মাণ্ডা ও বেগুনবাড়ি খালের ভূমি অধিগ্রহণ ও খনন বিষয়ে আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এটি ঢাকা ওয়াসার পাঁচ খাল প্রকল্প নামে পরিচিত। এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬০৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে শুরু এ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর অগ্রগতি হয়েছে ৭ শতাংশ। প্রকল্প সমাপ্ত করার আগ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ২৬টি খালের দায়িত্ব বুঝে পায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। সে সময় এমন সিদ্ধান্ত ছিল যে, দুই সিটি ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে খালসংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি, জনবল ও প্রকল্প বুঝে নেবে। সে অনুযায়ী সব বুঝে নেয় দুই সিটি।
কিন্তু জটিলতা সৃষ্টি হয় চলমান দুটি খাল প্রকল্প বুঝে নেয়ার সময়। এগুলোর কাজের মান নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে প্রশ্ন তোলেন সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা। এতেই বেঁকে বসে ঢাকা ওয়াসার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তখন ওয়াসার পক্ষ থেকে দুটি খাল প্রকল্প বিদ্যমান অবস্থায় শেষ করার প্রস্তাব করে। এ জটিলতা নিরসন করতে না পারায় প্রকল্প সমাপ্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
ডিএনসিসির এক প্রকৌশলী জানান, ঢাকা ওয়াসার খাল প্রকল্পের কাজের মান আমরা নিখুঁতভাবে পর্যালোচনা করে দেখেছি। এ পর্যন্ত যতটুকু কাজ হয়েছে, ওই অবস্থায় প্রকল্পের দায়িত্ব বুঝে নিলে পরে জটিলতায় পড়ত ডিএনসিসি। এজন্য আমরা মন্ত্রণালয়ের সভায় এ বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছি। পরে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটা প্রাথমিকভাবে খারাপ মনে হলেও সিটি করপোরেশনের জন্য ভালো হয়েছে। কেননা ঢাকা ওয়াসার ব্যর্থতার দায় আমাদের নিতে হচ্ছে না। এখন আমরা নিজেদের মতো করে প্রকল্প প্রণয়ন কাজ শুরু করেছি।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ঢাকা ওয়াসায় চলমান দুটি খাল উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। সে দুটি প্রকল্প হস্তান্তর নিয়ে দুই সিটির সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি হয়। পরে সর্বসম্মতিক্রমে ওই দুটি খাল প্রকল্প বিদ্যমান অবস্থায় সমাপ্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, ঢাকা ওয়াসার খাল প্রকল্প নিয়ে কিছু জটিলতা দেখা দেওয়ায় মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমরা মনে করছি, এটা ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা এখন নতুন করে খাল উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করছি।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. খায়রুল বাকের বলেন, খাল প্রকল্প দুটি ওয়াসার। ওয়াসা একটি কর্তৃপক্ষ এখন দুটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর একটি জটিলতা। এছাড়া তারা যেসব কাজ করেছে, সেসব কাজের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়েও কথা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুই সিটি এখন আলাদাভাবে প্রকল্প গ্রহণ করছে।
ঢাকা ওয়াসার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আখতারুজ্জামান বলেন, খাল প্রকল্প দুটি দুই সিটি করপোরেশন, মন্ত্রণালয় ও ঢাকা ওয়াসার যৌথ সভায় সার্বিক বিবেচনায় সমাপ্ত করা হয়েছে। আমার মনে হয়, মাঝপথে সমাপ্তি ঘটলেও এটা প্রকল্পের সার্বিক বিবেচনায় ভালো হয়েছে। দুই সিটি নতুনভাবে তাদের মতো করে আরও বড় পরিসরে প্রকল্প নিতে পারবে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫১৫
আপনার মতামত জানানঃ