মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবার এই দু’দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে সরাসরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের আগ মুহূর্তে বাইডেনের সঙ্গে ঘানির বৈঠক সবার নজরে ছিল। ওভাল অফিসে শুক্রবার আফগান প্রেসিডেন্ট ঘানি এবং দেশটির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা হয় বাইডেনের। এসময় আফগাস্তিান থেকে শতভাগ সেনা তুলে নেওয়ার প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, কাবুল এবং ওয়াশিংটনের সম্পর্ক এখানেই শেষ হচ্ছে না’।
তিনি আরও জানান, ‘আপনারা জানেন, আফগানিস্তান থেকে আমাদের সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। তাই বলে আমাদের পক্ষ থেকে আফগানিস্তানের জন্য সহযোগিতা থেমে থাকছে না’।
বর্তমানে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে ৪ হাজারের মতো মার্কিন সেনা অবস্থান করছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সবাইকে পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নেওয়া হবে।
বৈঠকে শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেন, এটা খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত। তবে ‘ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত আফগানদের নিজেদের নিতে হবে’ তারা কী চায়।
প্রেসিডেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাইরে থেকে আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীকে সহায়তা প্রদান করে যাবে এবং পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহায়তাও অব্যাহত রাখবে।
দেশটিতে দীর্ঘ ২০ বছরের যুদ্ধে আমেরিকার সেনা এবং তাদের পরিবার যেই বিসর্জন দিয়েছে সেজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আফগান প্রেসিডেন্ট। তবে দেশটি এখন গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বর্তমানে আফগান সরকার সশস্ত্র গোষ্ঠী তালিবানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধের মুখোমুখি। এ পরিস্থিতিকে গনি ১৮৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের সময়কালের সঙ্গে তুলনা করেন। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ও বিদ্রোহী দক্ষিণের রাজ্যগুলোর মধ্যে যুদ্ধের শুরু হয়।
আশরাফ গনি বলেন, এটি মূল্যবোধের বিষয়, একটি ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা বা অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থার মূল্যবোধ। আমরা ঐক্য, সংহতি ও ত্যাগের বোধের প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং আমরা কিছুতেই ছাড় দেব না।
আরও বলেন, শুক্রবার সরকারি বাহিনী দক্ষিণ ও উত্তরে ছয়টি জেলা তালিবানদের কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করেছে।
দিনের শুরুতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে পেন্টাগনে বৈঠক করেন গনি। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিশ্লেষণ বলছে, সেনা প্রত্যাহারের ছয় মাসের মধ্যেই তার সরকারের পতন হতে পারে— ওই সময় সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গনি হেসে বলেন, এ জাতীয় অনেক ভবিষ্যদ্বাণী ছিল এবং সেগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
আল-জাজিরা জানায়, আফগানিস্তানে অবস্থান করা প্রায় চার হাজার সৈন্যবহর আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা নির্ধারিত সময়ের আগেই আগামী ৪ জুলাইয়ের মধ্যে সেখান থেকে মার্কিন এবং জোট কমান্ডারদের তারা প্রত্যাহার করবে।
চলতি বছরের ১ মে থেকে আফগানিস্তান হতে আনুষ্ঠানিকভাবে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির দাবি এখন পর্যন্ত নিজেদের ৫০ শতাংশ সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাকি সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তবে আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনা প্রত্যাহার সিদ্ধান্তে কিছুটা পরিবর্তন আনছে যুক্তরাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ ও কূটনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে দেশটি। নাম প্রকাশ না করা মার্কিন এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এমন তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। যেখানে বলা হয় কমপক্ষে ৬৫০ জন মার্কিন সেনা আরও কিছুদিন আফগানিস্তানে অবস্থান করবে।
এদিকে তালিবান মুখপাত্র সুহাইল শাহিন আল-জাজিরাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে জানান, ১১ সেপ্টেম্বরের পর যদি আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্য থাকে সেক্ষেত্রে তাদেরও ‘প্রতিক্রিয়া জানোনোর অধিকার’ রয়েছে।
তালিবানসহ নানা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি ও জাতীয় ঐক্যমত্যের জন্য গঠিত শীর্ষ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ। তবে তাদের এই সফরকে নিস্ফল বলে উল্লেখ করেছে তালিবান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫০৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ